উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে রাজ্যসভার নির্বাচন আসন্ন। বড় জোর দু’টি আসন পেতে পারে কংগ্রেস। তারই দখল পেতে হামলে পড়ছেন তাবড় নেতারা। সম্ভাব্যদের তালিকা থেকে কাকে কেটে কে মনোনয়ন জোটাবেন, তার জন্য চলছে জোর টানাটানি! আর এই লড়াইয়ে নেমে আজ প্রথম রাউন্ডেই বড় ধাক্কা খেলেন কপিল সিব্বল!
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দুঁদে আইনজীবী কপিল সিব্বলকে ‘ডজ’ করে উত্তরপ্রদেশ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন পি এল পুনিয়া। জাতীয় রাজনীতিতে প্রায় অজানা একটি নাম। কোন প্যাঁচে তিনি ছিটকে দিলেন সিব্বলের মতো নেতাকে? কংগ্রেস সূত্র বলছে, রাহুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই অনগ্রসর শ্রেণির এই নেতার ভাগ্যে শিঁকে ছিঁড়েছে। এ বারের লোকসভা ভোটে সিব্বল, সলমন খুরশিদ, বেণীপ্রসাদ বর্মা, অম্বিকা সোনির মতো এক ঝাঁক মন্ত্রী হেরেছেন। কার্যত এঁরা এখন সকলেই ‘বেকার’। কিন্তু ক’দিনই বা এ ভাবে চলবে! সিব্বল ও খুরশিদ আইনজীবী। দু’জনেই ফিরেছেন পুরনো পেশায়। কিন্তু মন পড়ে রয়েছে রাজনীতি ও সংসদে। রাজনীতির রাজধানীতে এতগুলি বছর কাটিয়ে এখন তাঁরা আর এমপি-ও নন, এটাই যেন মর্যাদায় বাঁধছে। সলমন খোলাখুলি বলছেন, তিনি সাংসদ নন বলেই এখন সংসদ চত্বরে গিয়ে কংগ্রেসের হয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করতে চান না। চিদম্বরম, মণীশ তিওয়ারি, বেণীপ্রসাদদের মতো নেতারা সকলেই নিজের নিজের কৌশলে রাজ্যসভায় যেতে তৎপর।
রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা যে গুলাম নবি আজাদ, চিন্তায় তিনিও। রাজ্যসভায় তাঁর মেয়াদ ফুরোচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। তার পরে রাজ্যসভায় ফিরতে না পারলে বেঘোরে খোয়া যাবে বিরোধী দলনেতার পদটি। অথচ দল তাঁকে একার ক্ষমতায় জম্মু-কাশ্মীর থেকে জিতিয়ে আনতে পারবে কি না সন্দেহ। আবার পিডিপি বা ন্যাশনাল কনফারেন্স তাঁকে সমর্থন জানাবে কি না সেটাও প্রশ্ন। অথচ একের পর এক রাজ্যে বিধানসভা ভোটে হেরে এবং আসন খুইয়ে কংগ্রেসের সামর্থ্য নেই যে সংসদে ফিরতে উন্মুখ এই নেতাদের রাজ্যসভায় মনোনীত করে! এই অবস্থায় রাজ্যসভায় দু’টি নতুন আসন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতেই কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে কংগ্রেসে।
উত্তরাখণ্ডে একটি আসন শূন্য হয়েছে বিজেপির ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি লোকসভা ভোটে জেতায়। ওই রাজ্যে বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি তিনটি আসন খোয়ানোয় রাজ্যসভার ওই শূন্য আসনটি এখন কংগ্রেসের প্রাপ্য। উত্তরপ্রদেশ থেকে একটি আসন পেতে পারে কংগ্রেস। তবে তার জন্য দরকার ৩৮ জনের সমর্থন। অথচ সে রাজ্যে কংগ্রেসের বিধায়ক রয়েছেন ২৮ জন। ফলে সমাজবাদী পার্টি বা শরিক দল আরএলডি সমর্থন দিলে তবেই আসনটি হাতে আসবে কংগ্রেসের।
এই অবস্থায় সিব্বল, খুরশিদ, বেণীপ্রসাদ, অম্বিকা সোনি থেকে রাজ বব্বর সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে সক্রিয় ছিলেন গুলাম নবি। উঠে পড়ে লেগেছিলেন সিব্বলও। সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিংহ ও রামগোপাল যাদবের সঙ্গে সম্প্রতি কয়েক দফায় বৈঠকও করেন এ নিয়ে। এমনকী সমাজবাদী পার্টি সূত্রে এ-ও খবর, সিব্বল মুলায়মকে কথা দিয়েছিলেন, সমর্থন দিলে বিনিময়ে ‘মুফতে’ তাঁদের আইনি পরামর্শ দেবেন ভবিষ্যতে। মুলয়ামও জানিয়ে দেন, সিব্বল প্রার্থী হলে তাঁকেই ভোট দেবে দল। কিন্তু সিব্বলের ঘুঁটি কেঁচে গেল তাঁর দলেরই শীর্ষ নেতৃত্বের এক দানে।
উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে বাইরের কাউকে নয়, রাজ্যেরই এক নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছেন রাহুল। উত্তরাখণ্ডে আবার সে রাজ্যের নেতারাই রাজি নন বাইরের কাউকে রাজ্যসভায় পাঠাতে। দু’দিন আগে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত জানিয়ে গিয়েছেন সে কথা। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “রাজ্যে বিধানসভা ভোট বা উপনির্বাচনে দিল্লিবাসী যে নেতারা প্রচারে পর্যন্ত যেতে চাননি, তাঁদের কেন আসন ছেড়ে দেব?” নিজের ঘনিষ্ঠ কোনও নেতাকে রাজ্যসভার আসনটি দিতে আগ্রহী রাওয়াত। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা চান ওই আসনটি। আর নিজের বিধানসভা আসনে প্রার্থী করতে চান ছেলেকে। কিন্তু বহুগুণার ছেলে ইতিমধ্যে দু’বার বিধানসভা ভোটে হেরেছেন। তাই তাঁকে প্রার্থী করার ঝুঁকি নিতে চাইছে না হাইকম্যান্ড। কারণ, বিধানসভার উপনির্বাচনে হেরে গেলে ফের সংখ্যালঘু হয়ে যেতে পারে সে রাজ্যের সরকার। ফাঁপরে পড়ে উত্তরাখণ্ডে কাকে মনোনীত করা হবে, মনস্থির করে উঠতে পারেননি রাহুল-সনিয়া।
চিদম্বরম এই টানাটানির মধ্যে ঢোকেননি। সামনের বছর কেরল থেকে রাজ্যসভায় বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ভায়ালার রবির মেয়াদ শেষ হবে। কংগ্রেস সূত্র বলছে, চিদম্বরম পাখির চোখ ওই আসনটিই। ভায়ালারের প্রায় আশি বছর বয়স হয়েছে। সেই কারণ দেখিয়েই তাঁর জায়গা নিতে চাইছেন চিদম্বরম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy