যদি কিছু মেলে। সোমবার তানজাং লেসাংয়ে। রয়টার্স
আতঙ্কের প্রহর পেরিয়েও কাটছে না আতঙ্ক। আশঙ্কা রয়েছে, ফের বিধ্বংসী ঢেউ ভাসাতে পারে ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা প্রণালীর আশপাশকে। শনিবার রাতে আনাক ক্রাকাতোয়ার অগ্ন্যুৎপাতে সমুদ্রগর্ভে তৈরি ভূমিধস থেকে যে সুনামি ভাসিয়েছে সুন্দা প্রণালীর চারপাশ, এখনও তার সঙ্গে লড়াই চালাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। আর আনাক ক্রাকাতোয়া থেকে অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ না হওয়ায় ফের সুনামির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
প্রবল বৃষ্টির মধ্যে দক্ষিণ সুমাত্রার উপকূল ও জাভার পশ্চিম প্রান্তে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে উদ্ধারকাজে অসুবিধা হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৩। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন উদ্ধারকারীরা। নিখোঁজ অন্তত ১২৮ জন। জখম ১৪৫৯ জন।
পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও প্রাণ খুঁজে বার করার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আজ গিয়েছিলেন দেশের প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। চতুর্দিকে এখন শুধু ধ্বংসের ছাপ। সৈকতঘেঁষা কটেজগুলিকে শুইয়ে দিয়েছে বিশাল ঢেউ। কাদাভর্তি মেঝেতে উল্টে রয়েছে চেয়ার-টেবিল, বাসনপত্র। কোথাও আবার ক্রিসমাস ট্রি লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। আশপাশে উপহারও। ছুটির সব সাজ মিশে গিয়েছে জল-কাদায়।
সুকারামে গ্রামে হাঁটুজল ঠেলে নিজের ধসে যাওয়া বাড়ির আশপাশে জিনিসপত্র খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলেন ৬১-র বৃদ্ধা সুনার্তি। তাঁর দাবি, এখানে এখনও কোনও সাহায্য এসে পৌঁছয়নি। অনেকেরই খাবার জুটছে না। শতায়ু মাকে নিয়ে একটু উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন সুনার্তি। আশা, ফের দানবীয় ঢেউ এলে যদি কোনওমতে বাঁচা যায়!
গত ছ’মাসে এই নিয়ে তৃতীয় বার এমন ভয়ঙ্কর দুর্যোগের কবলে পড়ল ইন্দোনেশিয়া। জুলাই-অগস্টে লম্বক দ্বীপে পর পর ভূমিকম্প, সেপ্টেম্বরে সুলাওয়েসির পালুতে ভূমিকম্পে তৈরি হওয়া সুনামি, তার পর বড়দিনের মুখে ফের তছনছ দুর্যোগপ্রবণ এই দেশ।
তবে প্রকৃতির এ বারের খেয়ালে থমকে গিয়েছেন আদে জুনায়েদির মতো অনেক বাসিন্দাই। তিনি বলছেন, ‘‘এত দ্রুত সব কিছু ঘটে গেল! আমি এক অতিথির সঙ্গে ঘরে বসে গল্প করছিলাম। স্ত্রী এক বার বাইরে দরজা খুলে চিৎকার করে উঠল। আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি স্রোত যেন গিলতে আসছে।’’
আসেপ সুনারিয়াকে শনিবার রাতে জলের তোড় ঠেলে ফেলে দিয়েছিল স্কুটার থেকে। তাঁরও বাড়ি বলতে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ‘‘ঝড়ের শব্দের মতো ধেয়ে এল ঢেউ। খুব ভয় পেয়েছি। এমনটা হবে ভাবিনি। কোনও সতর্কতাও ছিল না। প্রথমে ভেবেছিলাম জোয়ারের জল। তার পরে দেখি এত বড় ঢেউ!’’ বলছিলেন ৪২-এর সুনারিয়া। ওই সুকারামেরই বাসিন্দা তাঁরাও। বরাতজোরে বেঁচে যাওয়ায় ধন্যবাদ দিচ্ছেন ঈশ্বরকে। কিন্তু হাতে আর কিছুই নেই, তাই চিন্তায় সুনারিয়া।
সোমবার এখানকার পপ ব্যান্ড ‘সেভেনটিন’-এর মৃত সদস্যদের অন্ত্যেষ্টি হয়েছে। দলটির বেস গিটার বাদক মহম্মদ আওয়াল পূর্বানিকে চিরবিদায় জানাতে গিয়ে ভেঙে পড়েন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে তিন বছরের মেয়ে বাবাকে কাছে না পেয়ে জড়িয়ে ছিল মাকে। সোমবার আরও এক গিটারবাদক, ম্যানেজার এবং আরও তিন কর্মীর মৃত্যুর খবর মিলেছে। ব্যান্ডের প্রধান গায়ক রিফিয়ান ফাজারসার স্ত্রী ডিলান এখনও নিখোঁজ। রিফিয়ান ‘মির্যাকল’-এর আশায় এখনও প্রার্থনা। রবিবার ছিল ডিলানের জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বার্তায় রিফিয়ান লিখেছেন, ‘‘আজ তোমার জন্মদিন। তোমার সঙ্গে দেখা হলে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। শিগগির ফিরে এসো।’’ সঙ্গে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর চুম্বনরত একটা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy