Advertisement
E-Paper

মন্ত্রিসভা সাজানোই বড় চ্যালেঞ্জ মোদীর

প্রধানমন্ত্রী পদে ২১ মে তিনি শপথ নিতে পারেন বলে শোনা গিয়েছিল আগেই। কিন্তু দলের নেতাদের নরেন্দ্র মোদী আজ জানিয়েছেন, ২১ মে রাজীব গাঁধীর মৃত্যুদিন। তিনি চান, শপথ অনুষ্ঠানে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীরাও উপস্থিত থাকুন। ২১ তারিখে যদি সনিয়া-রাহুল থাকতে রাজি হন, সে ক্ষেত্রেই তিনি ওই দিন শপথ নেবেন। তা না হলে ২২ কিংবা ২৩শেও শপথ হতে পারে। এর পরেই বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ জানিয়ে দেন, শপথের দিন এখনও স্থির হয়নি। আগামী ২০ তারিখ নয়া সংসদীয় দলের বৈঠকেই তা ঠিক হবে। তবে রাতে আবার মোদীর সঙ্গে বারাণসীতে গিয়ে রাজনাথ জানান, শপথ হতে পারে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৪ ০৩:১৭

প্রধানমন্ত্রী পদে ২১ মে তিনি শপথ নিতে পারেন বলে শোনা গিয়েছিল আগেই। কিন্তু দলের নেতাদের নরেন্দ্র মোদী আজ জানিয়েছেন, ২১ মে রাজীব গাঁধীর মৃত্যুদিন। তিনি চান, শপথ অনুষ্ঠানে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীরাও উপস্থিত থাকুন। ২১ তারিখে যদি সনিয়া-রাহুল থাকতে রাজি হন, সে ক্ষেত্রেই তিনি ওই দিন শপথ নেবেন। তা না হলে ২২ কিংবা ২৩শেও শপথ হতে পারে।

এর পরেই বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ জানিয়ে দেন, শপথের দিন এখনও স্থির হয়নি। আগামী ২০ তারিখ নয়া সংসদীয় দলের বৈঠকেই তা ঠিক হবে। তবে রাতে আবার মোদীর সঙ্গে বারাণসীতে গিয়ে রাজনাথ জানান, শপথ হতে পারে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যেই।

মোদী চাইছেন, শপথের আগেই মন্ত্রিসভার রূপরেখা চূড়ান্ত করে ফেলতে। এ নিয়ে কাল থেকেই তিনি আলোচনা শুরু করে দিতে চান। যে কারণে আজ দিল্লি হয়ে বারাণসীতে গিয়েও রাতে দিল্লি ফেরেন তিনি। নেতারা অনেকে বলছেন, বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসায় মোদীর ইচ্ছেতে বাধা দেবে না দল। আবার ‘ওয়ান ম্যান শো’ গোছের একটা ভাবমূর্তিও রয়েছে মোদীর। এবং তা বদলাতেই মোদী আরও বেশি করে সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা সাজানোর চেষ্টা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। অটলবিহারী বাজপেয়ী এক সময়ে সিকন্দর বখ্তকে মন্ত্রী করবেন বলে স্থির করেছিলেন। কিন্তু সিকন্দর দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষমা স্বরাজের মতো কেউ যদি একই ভাবে বেঁকে বসেন, তা হলে শুরুতেই হোঁচট খাবে মোদীর যাত্রা। এমন সম্ভাবনা এড়াতেই তিনি সর্বসম্মতিতে জোর দিচ্ছেন।

কেমন হতে পারে নরেন্দ্রভাই মোদীর মন্ত্রিসভা?

দলীয় সূত্রের মতে, এটি এক সুবিশাল প্রক্রিয়া। বহু সাংসদ এ বারে জিতে এসেছেন। গো-বলয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে মন্ত্রিসভায়। যেমন, অসম থেকে এত জন সাংসদ। ফলে বাজপেয়ী আমল থেকে ওই রাজ্যের পুরনো মুখ বিজয়া চক্রবর্তীকে মন্ত্রী করা হবে, নাকি একেবারে আনকোরা কোনও নবীন মুখকে আনা হবে এই ধরনের সিদ্ধান্তও নিতে হবে। তা ছাড়া, মন্ত্রিসভায় রাখতে হবে নানা জাতি-ধর্মের প্রতিনিধিত্বও।

অর্থমন্ত্রী পদে অরুণ জেটলিকে আনার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। শিল্পমহলে অবশ্য কে ভি কামাথ বা দীপক পারেখের মতো বিশেষজ্ঞদের নামও আলোচনায় রয়েছে। কিন্তু তাঁরা আবার আমলাতন্ত্রের কিছু জানেন না। শুধুমাত্র বেসরকারি ক্ষেত্রের মানসিকতা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলানো সহজ না-ও হতে পারে। এক সময়ে রাজনীতির পরিধির বাইরে থেকে যশোবন্ত সিংহকে আনা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন আরএসএসের না-পসন্দ। কিন্তু জেটলির রাজনৈতিক উত্থান বিজেপির ছাত্র রাজনীতি থেকেই। তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ, শিল্পমহলের বন্ধু, সংস্কারপন্থী। এক নেতার কথায়, অমিত শাহকে এই দায়িত্ব দিলেই হয়তো সব থেকে সুবিধে হত মোদীর। কিন্তু তা সম্ভব নয়। তাই কোনও অভিজ্ঞ অথচ অনুগামী নেতাই মোদীর পছন্দ হতে পারেন। কারণ, মনমোহন সিংহ ও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে যে বিবাদ চলত, মোদী নিশ্চয়ই তার পুনরাবৃত্তি চাইবেন না। জেটলির পাশাপাশি অবশ্য অর্থমন্ত্রী পদে ভাবনায় রয়েছে যশবন্ত সিন্হা, অরুণ শৌরীদের নামও। শৌরীকে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে ডাকা হয়েছে।

মোদীকে প্রথমে স্থির করতে হবে, ‘বিগ-ফোর’-এ (স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ, বিদেশ) কাদের সামিল করবেন। যে ভাবে সুষমা স্বরাজ বিপুল ভোটে বিদিশা থেকে জিতে এসেছেন, তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দিতেই হবে। একটা সময়ে বিদেশ মন্ত্রকে ভাবা হচ্ছিল সুষমাকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তাঁর প্রতি সুষমার মনোভাবের কথাও মোদীকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। প্রণববাবুর পর এস এম কৃষ্ণ যখন বিদেশমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেটি অনেক বেশি সুবিধাজনক ছিল মনমোহনের পক্ষে। কারণ, বকলমে বিদেশ মন্ত্রকের রাশ হাতে রাখতে পেরেছিলেন তিনি। সেই হিসেবে সুষমার বদলে অন্য

কেউ বিদেশ মন্ত্রকে এলে মোদীর সুবিধে। আর সুষমা নিজেও বিদেশ মন্ত্রক নিতে অনিচ্ছুক।

লালকৃষ্ণ আডবাণী স্পিকার হতে রাজি। কিন্তু মোদীর মনে আশঙ্কা রয়েছে, কোনও ভাবে সংসদে কংগ্রেস যদি আডবাণীকে ব্যবহার করতে শুরু করে, তা হলে সরকারের পক্ষে তা অস্বস্তিজনক হবে। গত কাল বিপুল জয়ের পরেও আডবাণীরা কিন্তু মোদীকে ঢালাও সার্টিফিকেট দেননি। এ দিকে, সভাপতি রাজনাথ চান মন্ত্রিসভার দু’নম্বর ব্যক্তি হতে। তাঁর পছন্দ স্বরাষ্ট্র। তাই মোদীর ছায়াসঙ্গী হয়ে রয়েছেন রাজনাথ। আজ দিল্লিতে মোদীকে বিমানবন্দরে আনতে যাওয়া থেকে সদর দফতরে তাঁকে জড়িয়ে ছবি তোলা, এমনকী কাশী বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো সর্বত্রই ছিলেন রাজনাথ। তাঁকে স্বরাষ্ট্র দেওয়া হবে না প্রতিরক্ষা, সেটা রাজনাথের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করতে হবে মোদীকে। মুরলী মনোহর জোশী সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের আর্জি জানিয়ে রেখেছেন। তাঁকে দেওয়া হতে পারে পছন্দের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রক।

প্রাক্তন সভাপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু পেতে পারেন গ্রামোন্নয়ন। ইয়েদুরাপ্পার নামও উঠছে। কিন্তু দুর্নীতি মামলা থেকে তিনি এখনও নিষ্কৃতি পাননি। শরিক নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। ফলে নীতিগত ভাবে তাঁদের মন্ত্রকে নেওয়া হবে কি না, সেটাও প্রশ্ন। তবে ইয়েদুরাপ্পার বন্ধু শোভা করঞ্জালের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে নেওয়ার ব্যাপারে আরএসএসের চাপ থাকলেও দলের অনেকেই তাঁকে চান না। আডবাণী আবার শত্রুঘ্ন সিন্হাকে মন্ত্রী করার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু বিহারের অন্য নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদকে কোনও না কোনও মন্ত্রক দিতেই হবে। আইন বা কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক জুটতে পারে তাঁর। রাজীবপ্রতাপ রুডি এ বার রাবড়ি দেবীকে হারিয়েছেন। প্রশিক্ষিত পাইলট রাজীবপ্রতাপ বিমান মন্ত্রক বা বাণিজ্য মন্ত্রকের ভার পেতে পারেন তিনি। দিল্লির নেতা হর্ষবর্ধনকে ভাবা হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকে। কিন্তু দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন হলে হর্ষবর্ধনই একমাত্র ভরসাযোগ্য মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। সেটাও চিন্তার বিষয়।

আর এক প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ীকে রেল বা অন্য পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রক দেওয়ার কথা চলছে। সুষমাকে বিগ-ফোরে না আনলে রেলের দায়িত্ব তাঁকেও দেওয়া হতে পারে। আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী রেলের দায়িত্বে ছিলেন। সুষমাকে রেলে আনলে মোদীর অস্বস্তি কিছুটা দূর হতে পারে, আবার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকও পাবেন সুষমা। সুষমার ঘনিষ্ঠ নেতা সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া জিতেছেন দার্জিলিং থেকে। রাজ্যসভায় বিরোধী দলের উপনেতা থাকার সময়ে কার্যত তিনি মন্ত্রীর সমতুল ভূমিকা পালন করেছেন। কাজেই এ বার তাঁকে মন্ত্রিসভায় নিতে চাপ থাকবে সুষমার তরফে। অহলুওয়ালিয়ার জন্ম আসানসোলে। সে ক্ষেত্রে ইস্পাত মন্ত্রক পেতে পারেন তিনি। আবার আসানসোলের সদ্য-নির্বাচিত সাংসদ, গায়ক বাবুল সুপ্রিয় সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী পদে বিবেচিত হতে পারেন।

বিদ্যুৎ কয়লা, শ্রম বা উত্তর-পূর্বের মতো কোনও মন্ত্রক পেতে পারেন পূর্ণ সাংমা। আবার সুরেশ প্রভুও বিদ্যুৎ মন্ত্রকের দাবিদার। মন্ত্রী হতে আডবাণী ও গডকড়ীর কাছে তদ্বির করেছেন উমা ভারতী। দিল্লিতে জয়ের পর মন্ত্রী হতে চাইছেন মীনাক্ষী লেখিও। মেনকা গাঁধীকেও মন্ত্রী করতে আগ্রহী মোদী। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে মনোহর পারিক্করকে। উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভুবনচন্দ্র খান্ডুরিও আসতে পারেন মন্ত্রিসভায়। দৌড়ে রয়েছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহও।

মোদী গত দু’দিনে বারবার বলছেন, এ বারেই প্রথম স্বাধীন দেশে জন্মানো কোনও ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। ফলে মন্ত্রিসভাতেও এক ঝাঁক নতুন মুখ থাকা অসম্ভব নয়। রামবিলাসকে মন্ত্রী করা না হলে তাঁর ছেলে চিরাগ প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন। যশবন্ত সিন্হা এ বার লোকসভায় না লড়ে ছেলে জয়ন্তকে জিতিয়ে এনেছেন। আইআইটি-হার্ভার্ডের প্রাক্তন ছাত্রকেও প্রতিমন্ত্রী করতে পারেন মোদী। এ ছাড়াও অনেক নাম। অলিম্পিকে রুপোজয়ী শু্যটার রাজ্যবর্ধন রাঠৌর, প্রয়াত প্রমোদ মহাজনের মেয়ে পুনম, বসুন্ধরা রাজের ছেলে দুষ্মন্ত, প্রেমকুমার ধুমলের ছেলে অনুরাগ ঠাকুর।

নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে জটিল অঙ্কটা দ্রুতই কষে ফেলতে হবে নরেন্দ্রভাইকে।

modi parliament
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy