Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ব্রেক্সিট নিয়ে দুই ভোটেই হারলেন বরিস

যদিও সেটা করতে গেলেও পার্লামেন্টে তাঁকে দুই-তৃতীয়াংশ স‌খ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বরিস জনসন। ছবি: এএফপি।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বরিস জনসন। ছবি: এএফপি।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৮
Share: Save:

হেরে গেলেন বর্তমান। পরপর দু’দিনে দু’বার। পিছন থেকে মুচকি হেসে দেখলেন প্রাক্তন।

হাউস অব কমন্সে গত কাল রাতে প্রথমবার ভোটাভুটির মুখে লজ্জাজনক ভাবে হারতে হল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রেক্সিট পিছিয়ে দিতে গত কাল পার্লামেন্টে বিল আনতে ভোটাভুটি হয়েছিল। নিজের দল কনজ়ারভেটিভ পার্টির ২১ এমপি-কে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েও সুরাহা হল না বরিসের। বিরোধী দলের সঙ্গে মিলে বিদ্রোহী কনজ়ারভেটিভ সদস্যেরা সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে ৩২৮-৩০১ ভোটে জিতে গেলেন। আর আজ চুক্তিহীন ব্রেক্সিট রুখতে বিরোধীরা বিল আনলে তার সমর্থনে ভোটাভুটিতেও হেরে যান বরিস। এ বার ৩২৯-৩০০ ভোটে। এই বিল এ বার যাবে হাউস অব লর্ডস এবং পার্লামেন্টে। দেখা হবে, আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই যাতে এটিকে আইনে পরিণত করা যায়। এই বিল পাশ হলে সরকার যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে অক্টোবরের শেষে কোনও চুক্তিতে পৌঁছতে না পারলেও, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট করা যাবে না। উল্টে বরিসকে ইইউয়ের কাছে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চাইতে হবে।

এই চাপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেছেন, ব্রেক্সিটের মেয়াদ (ঠিক ছিল ৩১ অক্টোবরের মধ্যে) আরও পিছনোর জন্য ইইউয়ের কাছে অনুরোধ করতে তাঁকে বাধ্য করা হলে তিনি নির্ধারিত সময়ের বহু আগেই সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেবেন। আগামী ১৪ অথবা ১৫ অক্টোবর হতে পারে সেই ভোট, জানিয়েছেন বরিস। যদিও সেটা করতে গেলেও পার্লামেন্টে তাঁকে দুই-তৃতীয়াংশ স‌খ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট রুখতে বিল পাশ হলে তবেই সাধারণ নির্বাচন আগে করানোয় সায় দেবেন তিনি।

গত কাল রাতে যথেষ্ট নাটকীয়তার সাক্ষী ছিল পার্লামেন্ট। আজও বিতর্ক সঙ্গী রইল ব্রিটেনের রাজনীতিতে। গত কাল রাতে টানা তিন ঘণ্টার বিতর্কের পরে ভোটাভুটির ফল ঘোষণা হয়।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে গত কাল রাতে ছিলেন পিছনের সারিতে। প্রবীণ কনজ়ারভেটিভ এমপি কেনেথ ক্লার্কের পাশে। এই সময়েই বরিসের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় টেরেসাকে। এক দিন বরিসও এ ভাবেই কট্টর বিরোধিতা করেছিলেন টেরেসার। বারবার তাঁর প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন বরিস। সে সময়ের ছবিটা স্রেফ উল্টে গিয়েছে।

বরিস অবশ্য হেরে যাওয়ার পরেও না দমে বলেছেন, অক্টোবরে ভোট ডাকা ছাড়া তাঁর হাতে বিকল্প নেই। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের মানুষকে নেতা বেছে নিতে হবে।’’ ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার বিল তাঁর কাছে ‘আত্মসমর্পণের পথ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। বরিসের যুক্তি, চুক্তি-সহ বা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ভয় দেখিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি ২৭ দেশের নেতাকে উনি ইতিবাচক কিছু শর্ত মানতে চাপ দিতে পারবেন। বরিসের সমালোচকদের অবশ্য দাবি, উনি আগুন নিয়ে খেলছেন। তাঁদের মতে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের জেরে যে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা, তা অর্ধশতকেরও বেশি সময়ের পড়শিদের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। ডাউনিং স্ট্রিটের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার রাতের ভোটে যে ২১ কনজ়ারভেটিভ এমপি দলের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের পার্লামেন্টারি পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং তার অর্থ ভোটে তাঁরা কনজ়ারভেটিভ প্রার্থী হিসেবে লড়তেও পারবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Boris Johnson Britain Brexit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE