ছবি: এএফপি।
ইউরোপে করোনাভাইরাসের প্রবেশ ঘটেছিল ফ্রান্স দিয়েই। জানুয়ারির মাঝামাঝি প্যারিসে বেড়াতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক চিনা পর্যটক। পরে ফ্রান্সেই মারা যান তিনি। এ বার সে দেশেরই এক বাসিন্দা করোনা-আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারালেন।
ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৬০ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আজ মারা যান তিনি। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চার জন আক্রান্ত হয়েছেন ফ্রান্সে। এঁদের মধ্যে দু’জন সদ্য ইটালি থেকে ফিরেছেন। এই নিয়ে ফ্রান্সে সংক্রমিতের সংখ্যা ছুঁল ১৭।
ইউরোপে সব চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইটালির। আজ আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে ইটালিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২। সংক্রমিত ৩৭৪। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, মৃতদের সকলেরই হয় বয়স হয়েছিল, নয়তো তাঁরা অন্য কোনও রোগে ভুগছিলেন। গ্রিস থেকে আজ প্রথম সংক্রমণের খবর মিলেছে। এক মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩৮ বছর বয়সি তরুণী কিছু দিন আগেই ইটালি থেকে ফিরেছেন। সে কথা মাথায় রেখেই পর্যটনে নিষোধাজ্ঞা জারির কথা ভাবছে গ্রিস সরকার।
আরও পড়ুন: দিল্লি নিয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিন সেনেটরেরাও
করোনা-ভয়
ইটালি
• আক্রান্ত: ৩৭৪ • মৃত: ১২
ফ্রান্স
• আক্রান্ত: ১৭ • মৃত: ২
গ্রিস
• আক্রান্ত: ১
“এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকতে হবে। ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিপথে চালিত করা বা তথ্য বিকৃত করা কিংবা বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, এমন কিছু বলা একেবারেই উচিত নয়।” —স্টেলা কাইরিয়াকাইডস, স্বাস্থ্য কমিশনার, ইইউ
কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি বলে মনে করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আজ ইইউ-এর স্বাস্থ্য কমিশনার স্টেলা কাইরিয়াকাইডস বলেন, ‘‘পরিস্থিতি জটিল, কিন্তু এখনই ভয় পাওয়ার মতো কিছু হয়নি।’’ রোমে আজ ইটালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরাঞ্জার সঙ্গে দেখা করেন স্টেলা। তাঁর কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিপথে চালিত করা বা তথ্য বিকৃত করা কিংবা বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, এমন কিছু বলা, একেবারেই উচিত নয়।’’ চিনের বাইরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়া নিয়ে আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেন, ‘‘গত কাল চিনের বাইরে থেকে যত জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে, চিনেও অত জন নতুন করে সংক্রমিত হননি।’’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, মঙ্গলবার চিনে সংক্রমিত হয়েছেন ৪১১ জন। চিনের বাইরে অন্য দেশগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪২৭ জন। এ দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ তাঁর ‘অপছন্দের’ দু’টি সংবাদ সংস্থাকে বিঁধে বলেন, ‘‘ওরা ভুয়ো খবর ছ়ড়িয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করছে। যা যা বলা সম্ভব, তা-ই বলে যাচ্ছে।’’
দক্ষিণ কোরিয়াতেও সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছেই। ২৮৪ জন আক্রান্ত সে দেশে। আজ দক্ষিণ কোরিয়ার মার্কিন সেনাঘাঁটি থেকে ২৩ বছর বয়সি এক সেনার সংক্রমণের খবর মিলেছে। ইরানে আক্রান্ত কমপক্ষে ১৩৯ জন। ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জন। ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, খুব প্রয়োজন না হলে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইটালি এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। পাকিস্তানে আজ দু’টি সংক্রমণের খবর মিলেছে। সে দেশে এই প্রথম।
চিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭১৫। আক্রান্ত ৭৮,০০০। গত দু’মাস ধরে গোটা দেশ প্রায় বিচ্ছিন্ন বহির্বিশ্ব থেকে। রোগ সংক্রমণ ঠেকাতে ‘তালাবন্ধ’ বহু শহর। বিদেশি বিমান ওঠানামা করছে না। দেশের ভিতরেও পরিবহণ ব্যবস্থা বেহাল। প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন সামগ্রীর কোনও অভাব হবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও আদপে পরিস্থিতি তা নয় বলে দাবি করছে দেশবাসীর একাংশ। বরং সুযোগ বুঝে পেশি ফোলাচ্ছে কালোবাজারিরা। নকল মাস্ক, ভুয়ো চিকিৎসার সামগ্রীতে ভরে গিয়েছে বাজার। চিনের জনসুরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৭ কোটি ৪০ লক্ষ ইউয়ান মূল্যের ভুয়ো চিকিৎসা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ অবস্থাতেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। কিছু অফিস খুলেছে। দোকানপাট ঝাঁপ তুলেছে। যদিও কর্মীদের বড় অংশ অনুপস্থিত। প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং আজ বলেন, ‘‘দেশে দৈনিক মৃতের হার কমলেও পরিস্থিতি এখনও জটিল ও উদ্বেগজনক রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy