লালকৃষ্ণ ও কমলা আডবাণী। ফাইল চিত্র
সানাই বেজেছিল ৫০ বছর আগে। আজ ফের চার হাত এক হল পাত্রপাত্রীর। অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে শুভেচ্ছা জানালেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। পাত্রপাত্রীর নাম লালকৃষ্ণ ও কমলা আডবাণী।
পঞ্চাশ বছর আগের বম্বে (মুম্বই হতে বাণিজ্যিক রাজধানীর তখন ঢের দেরি)। সেখানেই প্রথম দেখা হয় লালকৃষ্ণ-কমলার। প্রথম বার দেখতে যাওয়ার সময়ে ধুতি পরেছিলেন আডবাণী। পছন্দ হয়নি কমলার। তাই শার্ট প্যান্ট পরা শুরু করেন জনসঙ্ঘ ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একনিষ্ঠ কর্মী।
বিয়ে হওয়ার পরে দিল্লির আর কে পুরমে সাংবাদিক কোটায় ফ্ল্যাট পান আডবাণী। তখন আরএসএসের মুখপত্র পাঞ্চজন্যের সিনেমা সমালোচক তিনি। ফ্ল্যাটে একটা অ্যাশট্রে রেখেছিলেন কমলা। আডবাণী বলেছিলেন, “আমি তো সিগারেট খাই না। ওটা এনেছ কেন?” কমলা বলেছিলেন, “তোমার বন্ধুরা তো কেউ খেতে পারেন।” তেমন বন্ধু কেউ বাড়িতে আসবেন না বলেই জানান আডবাণী। কিন্তু, তাও অ্যাশট্রেটা ফেলেননি কমলা। বইয়ের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিলেন অ্যাশট্রেটা।
এমনই নানা স্মৃতির জোয়ারে আজ ভেসে গেলেন আডবাণী দম্পতি। বাড়িতে সামিয়ানা খাটিয়ে বসেছিল পুনর্বিবাহের আসর। ঢোকার মুখেই অতিথিদের মাথায় রক্ততিলক পরাচ্ছিলেন এক পুরোহিত। হাতে পরানো হচ্ছিল সোনালি, লাল, সবুজ, হলুদ রঙের সুতো। মহিলাদের জন্য ছিল ওই রংয়ের চুড়িও।
কেন এই সব রং?
আসরের উদ্যোক্তারা জানালেন, লাল কর্মের প্রতীক। সোনালিতে রয়েছে শুভেচ্ছা। বাকি রংগুলি ধন ঐশ্বর্য, সজীবতা। সেই সঙ্গে বিয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে সোনালি রংকে দেওয়া হয়েছে গুরুত্ব। তাই লালকৃষ্ণ আডবাণীর পরনে ছিল সোনালি পোশাক। কমলার পরনে সোনালি শাড়ি।
ফের মালাবদল করলেন আডবাণী দম্পতি। এখন স্বামী ছাড়া কাউকে চিনতে পারেন না কমলা। তবে হেসে শুভেচ্ছা জানান সকলকেই। প্রণাম পাওয়ার পরে হাসলেন নরেন্দ্র মোদীর দিকে তাকিয়েও।
নরেন্দ্র মোদী... আডবাণীর সঙ্গে যাঁর রাজনৈতিক মতান্তর নিয়ে এখনও মাঝেমধ্যেই গুঞ্জন ওঠে রাজধানীতে। দিল্লি বিধানসভা ভোটে দলের শোচনীয় হারের পরে সেই গুঞ্জন আরও প্রবল হয়েছে।
আজ আডবাণী দম্পতির সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটালেন প্রধানমন্ত্রী। দেখলেন আডবাণী-কন্যা প্রতিভার তৈরি তথ্যচিত্রও। যাতে লালকৃষ্ণ-কমলার ৫০ বছরের জীবনের নানা রং ধরা রয়েছে। শুনলেন প্রতিভার গানও।
আর শুধু মোদীই বা কেন? আসরে হাজির হয়েছিলেন দিল্লি বিজেপির নেতা হর্ষ বর্ধন, বিজয় গয়ালরা। দিল্লিতে হারের বিশ্লেষণ করতে যাঁরা এখনও বৈঠক করে উঠতে পারেননি। বিধানসভা ভোটের ফলের পরে এই আসরেই কার্যত প্রথম মুখোমুখি হলেন তাঁরা। ছিলেন ইউপিএ জমানার মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্ল ও এনসিপি নেতা প্রফুল্ল পটেলও।
আসলে আডবাণী দম্পতির বিবাহবার্ষিকী ২৫ ফেব্রুয়ারি। আজ তা পালন করা হয়েছে মাত্র। ওই দিনটিতেই যে রাজীব গাঁধী ও সনিয়া মাইনোরও বিয়ে হয়েছিল তা জানতেন না আডবাণী। সম্প্রতি সনিয়ার উপরে লেখা একটি বইয়ে জেনেছেন। তার পরে ফোনও করেছিলেন সনিয়াকে।
কিন্তু আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ঘুরে ফিরে যে আসছেন সেই নরেন্দ্র মোদীই। গত কাল উত্তরপ্রদেশে লালুপ্রসাদের মেয়ে ও মুলায়ম সিংহ যাদবের নাতির তিলক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। গত কিছু দিনের মধ্যে তাঁকে দেখা গিয়েছে ‘মরাঠা স্ট্রংম্যান’ শরদ পওয়ারের সঙ্গে একমঞ্চেও। সংসদের বাজেট অধিবেশনে ঝড়ের আশঙ্কা করেই তিনি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন বলে ধারণা রাজনীতিকদের। আজই দিল্লিতে মুরলীমনোহর জোশীর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছেন মোদী। রাজনীতিকদের মতে, আডবাণীর মতো পুরনো বিক্ষুব্ধ নেতাদের ক্ষোভেও এখন জল ঢালতে চান প্রধানমন্ত্রী। আডবাণীর বিবাহবার্ষিকীতে হাজিরাও সেই কৌশলেরই অঙ্গ।
ব্যক্তির নাম যখন নরেন্দ্র মোদী, তখন অনেক কিছুই অসম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy