রাত নামলে বিপদের আশঙ্কা জেনেও ঘরের বাইরে বেরোতে হয় তাঁদের। কারণ, ন্যূনতম শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সারার জন্য যে আড়ালটুকু দরকার, তার জন্য অন্ধকারই ভরসা। আর সেই অন্ধকারে ওঁত পেতে থাকা বিপদের চেহারা কখনও বা ধর্ষণ, কখনও যৌন হেনস্থা, কখনও বা হত্যা। সম্প্রতি পরপর ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা প্রকট ভাবে সামনে এনেছে ভারতের গ্রামগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল দশা। শৌচালয়ের অভাবে রাতের অন্ধকারে বাইরে বেরিয়ে বারবার হেনস্থার শিকার হচ্ছে বালিকা-কিশোরী-তরুণীরা। রবিবার এই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সরকার ঘোষণা করল, সারা দেশের নিকাশি ব্যবস্থার বদল দরকার।
‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ প্রকল্পের একটি নোটে কেন্দ্রীয় পানীয় জল ও নিকাশি দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, “বাড়িতে শৌচালয় না থাকায় যে সব মহিলাকে রাতের অন্ধকারে বাইরে বেরোতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়।” আগামী কাল এই প্রকল্পটি নিয়ে মন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন।
প্রকল্পের ওই নোটটিতে আরও জানানো হয়েছে, শুধু শৌচকর্মের জন্যই নয়, ঋতুস্রাব চলার সময়, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়, বা সদ্য মা হওয়ার পরে শৌচালয়ের আড়াল খুবই প্রয়োজন হয়। কারণ ওই সময়গুলিতে মেয়েদের বিশেষ শারীরিক ও মানসিক প্রয়োজন থাকে।
শৌচালয়ের অভাবে মেয়েদের স্কুলছুট হওয়ার প্রসঙ্গটিও রয়েছে নোটে। বয়ঃসন্ধির পরে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার একটা বড় কারণ শৌচালয়ের অভাব। প্রতি স্কুলে যদি ছেলেদের ও মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে ছাত্রীদের একটা বড় সংখ্যা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
একটি পরিসংখ্যান দিয়ে এ-ও বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ছ’কোটি মানুষকে এখনও শৌচকর্মের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে হয়। দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তনও প্রয়োজন। কারণ তথ্য বলছে, অনেক গ্রামের বাড়িতে শৌচালয় থাকা সত্ত্বেও বাসিন্দারা বাইরে শৌচকর্ম করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। ঘরে ঘরে নতুন শৌচালয় বানানোর সঙ্গে সঙ্গে এই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানোটাও সরকারের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ।
২০১৯ সালে গাঁধীর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সারা দেশের প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয় বানানোর লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্র। তাই জোর কদমে শুরু কাজ। ইউনিসেফের একটি রিপোর্ট বলছে, শুধু শৌচালয়ের অভাবই নয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে শৌচালয় থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত জলের অভাব, পয়ঃপ্রণালীর অব্যবস্থা, অপরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি কারণেও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের শিকার হয় মেয়েরা।
সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় মোদী নারীমর্যাদার উপর জোর দেন। সেই প্রসঙ্গেই দেশের সব বাড়িতে শৌচালয় বানানোর কথা বলেন তিনি। শৌচালয়ের অভাব যে মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টির সঙ্গেও জড়িত, সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy