Advertisement
০২ মে ২০২৪

সরকারে যাওয়ার সুযোগ খোলা রাখছেন মানিকেরা

লোকসভা ভোটের পরে তেমন পরিস্থিতি এলে কেন্দ্রীয় সরকারে এ বার যোগদানের সম্ভাবনা বিবেচনা করবে সিপিএম। নরেন্দ্র মোদীর কায়দায় ‘আমাদেরই সরকার আসছে’ মার্কা আক্রমণাত্মক প্রচারে না গেলেও জাতীয় স্তরে বামেদের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টায় ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কেন্দ্রে সরকারে অংশ নেওয়ার রাস্তা খোলা রাখছেন প্রকাশ কারাটেরা।

নৈহাটির মাদ্রালে ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে বামফ্রন্টের জনসভায় মানিক সরকার। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য।

নৈহাটির মাদ্রালে ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে বামফ্রন্টের জনসভায় মানিক সরকার। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৪ ০২:৪২
Share: Save:

লোকসভা ভোটের পরে তেমন পরিস্থিতি এলে কেন্দ্রীয় সরকারে এ বার যোগদানের সম্ভাবনা বিবেচনা করবে সিপিএম। নরেন্দ্র মোদীর কায়দায় ‘আমাদেরই সরকার আসছে’ মার্কা আক্রমণাত্মক প্রচারে না গেলেও জাতীয় স্তরে বামেদের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টায় ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কেন্দ্রে সরকারে অংশ নেওয়ার রাস্তা খোলা রাখছেন প্রকাশ কারাটেরা।

নয়ের দশকে এক বার সুযোগ পেয়েও কেন্দ্রে যুক্তফ্রন্ট সরকারে যোগ দেয়নি সিপিএম। জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাবও দল নস্যাৎ করেছিল সে বারই। যাকে পরবর্তী কালে স্বয়ং বসু অভিহিত করেছিলেন ‘ঐতিহাসিক ভুল’ হিসাবে। বাম শরিক সিপিআই অবশ্য সে বার কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দিয়ে মন্ত্রিত্বে গিয়েছিল। তার পরে ২০০৪ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-১ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল বামেরা। পরমাণু চুক্তি ঘিরে সমর্থন তারা প্রত্যাহারও করে নিয়েছিল। এ বার অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে বিকল্প শক্তির সরকার গড়ার ডাক দিয়ে বামেরা প্রচারে নামার পর থেকেই তাদের দিকে প্রশ্ন আসছে, তারা কি সুযোগ পেলে সরকারে যোগ দেবে? সরকারে যদি তাদের ভূমিকা না-ই থাকে, তা হলে লোকসভা ভোটে তাদের সমর্থনের খুব যুক্তি আছে কি?

সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বার সিপিএম অ্যাকাউন্ট খুলে সক্রিয় হওয়ার পরে নেট-জনতা আরও বেশি করে এমন প্রশ্ন তুলছে। তাদের বক্তব্য, ভোটের আগেই বাম নেতৃত্ব এ ব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট করে দিলে ভোটারদেরও সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। এই কৌতূহল নিরসনেই এগিয়ে এসেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। তাঁর বক্তব্য, ভোটের আগে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। কিন্তু ভোটের পরে সরকারে যোগ দেবেন না, এমন কথা তাঁরা বলছেন না।

আনন্দবাজারকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “বিজেপি যে ভাবে বলছে আমরাই সরকারে আসছি, সে ভাবে আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। বিজেপি কৌশলগত ভাবে একটা আক্রমণাত্মক প্রচার করছে। আমরা সরকারে মন্ত্রী হতে যাচ্ছি, এ কথা বলছি না। কিন্তু পরিস্থিতি এলে সরকারে যাব না, সে কথাও বলছি না। বরং, সম্ভাবনা খোলা রেখেছি।” মানিকবাবুর যুক্তি, ভোটের পরে যাবতীয় খেলাই হবে পাটিগণিতের বিচারে। কে কত আসন পেল, তার উপরেই গড়ে উঠবে নয়া সমীকরণ। ফল ঘোষণার পরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিও আলোচনায় বসে অবস্থান ঠিক করবে।

কিন্তু অনুকূল পরিস্থিতি পেলে সরকারে যোগ দিতে যে কোনও বাধা নেই, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মানিকবাবু। তাঁদের ব্যাখ্যা, নয়ের দশকের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তিরুঅনন্তপুরমে কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অধিবেশন ডেকে দলের কর্মসূচি সংস্কার করা হয়েছিল। সেখানেই সুযোগ অনুযায়ী সরকারে অংশগ্রহণের রাস্তা খোলা রাখা হয়েছে। মানিকবাবুর কথায়, “কেন্দ্রে তো আর বামপন্থী সরকার হবে না। অনেক দল মিলে সরকার হতে পারে। সেখানে আমরা যা চাইব, ঠিক তা-ই হবে এটা মনে করার কোনও কারণ নেই। আবার অন্য দল যা চাইবে, সব তেমনই হবে না। আমাদের যদি সুযোগ থাকে, নিশ্চয়ই আমরা তা গ্রহণ করার কথা ভাবব।” শুধু মন্ত্রিত্বই তাঁদের লক্ষ্য নয় বলে জানিয়ে দেশের একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে বামপন্থীদের ভূমিকার জন্যই ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্প চালু হয়েছিল, বিমা বা পেনশন বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া আটকে মানুষকে আতঙ্কের হাত থেকে ‘স্বস্তি’ দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। এ বারও যা হবে, নির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে বোঝাপড়া করেই হবে বলে জানাচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, তেমন কোনও পরিস্থিতি আসবে কি? সিপিএমের পলিটব্যুরোর আশা, কেরল থেকে ১১-১২ এবং ত্রিপুরা থেকে দু’টি আসন আসবে। এর পরে বাংলা থেকে কম হলেও গোটাদশেক আসন যদি আসে, তা হলে জাতীয় রাজনীতিতে বামেদের অস্বীকার করা যাবে না। মোদী-হাওয়ার কথা যতই প্রচার হোক, তার ঝাপ্টায় সব রাজ্যে বাকি সব শক্তির মাথা মুড়িয়ে যাবে এমনটা মনে করছেন না মানিকবাবুরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

manik sarkar ellection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE