Advertisement
E-Paper

শুনুন, আপনি কে সেটা আমিই বলছি

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে এখনও তিন দিন বাকি। নরেন্দ্র মোদী কিন্তু এখন থেকেই হোম ওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছেন। এবং সেই কাজে তিনি যে কতটা দক্ষ, তার আন্দাজ পেতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ আমলারা। রাষ্ট্রপতি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০৩:১৭

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে এখনও তিন দিন বাকি। নরেন্দ্র মোদী কিন্তু এখন থেকেই হোম ওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছেন। এবং সেই কাজে তিনি যে কতটা দক্ষ, তার আন্দাজ পেতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ আমলারা।

রাষ্ট্রপতি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। সবে নিজের পরিচয় দেওয়া শুরু করেছেন, অমনি ১৯৭৮ সালের কাশ্মীর ক্যাডারের ওই আইএএস অফিসারকে থামিয়ে দিয়ে মোদী বলেন, “আপনার পরিচয় আপনি আমার কাছ থেকে শুনুন। আমি আপনাকে বলছি।”

আর তার পরেই অনিল গোস্বামীর পুরো জীবনপঞ্জি গড়গড় করে বলতে শুরু করেন মোদী। কোন সালে তিনি কোন দফতরে ছিলেন, কোন দফতরে বিতর্ক হয়েছিল, কোন দফতরে তিনি কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অনিল গোস্বামীর তো তখন ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি দশা। তাঁর কথায়, “এত দিন প্রশাসনে আছি, এমন অভিজ্ঞতা জীবনে হয়নি।”

মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা ‘বস’ বদল হলে অধস্তন কর্মীরা তাঁর সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করবেন, দিল্লির সরকারি মহলে এটাই চিরকালীন দস্তুর। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রী তাঁর অধস্তন আমলা সম্পর্কে হোমওয়ার্ক করছেন, এটা কার্যত অভূতপূর্ব। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক অফিসার বলেন, হোমওয়ার্কের এই রীতিটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট মেনে চলেন। কারও সঙ্গে বৈঠকের আগে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে একটি রিপোর্ট তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে দেন তাঁর অফিসাররা। প্রশাসন পরিচালনার এই আধুনিক পদ্ধতিই অনুসরণ করতে চাইছেন মোদী।

৬৭ বছরেই কার্যত অথর্ব হয়ে পড়া ভারতীয় প্রশাসনকে চাঙ্গা করে তোলাই যে তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য, সেটা ক্যাবিনেট সচিব এবং অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকের পরে প্রশাসনকে অতি-সক্রিয় করার জন্য ক্যাবিনেট সচিব অন্য সব সচিবকে চিঠি পাঠিয়ে অবিলম্বে নিজের নিজের মন্ত্রকের প্রধান চারটি অগ্রাধিকার জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মোদী শপথ নেওয়ার পরে প্রত্যেক সচিব নিজের মন্ত্রক নিয়ে তাঁকে পনেরো মিনিটের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেবেন। সেই প্রেজেন্টেশনের উপরে ভিত্তি করেই মন্ত্রক সম্পর্কে আলোচনা করবেন নয়া প্রধানমন্ত্রী।

মোদী আজ বলেন, “প্রশাসনকে কী ভাবে কর্মক্ষম করা যায়, সে জন্য সর্বস্তরের অফিসারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি।” তাঁর মতে, বহু মন্ত্রকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব চরমে উঠেছে। সেই সমন্বয় ফিরিয়ে আনা দরকার। অপ্রয়োজনীয় মন্ত্রকগুলি তুলে দিয়ে বা একই ধরনের একাধিক মন্ত্রক মিশিয়ে দিয়ে সংস্কারের প্রথম ধাপটি সারতে চাইছেন মোদী। এর উদাহরণ হিসেবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হচ্ছে, রেল এবং ভূতল পরিবহণ মন্ত্রকের কাজের মধ্যে একটা সাযুজ্য রয়েছে। ফলে এই দুই মন্ত্রককে মিশিয়ে দেওয়া সম্ভব। জাহাজ মন্ত্রকও এর সঙ্গে মিশতে পারে। সেটা হলে মন্ত্রকের বহর কমে আর্থিক সাশ্রয় যেমন হবে, তেমনই একই ধরনের কাজ করে এ রকম একাধিক মন্ত্রকের এক্তিয়ার নিয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়, তা-ও দূর হবে।

তবে এ কাজ করতে গেলে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক দুই তরফ থেকেই যে বাধা আসবে, সেটা মোদী জানেন। দীর্ঘদিন সামন্ততান্ত্রিক ঘরানায় চলে আমলাতন্ত্র এই পরিবর্তন মানতে নারাজ। যেমন কয়লা মন্ত্রক বলছে, বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে মিশে যাব না। এটি সম্ভব নয়। আবার বিদ্যুৎ মন্ত্রকও বলছে, কয়লা দফতরের সঙ্গে মিলব না। মৌরসী পাট্টা খোয়ানোর আশঙ্কায় শাহি দরবারের কেউই এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। নারাজ রাজনৈতিক নেতারাও। তাঁদের লালবাতি লাগানো গাড়ি আর সরকারি সুযোগসুবিধা পাইয়ে দিতেই অতীতে বহু মন্ত্রক ভাঙা হয়েছে। জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতা যে জন্য অনেকটাই দায়ী। এখন মন্ত্রকের সংখ্যা কমলে কুর্সি দখলের প্রতিযোগিতা অনেকটাই বেড়ে যাবে।

তবে বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় আসা মোদীর পক্ষে এই সব চাপ উপেক্ষা করা সম্ভব বলেই মনে করছেন অনেক বিজেপি নেতা। ফলে প্রশাসন এবং রাজনীতির অলিন্দে এখন থরহরিকম্প দশা। চরমে উত্তেজনার পারদ।

তবে প্রশাসনিক সংস্কারের পাশাপাশি সরকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাও বদলাতে চাইছেন মোদী। তাঁর কথায়, “সমস্ত উন্নয়নের কাজ সরকার করে দেবে, নাগরিকের কোনও দায়িত্ব নেই এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।” ভাবী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, উন্নয়ন কোনও সরকারি কর্মসূচি নয়। এটি আসলে একটি আন্দোলন। সরকারের কাজ তাকে সহায়তা করা। লোকসভা ভোটে বিপুল জয়ের পরেই এই প্রসঙ্গে মোদী বলেছিলেন, “সিঙ্গাপুরের রাস্তাঘাট কত পরিষ্কার। সে জন্য আমরা সেখানকার সরকারকে কৃতিত্ব দিই। কিন্তু সিঙ্গাপুরের কোনও নাগরিককে একটা নোংরা কাগজ রাস্তায় ফেলতে দেখেছেন? নাগরিক সচেতনতাও সিঙ্গাপুরকে সিঙ্গাপুর হতে সাহায্য করেছে।” তাঁর মতে, এ দেশেও প্রশাসনের উপর মানুষের অতি নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আবার নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানোর ব্যাপারে সহায়ক হতে হবে সরকারকে।

jayanta ghoshal narendra modi anil goswami
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy