প্রত্যাশা পর্ব শেষ। এ বার প্রতিশ্রুতি পূরণের পালা।
তাঁর গুজরাতে লগ্নির ঢল নামে বলে প্রচারে দাবি করেছেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন কর্মসংস্থানের কথা। কম সরকারি হস্তক্ষেপেও সুশাসনের কথা দিয়েছেন। এ বার তিনি মসনদে বসার আগে নিজেদের প্রত্যাশা তুলে ধরতে শুরু করল শিল্পমহল। তাদের আশা, একক গরিষ্ঠতার পর সংস্কারে গতি আনবেন মোদী। অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি লাভের কথা ভেবে পিছপা হবেন না সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে।
তাই শিল্প চায়, মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানতে খাদ্যপণ্যের জোগান বাড়ানোয় সচেষ্ট হোক সরকার। অনুর্বর জমিতে ফল-সব্জি চাষের ‘রামধনু বিপ্লব’-এর পরিকল্পনা হোক। ১০০ দিনের কাজে সব গ্রামে হোক পাকা রাস্তা। সমস্ত জ্বালানির দামই ছাড়া হোক বাজারের উপর। যাতে ভর্তুকির বোঝা কমে।
এমন প্রত্যাশা নিয়েই সোমবার দুই বণিকসভা সিআইআই এবং ফিকির বৈঠক বসেছিল। দুই বণিকসভাই চায়, তিন বছরে বৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিক মোদী-সরকার। ২০২০-এর মধ্যে তা হোক ১০%।
মোদী কম সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষপাতী। শিল্প চায় নির্মেদ, ছোট সরকারও। ফিকি-র প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ বিড়লা বলেন, এত মন্ত্রকের প্রয়োজনই নেই। সরকারের বহর কমলে ছাড়পত্রের সুবিধা হবে। সিআইআইয়ের প্রেসিডেন্ট অজয় শ্রীরামের মতে, অর্থনীতি সমস্যায় ভুগছে। তার স্বল্পমেয়াদি সমাধান খোঁজার চেষ্টা হলে, ফল উল্টো হবে। নয়া সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যার কিছু প্রাথমিক ভাবে শিল্পমহলেরও না-পসন্দ হতে পারে।
ফিকি চায়, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কমাতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে একটি দল হোক। বিড়লার কথায়, “দুধের উৎপাদন বাড়াতে গুজরাতে শ্বেত বিপ্লব সফল হয়েছে। তেমনই কিছু প্রকল্প চালু হোক কেন্দ্রীয় স্তরে। নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে অনুর্বর জমিতে ফল-সব্জির চাষ হোক। যার নাম হতে পারে রামধনু বিপ্লব।” সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “১০ বছরে ১৫ কোটি কর্মসংস্থান জরুরি। উদ্ভাবনী চিন্তা প্রয়োজন।” ফিকি মনে করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি পরিকাঠামোয় জোর। বাজপেয়ী-জমানায় সোনালি চতুর্ভুজের মতো জাতীয় সড়ক প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। মোদীও তেমনই দু’তিনটি প্রকল্প হাতে নিন। যার উদাহরণ হিসেবে দ্রুতগামী যাত্রীবাহী ট্রেন করিডর বা প্রতি গ্রামে পাকা সড়কের কথা তুলছে তারা।
দেশে লগ্নি-পরিবেশ ফেরানোই মোদীর চ্যালেঞ্জ বলে মত শিল্পমহলের। গুজরাতে লগ্নি টানতে প্রতি বছর ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ নামে সম্মেলন করতেন মোদী। দেশের জন্যও তিনি তা করতে পারেন বলে শিল্পমহলের যুক্তি। শ্রীরাম বলেন, “কোন দেশে ব্যবসা করা কতটা সহজ, সেই নিরিখে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩৪।” ছবিটা বদলের দাবি তুলছেন তাঁরা। ফিকি-র মতে, শিল্পমহলের আস্থা ফেরাতে পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনে কর চাপানোর মনোভাব ছাড়তে হবে। চিন, সিঙ্গাপুরের ধাঁচে এ দেশেও ছোট ব্যবসায় প্রথম কয়েক বছরের জন্য করছাড়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ভোডাফোনের কর বিতর্কে ভারতের লগ্নি ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে বলে মত অনেকের। বিড়লার কথায়, “শুধু লগ্নিবন্ধু নীতি চাই। লগ্নিকারীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy