Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মুম্বইয়ে মা আসছেন, সাজ সাজ রব

উৎসবের জৌলুস চলে এসেছে। মুম্বই তথা সমগ্র মহারাষ্ট্র এখন তুমুল ব্যস্ত দশ দিন ব্যাপী গণপতি বাপ্পা জন্মজয়ন্তী নিয়ে। মুম্বইয়ে এখন খুশির আমেজ, আনন্দের জোয়ার। বচ্ছরভর অপেক্ষার শেষ মরাঠাবাসীর প্রাণম্য প্রিয়, বড় আদরের দেবতা গণপতি পুজো এখন মহা ধুমধামে উৎসবে আনন্দে।

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৪ ২৩:২৮
Share: Save:

উৎসবের জৌলুস চলে এসেছে। মুম্বই তথা সমগ্র মহারাষ্ট্র এখন তুমুল ব্যস্ত দশ দিন ব্যাপী গণপতি বাপ্পা জন্মজয়ন্তী নিয়ে। মুম্বইয়ে এখন খুশির আমেজ, আনন্দের জোয়ার। বচ্ছরভর অপেক্ষার শেষ মরাঠাবাসীর প্রাণম্য প্রিয়, বড় আদরের দেবতা গণপতি পুজো এখন মহা ধুমধামে উৎসবে আনন্দে। আমরা, যারা মুম্বইয়ে পরবাস যাপনে ক্রমশ অভ্যস্ত— তারাও নিজেদের সামিল করে নিই, মুম্বইয়ের এই আনন্দযজ্ঞে।

এ বারের প্রতিবেদন লিখতে শুরু করেই পরিকল্পনা করে রাখি, ৫ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষক দিবস’ নিয়ে কিছু লেখার মক্শেো করার। দেশের অগণিত শিক্ষকের আদর্শগত মহান কর্মকাণ্ডের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁদের পেশাগত এই আবেদনকে স্মরণে বরণে পালিত করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘শিক্ষক দিবস’ পালন করার রীতি রয়েছে। এই নির্দিষ্ট দিনটি বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পালিত হয়ে থাকে। যেমন বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ৫ অক্টোবর দিনটি ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। unicef থেকেও ৫ অক্টোবর দিনটিকে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসের’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের সর্বমোট ১৯টি দেশে অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ ‘টিচার্স ডে’ পালিত হয়। দেশগুলি হল— কানাডা, জার্মানি, বুলগেরিয়ে, আর্জেবাইজান, ইস্তোনিয়া, লিথোনিয়া, ম্যাকেডোনিয়া, মলদ্বীপ, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কুয়েত, কাতার, রাশিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, ইংল্যান্ড, মরিশাস, মলদোভা। আবার বিশ্বের অন্য ১১টি দেশে ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনটিতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস চালু। দেশগুলি হল মরক্কো, আলজেরিয়া, টিউনেশিয়া, লিবিয়া, ইজিপ্ট, জর্ডন, সৌদিআরব, ইয়েমেন, বাহরিন, ইউ এ ই, ওমান। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কো দ্বারা ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ দিনটি সূচিত হয়। এটি যারা দেশে-বিদেশে ‘শিক্ষক’ পেশাজীবীদের জন্য সেরা সম্মান। পরবর্তী প্রজন্মও যাতে কার্যকরী ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে এই দিনটি পালন করে সেটাও উদ্দেশ্য। এডুকেশনাল ইন্টারন্যাশনাল (EI) মনে করে, জাতীয় স্তরে সমগ্র বিশ্বেই একটি বিশেষ দিনকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি, যেটি সমাজ-সংস্কার-শিক্ষায় শিক্ষকদের উপযুক্ত মান্যতা দান করার যোগ্য দিন।

আমাদের দেশে ভারতের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন-এর জন্মদিন ৫ সেপ্টেম্বর বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। ‘ভারতগ্রন্থ’ উপাধি বিভূষিত প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, মহান দার্শনিক, আদর্শবান বিচারক ছিলেন ড. রাধাকৃষ্ণন। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। তিনি ছিলেন বাগ্মী, অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ এবং অদ্বৈত বেদান্ত বাদ রচয়িতা দার্শনিক।

শোনা যায়, তাঁর কিছু প্রিয় ছাত্র অধ্যাপক বন্ধুবান্ধব, তাঁর জন্মদিন পালন করতে আগ্রহান্বিত হলে— রাধাকৃষ্ণন তাদের বলে ছিলেন “আমার জন্মদিন পৃথক ভাবে পালন না করলে আমি গর্বিত হব, দিনটি যদি দেশের সমস্ত শিক্ষকের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।”

পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, “He has served his nation in many capacities. but above all he is a great teacher from whom all of us have learnt much and will continue to learn.”

সমাজে শিক্ষকদের সম্মান ও অবদানের জন্য ১৯৬২ সাল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের পঞ্চম দিনটি নির্দিষ্ট করে, স্কুল-কলেজে নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয়। প্রধানত ছাত্রছাত্রীদের তাদের প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাকে উপহার দেয়। শিক্ষকরাও তাদের আশীর্বাদ স্বরূপ মিষ্টিমুখ করান। বস্তুত ছাত্রছাত্রীর জীবনে যোগ্য শিক্ষকের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ শিক্ষকই পারেন তার ছাত্রকে নিশ্চিত করতে। একজন যথার্থ শিক্ষকই পারেন তাঁর ছাত্রের মধ্যে যথাযথ মনন বুদ্ধি চিন্তাকে বাস্তব রূপে প্রতিফলন করতে। এবং আগামী জীবনে উপযুক্ত জীবিকা ও সৎ মানুষ গড়ার কারিগর তাঁরাই।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পশ্চিমবঙ্গ স্টেট কাউন্সিল অফ হায়ার এডুকেশন-এর ভাইস চেয়ারম্যান পবিত্র সরকার মহাশয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। নিজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী হওয়ার সুবাদে, স্যারকে ‘শিক্ষক দিবস’ নিয়ে কিছু বলার অনুরোধ করায় বললেন, “কী বলব। আমি যেন শিক্ষক দিবসের যোগ্য হতে পারি।”

প্রতিবেদনটি এই পর্যন্ত লেখার পরই একান্ত নিজস্ব বিচারে মনে হল— জীবনের প্রধান ও অন্যতম শিক্ষক হলেন আমাদের বাবা ও মা। প্রিয় শিক্ষকও প্রথমে তাঁরাই। তাঁদের স্নেহে-শাসনে-প্রশ্রয়ে-শিক্ষায়-মরমি সমালোচনায়-সহমর্মিতায়-চরিত্র গঠনের দৃঢ়তায় আমরা ক্রমশ ঋ

দ্ধ হতে থাকি। আমাদের প্রতিটি আচরণের বহির্প্রকাশ কী হবে, উচিত-অনুচিত বোধ, পছন্দ-অপছন্দ, আমাদের দায়বদ্ধতা ও বিশ্বাস, অন্যকে মান্যতা দেওয়া, নিজেদের পারিবারিক রীতি ও রক্ষণশীলতাকে সম্মান দেওয়া, আদর্শ, চরিত্র গঠন ইত্যাদি যাবতীয় খুঁটিনাটি আমরা শিখি আমাদের বাবা-মা অভিভাবকদের কাছে। পিতা-মাতা আমাদের প্রধান গুরু। এঁরাই “গুরু সাক্ষাৎ পরম ব্রহ্ম/তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ”।

ব্যক্তিগত কথন হলেও লিখে রাখি, বাবা মা ছাড়াও স্কুলের ম্যাডাম, গৃহশিক্ষকরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, এমনকী গানের দিদিমণি, ছোটবেলার আঁকার স্যার— এ জীবনে সবার কাছেই কত যে ঋণ থেকে গেল। আরও বহু পরে, পরবর্তী কালে, নিজে যখন উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের দর্শন শাস্ত্র পড়িয়েছিলাম কিছু কাল ও পাড়ার বাচ্চাদের আঁকার শেখানোর টিউশনি করেছি— এই বিশেষ দিনটিতে ‘শিক্ষক দিবসের’ উপহার পেয়েছি। কেউ বা একক ভাবে, কিছু নিজেদের পকেট মানি থেকে সমবায় ভাবে উপহার কিনে আমায় দিয়েছে। তাদের সে উপহারের মধ্যে ভালবাসা ছিল, নির্ভরতা ছিল, ছেলেমানুষি ছিল। তা সে এক জোড়া ডিজাইনার বালা, কাচের চুড়ি পেন, ক্যাডবেরি ডেয়ারি মিল্ক, রঙিন টিপের পাতা, গোপাল, ছোট্ট শো পিস, নিজের হাতে বানানো ওয়াল হ্যাঙ্গিং এমনকী কখনও নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে পারফিউম, রবীন্দ্রগানের সিডি কত কিছু। এত দিন পর সে কথা লিখতে যেয়ে আবেগ এসে যায় সে স্মৃতিকথনে।

প্রসঙ্গত, কথা হচ্ছিল, এখানকার তরুণ গল্পকার ও উপন্যাসিক, হাওড়া শিবপুর অমিয় হাইস্কুলের ইংরাজি শিক্ষক সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিক সৌরভের ‘ধুলোখেলা’ উপন্যাসটির সঙ্গে পাঠকমাত্রই পরিচিত। সৌরভ বললেন, “এখন শিক্ষক পরিচয় দিতে দ্বিধা হয়। এই বুঝি কেউ বলে বসে, ‘ব্যাটা বছরে ছ’মাস ছুটি খায়। প্রচুর বেতন, টিউশনে ডবল আয়, ছাত্রদের মেরে মাথা ফাটায় আর ক্লাস ফেলে পার্টির কাজে ছোটে।’ সমাজে আজ এমনই ইমেজ শিক্ষকদের। এখন অতিরিক্ত সরকারি খবরদারির ফলে টিচাররা তাদের পেশাকে আর পাঁচটা চাকরির মতোই প্রফেশনাল দৃষ্টিতে দেখেন।”

শিক্ষক দিবস নিয়ে এই যে প্রতিবেদন লেখার মকশো করছি— মনে পড়ে যাচ্ছে কিশোরীবেলার স্কুল-কথা। আমাদের এলিট স্কুলে ছিল নিয়মানুবর্তিতা কঠোর অনুশাসন। সবাই প্রায় তটস্থ থাকতাম। পরীক্ষার খাতায় হাতের লেখা ভাল করা থেকে বাংলা ব্যাকরণ, ইংরাজি গ্রামারের ভিত গড়ে দেওয়া, খুব ভাল পড়ানো, ইতিহাস, ভূগোল বা জ্যামিতি প্রায় ছবির মতো বুঝিয়ে দেওয়া, অঙ্কের জটিল তত্ত্বগুলিকে ক্লাসের ব্ল্যাক বোর্ডে লিখে ভেঙে ভেঙে বুঝিয়ে দেওয়া, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানকে ভালবাসতে শেখানো, সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ও আমাদের ভেতর সাহিত্যের বীজ বুনে দেওয়া— আমাদের স্কুলের ম্যামরা ছাত্রীদের জন্য নিবেদিত প্রাণ। আমাদের বিদ্যালয়ে আমরা ফি বছর নাটক-সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-আবৃত্তি করতাম ম্যাডামদের তত্ত্বাবধানে। বছরে তিন থেকে চার বার এই সব অনুষ্ঠান হত। এমনকী শিক্ষক দিবসেও।

স্কুলের ম্যাডামরাই আমাদের সেই সময় নিজে হাতে সাজিয়ে দিতেন, শাড়ি বা পুরুষ চরিত্রে হলে ধুতি পরিয়ে গোঁফ এঁকে, চুল আঁচরিয়ে, সাজিয়ে দিতেন। মেক-আপের যাবতীয় দায়িত্বই তাঁদের যেন। কী সুন্দর বন্ধুর মতো মিশতেন। প্রজাতন্ত্র বা স্বাধীনতা দিবসেও নানা কুচকাওয়াজ, পিটি ও ড্রিল ম্যাডামরা কঠোর ভাবে শেখাতেন। সরস্বতী পুজোয় ম্যাডামরা নিজে হাতে ভোগ পরিবেশন করে যত্ন করে খাওয়াতেন। অন্য দিকে আবার কী ভয়টাই না পেতাম ওাঁদের। ক্লাসে একটু অন্যমনস্ক হয়েছি কী ওাঁদের শ্যেন দৃষ্টিতে নজরবন্দি। ক্লাসে হোমওয়ার্ক অসমাপ্ত থাকলে বা টিউটোরিয়ানে কিছু কম নম্বর পেলে, অযথা বানান ভুল, এ সব কারণে মৃদু ধমকধামক। সকালে প্রাত্যহিক ‘প্রেয়ার লাইনে’ টুঁ শব্দটি করার জো নেই। কড়া ডিসিপ্লিনের আওতায়। অথচ ভালবাসতেন। পরে ভেবে দেখেছি, আপাত রাগী রাগী ইমেজটা ওঁদের মুখোশ মাত্র। অন্তরে সুনিবিড় স্নেহ-ছায়া। মাস দেড়েক গরমের ছুটিতে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ম্যাডামদের বাড়ির ঠিকানায় চিঠি পাঠাতাম। জবাবও আসত কিছু দিনের মধ্যেই। ম্যাডামরা আমাদের নিরাশ করতেন না। এঁরা আজ অনেকেই ইহজগতে নেই। এই লেখাটি লেখার মাধ্যমেই তাঁদের প্রতি ট্রিবিউট জানিয়ে রাখি। বড় বেশি নস্টালজিক হয়ে পড়ছে। আমার এই কথা ও কলম। প্রসঙ্গান্তরে যাই।

‘মা আসছেন’। হোক না পরবাস যাপন। শারদ উৎসবের দিনগুলো ঘনিয়ে এসেছে। কাউন্টডাউনও শুরু। এ বার নাকি পুজোর আনন্দের জন্য বরাদ্দ আস্ত একটা দিন কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। ব্যাপারটা হল নবমী-দশমী একই দিনে। এ দিকে দুর্গাপুজো হাতে গোনা আর মাত্র ক’টা। এখন থেকেই নিশ্চয় কেনাকাটা শুরু করে দেওয়া হয়ে গেছে। পুজোর ক’টা দিন কী রকম সাজগোজ, পোশাক-আশাক পরবেন সেই পরিকল্পনা নিশ্চয়ই তৈরি? পুজো বলে কথা। মায়ানগরীর পরবাস যাপনে অভ্যস্ত বাঙালি হৃদয়, ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ রেখে শুরু করে দিয়েছে পুজো প্রস্তুতি।

মুম্বইয়ের বাঙালি ক্লাবগুলোতেও এখন পুজো প্রস্তুতি তুঙ্গে। ‘নভি মুম্বই বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’এর পুজোর বয়স এ বার ৩৫ বছর। ক্লাব প্রেসিডেন্ট সুকান্ত নাগ ও সেক্রেটারি বিভাস মাইতি। সুকান্তবাবু ফোনে জানালেন— পুজোর প্রস্তুতিপর্ব মোটামুটি শেষ, এ বার জাল গোটানোর পালা। থানেতে মূর্তি গড়ার কাজ চলছে। মণ্ডপসজ্জায় মেদিনীপুরের অরুণ দেবনাথ ও সম্প্রদায়। কুলো ও ঝুড়ি দিয়ে মণ্ডপসজ্জায় অন্য রকম একটা আবেদন ফুটিয়ে তোলা হবে। এ বার যেহেতু পুজো এক দিন কম, তাই পঞ্চমীর দিন থেকেই পুজো শুরু হয়ে যাবে। পুজোর বাজেট ৭০ লাখ। পঞ্চমীর দিন বিচিত্রানুষ্ঠানে সহজ মা ও উৎপল ফকির। ষষ্ঠীতে ছৌ নাচ। সপ্তমী সন্ধ্যায় মুম্বই শিল্পীদের ‘সুচিত্রা-উত্তম গানে গানে’। অষ্টমী নবমী গুণিজন পুরস্কার বিতরণ এবং বাবুল সুপ্রিয়র গান। অন্য দিকে বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ ঘটনাক্রমে ‘বেঙ্গল ট্রাস্ট’এর পুজোটি এ বার নাকি বন্ধ হয়ে রয়েছে।

বান্দ্রা ‘নতুন পল্লি দুর্গোৎসব কমিটি’র এ বছরের নবনিযুক্ত পৃষ্ঠপোষক, বিশিষ্ট নাট্যকার-পরিচালক-অভিনেতা লাকি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ৪২ বছরের এই পুজোটি সম্বন্ধে কিছু বার্তালাপ হল। ‘নতুন পল্লি’ পুজোর প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক বাসু চট্টোপাধ্যায় এবং সেক্রেটারি মণীশ বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত পুজোর প্রাথমিক কাজকর্ম— যেমন চাঁদা তোলা, স্যুভেনিরের জন্য বিজ্ঞাপন জোগাড় করা, লোকাল থানা ও মিউনিসিপ্যালিটি থেকে অনুমতি আদায় সব শেষ পর্যায়। পুজোর দিন পনেরো আগে থাকতেই ম্যারাপ বাঁধা ও মণ্ডপসজ্জার কাজ শুরু হয়ে যাবে। চন্দননগরের আলো। এই পুজোর নির্দিষ্ট পুরোহিত এবং ঢাকি বংশ পরম্পরায় এখানেই অংশগ্রহণ করে আসছেন। মুম্বইয়ে প্রয়াত সাহিত্যিক দিব্যেন্দু গুহ-র লেখা ‘ল্যাঙ্গোয়েজ’ নাটকটি অমিত দত্তের পরিচালনায় নিয়মিত মহড়া চলছে।

ভাসাই পূর্ব ‘প্রগতিশীল সোশিও কালচারাল অর্গানাইজেশন’-এর এটি ১৪তম দুর্গা পুজো। ক্লাব প্রেসিডেন্ট অনিমেষ ঘোষাল জানালেন, এ বারের পুজো বাজেট ৮ লক্ষ। এই পুজোটি নবরাত্রি ও দুর্গাপুজো সমন্বয় ভাবে পৃথক দুটি মণ্ডপে প্রতি বছর পালন করা হয়। দুর্গাপুজো কমিটির সেক্রেটারি সমীর সাহা ও কোষাধ্যক্ষ কার্তিক ভুঁইয়া। গণপতি পুজো শেষ হলেই মণ্ডপ গড়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে। চাঁদা তোলার পাটও শুরু হবে তার পরই। মূর্তি নির্মাণে অম্বরনাথ অঞ্চলের বিমল পাল। বাঁকুড়া থেকে ঢাকি আসছে। তাদের আসা-যাওয়ার টিকিট বুকিং শেষ। কলকাতা থেকে আমন্ত্রণপত্র ও রসিদ বই ছাপানোও হয়ে গেছে।

নালাসোপারা পূর্ব, অলকাপুরী ‘বেঙ্গলি সংস্কৃতি সংঘে’র দুর্গাপুজো এ বার ২৪ বছরে পদার্পণ করছে। এাঁদের প্রতিষ্ঠিত কালীমন্দির রয়েছে যেখানে নিত্যপুজো হয়। ক্লাব সেক্রেটারি ভোলানাথ কর্মকার জানালেন, পুজোর বাজেট এ বছর ছয় লাখ। ঢাকি আসছে বাঁকুড়া থেকে। প্রতিমা অম্বরনাথ-এর বিমল পালের নির্মাণ। মণ্ডপ, স্থানীয় পাতিল ডেকোরেটার্স। মূল মণ্ডপের আলো চন্দননগর থেকে আনা হতে পারে। পুজোর প্রতিদিন ভোগ ও রাতে স্থানীয় অর্কেস্ট্রা ও বাচ্চাদের নাচ গান থাকবে।

‘ভাসি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’এর প্রেসিডেন্ট মানস সামন্ত জানালেন, এ বারে দশমতম পুজোটি বড় মাপের হবে। মণ্ডপ নির্মাণে মেদিনীপুরের কাঁথি থেকে নির্মাণকারী আসছেন। বেতের ঝুড়ি-কুলো-কাঠের পুতুল ইত্যাদি অঙ্গসজ্জায় মণ্ডপটি নির্মিত হবে। ভাসি গ্রামের শিবু পাল প্রতিমাশিল্পীর ভূমিকায়। সর্বসাধারণের জন্য ভোগের বন্দোবস্ত থাকছে। এ বারের বাজেট ৫০ লাখ। অনুষ্ঠানসূচিতে শঙ্খধ্বনি, ধনুচি নাচ, গানে গানে আড্ডা, ‘বং-ঢং’ ইত্যাদি প্রতিযোগিতা ও প্রতি বারের মতোই পুজো চত্বরে বইমেলা, হস্তশিল্প স্টল থাকছে। পুজোর বোধন, পুষ্পাঞ্জলি, আরতি, কুমারী পুজো, সন্ধ্যারতি, ভোগ, হোম, সন্ধিপুজো ইত্যাদি যথাবিহিত পালিত হবে। অনুষ্ঠানসূচি ও আমন্ত্রণ পত্রটি সৃজন করেছেন শঙ্খ করভৌমিক। ষষ্ঠী সন্ধ্যা গানে অণ্বেষা দত্তগুপ্ত, সপ্তমী স্যাফায়ার ক্রিয়েটিভ ডান্স, অষ্টমী-নবমী রাতে প্রথমার্ধে বাংলানাটক ডট কম-এর বাউল গান ও দ্বিতীয়ার্ধে অনুপম রায়।

ভাসাই পশ্চিম ডি জি নগর কালি টেম্পল কমপ্লেক্সের ৩০তম পুজো পালন করছে ‘বেসিন বেঙ্গল ক্লাব’। পুজো প্রেসিডেন্ট অসীম ভাদুড়ি ও সম্পাদক বিনয় বোস। ক্লাবটির ফাউন্ডার মেম্বার মৃণাল গুহ মহাশয় জানালেন তাঁদের এ বছরের পুজোর বাজেট ধরা হয়েছে ৮ লাখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকছে সদস্যদের কণ্ঠে আগমনী গান, ষষ্ঠী সন্ধেবেলা। সপ্তমীতে মনমাতানো আধুনিক গানের আসরে থাকছেন আরতি কণ্ঠী ইতি মুখোপাধ্যায় ও অরূপ চৌধুরী। পরে অনুপ ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় শৈলেশ গুহ নিয়োগী লিখিত বাংলা নাটক ‘ভূতের মুখে রাম নাম’। অষ্টমী সন্ধ্যায় রকমারি বাংলা ও হিন্দি গানের সম্ভার নিয়ে অর্কেস্ট্রা।

‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’ আগময়ীর আগমনে, ঢাকের বাদ্যে, চন্দনের সৌরভে, ধূপের ধোঁয়ায়, আরতির অনুষঙ্গে ‘মা আসছেন’—’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madhuchanda mitra ghosh mumbai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE