বিজেপিকে ঠেকাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ার প্রস্তাবে সে দিন সাড়া দেননি নীতীশ কুমার। কিন্তু রাজনীতির প্যাঁচে পড়ে আজ নরেন্দ্র মোদীকে ঠেকাতে সেই মমতার পথেই হাঁটতে হচ্ছে তাঁকে! এবং সে জন্য মমতার রাজ্যের উদাহরণ তুলে ধরতেও কসুর করছে না তাঁর দল।
লোকসভা নির্বাচনের আগে অ-কংগ্রেসি ও অ-বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে নিয়ে একটি অক্ষ গড়তে সক্রিয় হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সে সময় বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মমতার সঙ্গে কলকাতায় গিয়ে দেখাও করেন জেডিইউ মহাসচিব কে সি ত্যাগী। কিন্তু তার পরেও বিষয়টি নিয়ে উৎসাহ না দেখিয়ে বামেদের সঙ্গে নিয়ে বিজেপি বিরোধী জোট গড়তে সক্রিয় হয়েছিলেন নীতীশ। ভোটের পর এখন পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। বিহারে কার্যত ধুয়েমুছে গিয়েছে নীতীশের দল। চাপের মুখে নিজে মুখ্যমন্ত্রিত্বও ছেড়েছেন। এখন জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে ফের সেই ফেডারেল ফ্রন্টের ভাবনাকেই আঁকড়ে ধরতে তৎপর হল নীতীশের জেডিইউ। ইতিমধ্যেই নিজের রাজ্যে বিজেপিকে রুখতে দীর্ঘ দিনের প্রতিন্দ্বন্দ্বী লালুপ্রসাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন নীতীশ। যা নিয়ে তাঁর দলের তরফে বলা হচ্ছে, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই রাজ্যগুলির দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করা শুরু করেছে। উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ নানা রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানোই তার প্রমাণ। এই অবস্থায় অ-বিজেপি দলগুলির এক জোট হওয়ার সময় এসেছে। জেডিইউ নেতৃত্বের আশঙ্কা, জোট বেঁধে চাপ তৈরি না করা গেলে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচিত সরকার পর্যন্ত ফেলে দিতে পারে মোদী-সরকার। ত্যাগীর আশঙ্কা, ওই তালিকায় বিহারও রয়েছে।
মোদী কিন্ত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজ্যগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার বার্তা দিচ্ছেন। যদিও নীতীশের দলের বক্তব্য, মোদী মুখে এ কথা বললেও বাস্তবে রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনায় অযথা হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে কেন্দ্র। ত্যাগীর কথায়, “উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে নানা কারণে কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। অথচ, বিজেপি তথা কেন্দ্র ভুলে গিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়।” জেডিইউয়ের ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি শিবিরের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্রীয় নেতারা রাজ্য সফরে যাচ্ছেন। আর উত্তরপ্রদেশে যে ভাবে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, তার পর চুপ থাকলে জনগণ প্রশ্ন তুলবে। তাই কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছে।
একই সুরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও। তাঁর অভিযোগ, ক্ষমতায় আসতেই রাজ্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে মোদী সরকার। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা চালে জানিয়েছেন, বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হলেই তিনি তৃণমূলের দল পাঠাবেন সেখানে। তাই ঠিক হয়েছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় যাবে তৃণমূলের সংসদীয় দল। মমতা ও অখিলেশ মুখ খোলার পরে জেডিইউ-এর আশা, যে ভাবে রাজ্যগুলিতে হস্তক্ষেপ শুরু হয়েছে, তাতে খুব শীঘ্রই বিরোধিতার পথে হাঁটবেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও।
আঞ্চলিক দলগুলির এই ক্ষোভ ও অসন্তোষকে হাতিয়ার করেই ওই বিজেপি বিরোধী অক্ষ গড়তে সক্রিয় হয়েছেন জেডিইউ নেতৃত্ব। এবং বিষয়টিকে সার্বিক চেহারা দিতে লালুকেও পাশে চাইছেন নীতীশ। বিহারে রাজ্যসভা নির্বাচনে জেডিইউ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে লালুর সমর্থন চেয়ে ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন তিনি। লালু অবশ্য এখনও এ ব্যাপারে তাঁর মতামত জানাননি। তবে জেডিইউ নেতৃত্বের আশা, দু’এক দিনের মধ্যেই লালুর মতামত জানা যাবে। তবে এত সব করেও নীতীশ নিজে খুব স্বস্তিতে নেই। দলের অন্দরেই নানা বিক্ষোভ তাঁর অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। জেডিইউয়ের আর এক নেতা শরদ যাদব রাজ্যসভার প্রার্থী বাছাই প্রশ্নে নীতীশের বিরোধিতায় সক্রিয়। আজই জেডিইউ পরিষদীয় দলের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন এক ঝাঁক বিধায়ক। যা নিয়ে নানা জল্পনা ছড়াচ্ছে। তবে নীতীশ শিবিরের দাবি, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে।