Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চুক্তিহীন ব্রেক্সিটে ভরসা রাখতে বললেন ট্রাম্প

এ দেশের সরকার যে ভাবে ব্রেক্সিট-মীমাংসা নিয়ে এগোচ্ছে, সাক্ষাৎকারে তার সমালোচনাও করেন ট্রাম্প। তাঁর মতে, এত দিনের আলোচনায় ব্রিটেন ইইউয়ের হাতেই অনেকটা সুযোগ তুলে দিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা    
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০৩:০৫
Share: Save:

ব্রিটেনে পৌঁছনোর আগে থেকেই বলে চলেছেন নানা বিতর্কিত কথা। এ দিনও তার কোনও ব্যতিক্রম হল না। সোমবার ব্রিটেন সফরে পৌঁছে বিক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন জেনেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার একটি ব্রিটিশ পত্রিকার কাছে ব্রেক্সিট নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর সাফ কথা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঠানো উচিত কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী নেতা নাইজেল ফারাজকে। আর পরিস্থিতি তেমন হলে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের মাধ্যমেই ইইউ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ব্রিটেনের।

এ দেশের সরকার যে ভাবে ব্রেক্সিট-মীমাংসা নিয়ে এগোচ্ছে, সাক্ষাৎকারে তার সমালোচনাও করেন ট্রাম্প। তাঁর মতে, এত দিনের আলোচনায় ব্রিটেন ইইউয়ের হাতেই অনেকটা সুযোগ তুলে দিয়েছে। কূটনৈতিক সৌজন্যের কোনও রকম তোয়াক্কা না করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ দিন বলেছেন, ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজই (যাঁর দল সদ্য ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে সব চেয়ে বেশি আসন পেয়ে জিতেছে) ইইউয়ের সঙ্গে মীমাংসা আলোচনায় অনেক বেশি কিছু করে দেখাতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নাইজেলকে খুবই পছন্দ করি। ও অনেক কিছু করার ক্ষমতা রাখে। খুবই বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। ওরা (ব্রিটেনের সরকার) তো ওকে কাজে লাগাবে না, কিন্তু কাজে লাগালে বুঝত, কতটা উপকার হয়েছে। ওরা সেটা এখনও ভেবেই উঠতে পারেনি।’’

নাইজেল নিজে অতি-দক্ষিণপন্থী এবং বরাবরই বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র কড়া সমালোচক। ২০১৬-র মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে প্রচারপর্বে মিসিসিপিতে নাইজেলকে ট্রাম্পের পাশে দেখাও গিয়েছিল। নাইজেলও ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার প্রচারসভা ওঁর ভাল লেগেছিল। উনি আমার বক্তৃতাও শুনেছেন। তখনই ওঁর সঙ্গে দেখা হয়। আমার মনে হয়, উনি অসাধারণ এক জন মানুষ, সত্যিই অসাধারণ।’’

নাইজেলের কথা উল্লেখ করার পরেই ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনকে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বেছে নেওয়ার কথা বলেছেন সরাসরি। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা যে চুক্তি চাইছেন, তা যদি না পান, বা ন্যায্য চুক্তি যদি না হয়, তা হলে আপনাদের বেরিয়ে আসাই উচিত।’’ ট্রাম্পের মতে, এ বছর ইইউ ছেড়ে বেরোতেই হবে ব্রিটেনকে। ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে ৫০০০ কোটি ডলার দিতে হবে ব্রিটেনকে। যা নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘‘আমি হলে কখনওই ৫০০০ কোটি ডলার দিতাম না। এটা তো বিরাট একটা অঙ্ক।’’

ট্রাম্পের বিস্ফোরক মন্তব্য প্রকাশ হতে না হতেই সরব হয়েছেন তাঁর অন্যতম বিরোধী, লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। রবিবার একটি পত্রিকায় তিনি লিখেছেন, ‘‘ক্রমশ বাড়তে থাকা বিশ্বজনীন বিপদের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবচেয়ে ভয়ঙ্কর উদাহরণ। বিশ্ব জুড়েই অতি-দক্ষিণদের দাপট বাড়ছে। গত ৭০ বছর ধরে আমাদের লড়াই করে অর্জন করা সব মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতার বোধ, যা এত দিন আমাদের উদারপন্থী, গণতান্ত্রিক সমাজকে নির্মাণ করে এসেছে, তার সবটাই বিপদের মুখে।’’ এর পরে লন্ডনের মেয়রের সংযোজন, ‘‘হাঙ্গেরিতে ভিক্টর ওরবান, ইটালিতে মাট্টেও সালভিনি, ফ্রান্সে মারিন ল পেন এবং আমাদের দেশে নাইজেল ফারাজ— এঁরা সবাই ২০ শতকের ফাসিস্ত বাহিনীর বিভাজনকারী শক্তির উদাহরণ। এঁরা নতুন ভাবে অশুভ পথে নিজেদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এঁরা বিশ্বের সেই সব জায়গায় সমর্থনের জোরে ক্ষমতালাভ করে জমি শক্ত করছেন, যেখানে কয়েক বছর আগে এটা ভাবাও যেত না।’’

ট্রাম্পের নিশানায় ব্রিটিশ রাজপরিবারের ডাচেস অব সাসেক্স এবং রাজকুমার হ্যারির স্ত্রী মেগান মার্কলও। ২০১৬-র প্রচারপর্বে ট্রাম্পকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলেছিলেন মেগান। আর সেই রাগ থেকেই এ বার ট্রাম্প ব্রিটেনের পত্রিকাকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আমার জানা ছিল না, উনি এত খারাপ! আশা করি উনি এখন ভাল আছেন।’’ ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের পাশাপাশি রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও এ সফরে দেখা হবে ট্রাম্পের। মেগান সে তালিকায় নেই। মেগানকে নিয়ে পরে ট্রাম্পের মন্তব্য, ‘‘আমার মনে হয় (রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে) উনি দারুণ কাজ করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump England Brxit Nigel Farage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE