উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন।-ফাইল চিত্র।
তিনি যেখানে যান, সঙ্গে নাকি যায় পোর্টেবল টয়লেট! পাছে তাঁর মল, মূত্র পরীক্ষা করে কেউ জেনে ফেলে তাঁর শরীর-স্বাস্থ্যের হালহকিকৎ।
কমিউনিস্ট হলেনই বা, দেশের বাইরে থেকে না আনা হলে, মদ নাকি তিনি কিছুতেই ছোঁবেন না! মদ তাঁর যতই প্রিয় হোক।
স্কুলে ভর্তির জন্য নয়, তিনি কমিউনিস্ট হলেও, তাঁর জন্মসাল বদলানো হয়েছিল নাকি ধর্মীয় রীতিপ্রথা মেনে! তাঁর ঠাকুর্দার জন্মসালের সঙ্গে সময়ের একটা নির্দিষ্ট ফারাক রাখতে। একই ভাবে জন্মসাল নাকি বদলানো হয়েছিল তাঁর বাবা কিম জং-ইলেরও।
বাইরে থেকে দেখে যাঁকে মনে হয় এমন শক্তিশালী, আদতে শারীরিক ভাবে তিনি নাকি খুবই দুর্বল! সব সময়ে ভোগেন গেঁটে বাতে! জ্বরজারিতেও ভোগেন খুব।
তিনি ব্রহ্মাণ্ডের চেয়েও বেশি রহস্যে মোড়া! দুর্জ্ঞেয়, অবোধ্য! কিম জং-উন। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান।
লোকে বলে, তাঁকে নিখুঁত ভাবে জানতে গেলেই ঠকতে হবে পদে পদে। কারণ, তিনি লোক ঠকাতেই ভালবাসেন, নিজে বাঁচতে আর ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে।
আরও পড়ুন- অক্টোপাস থেকে বিফ, এলাহি আয়োজন ট্রাম্প-কিমের মধ্যাহ্নভোজে
আরও পড়ুন- উঃ কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ‘শীঘ্রই’, কিমের সঙ্গে বৈঠকের পর বললেন ট্রাম্প
লোকে এও বলে, অন্য রকম না হলে নাকি কিম জং-উন হওয়া যায় না! আর কিম জং-উনের মতো ‘অন্য রকম মানুষ’ও নাকি আর একটা নেই!
রটনা, কিম বলেন বটে, তাঁর তিনটি সন্তান; কিন্তু তা নাও হতে পারে। সংখ্যাটা কয়েক গুণও হতে পারে! তার চেয়ে কম হওয়াটাই নাকি অসম্ভব!
সেনাবাহিনীর অভিবাদন নিচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন। পিয়ংইয়ংয়ে। -ফাইল চিত্র।
তবে তাঁর রাগ নিয়ে দ্বিমত নন প্রায় কেউই। তাঁর স্ত্রী তাঁর বিস্ফোরক রাগের আঁচ কতটা পেয়েছেন, পিয়ংইয়ংয়ের কমিউনিস্ট শাসনের লৌহ বেষ্টনী পেরিয়ে তা জানতে না পারা গেলেও, তাঁর কলেজের বান্ধবীরা অনেকেই বলেছেন, ‘বাপরে বাপ!’ আর সেটাও তাঁরা বলতে পেরেছেন, উত্তর কোরিয়া ছেড়ে অনেকটা দূরে থাকেন বলে।
কিমের সম্পর্কে আর একটা ব্যাপারে সকলেই একমত। তিনি শুধুই ‘ইয়েস’ শুনতে ভালবাসেন। ‘নো’ তাঁর নট পছন্দ! তাই তাঁর ওঠাবসা, চলাফেরার সব সময় তাঁকে ঘিরে রাখেন ‘ইয়েস ম্যান’রা!
কিমের সম্পর্কে আরও একটা ব্যাপারে মেলেনি কোনও পরস্পরবিরোধী মন্তব্য। এমনকী, তাঁর ইয়েস ম্যানরাও বলেন, তিনি ‘মিথ্যেবাদী’। কারণ, তিনি তাঁদেরও কখনও সত্যিটা বলেন না!
কিম তাঁর দীর্ঘ দিনের, ‘মন্ত্রণাদাতা’ পিসেমশাইকে বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়ে মেরেছিলেন। কারণ, মনে করেছিলেন, তাঁর ইয়েস ম্যানরা তাঁকে বেশি স্যালুট না দিয়ে তাঁর পিসেমশাইকে মান্য করছেন বেশি!
আরও পড়ুন- কিম জং উন কি সত্যিই রক্তলোলুপ শয়তান!
ঠাকুর্দা কিম ইল-সুং উত্তর কোরিয়ায় কমিউনিস্ট শাসনের শুধুই জন্মদাতা ছিলেন না, ছিলেন বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনেরও একটি মুখ। সেই ঠাকুর্দার পথকে বাতিল করতেও দেরি করেননি কিম জং-উন।
ঠাকুর্দা দেশের সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়ানোর সঙ্গে অর্থনীতির হাল ফেরাতেও উদ্যোগী হয়েছিলেন। আর কিম দেশের অর্থনীতির হাল ফেরানোর কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে রাজস্বের যত বেশি প্রতিরক্ষায় খরচ করা সম্ভব, করে গিয়েছেন। এখনও করে চলেছেন।
শুধুই নিন্দুকদের নির্বিচারে খুন করেছেন, এমন নয়, কেউ যদি তাঁর পছন্দের নকশা মেনে কিছু বানাতে না পেরেছেন, তাঁকেও শূলে চড়িয়েছেন কিম। পিংয়ইয়ং বিমানবন্দরকে ঢেলে সাজার জন্য কিম দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিখ্যাত আর্কিটেক্ট মা ওয়ন চুংকে। কিন্তু চুংয়ের কাজ পছন্দ হয়নি কিমের। তার পরেই রটে যায়, চুংকে মেরে ফেলেছেন কিম। অনেক পরে চুং আত্মপ্রকাশ করে জানান, তিনি জীবিতই আছেন।
পিয়ংইয়ংয়ে কিম জং-উন। -ফাইল চিত্র।
কিমের মাসি কো ইয়ং সুক হালে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর ভাইপো কিম ছোটবেলায় খুব বাস্কেটবল খেলতে ভালবাসতেন। রাতে ঘুমোতেনও বিছানায় বাস্কেটবল নিয়ে। কিন্তু ৮ বছর বয়স থেকেই তাঁকে শেখানো শুরু হয়, তাঁকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। তাই তাঁকে সব সময় সেনাদের উর্দি পরিয়ে রাখা হত। কিমের মায়ের ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়ার পরেই মাসি কো বুঝতে পারেন, কিমকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর আর কোনও রাস্তা খোলা থাকল না!
তবে কিমের বাবা কিম জং-ইল যেমন ক্ষমতায় আসার জন্য তাঁর বাবা কিম ইল-সুংকে দলে কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন, কিম জং-উন কিন্তু অতটা নির্দয় ভাবে তাঁর বাবাকে ক্ষমতার কুর্সি থেকে হঠিয়ে দেননি। বাবার কফিন নিয়ে প্রকাশ্যে হাউহাউ করে কেঁদেছিলেন কিম জং-উন।
তবে যখন রটে গেল তাঁর সৎ ভাই কিম জং-নাম বেশ জনপ্রিয় উত্তর কোরিয়ায়, তখনই তাঁকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন কিম জং-উন। গত বছর কিম জং-নামকে খুন হয়ে যেতে হয় নাটকীয় ভাবে, কুয়ালা লামপুরে। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে দুই মহিলা নার্ভ এজেন্ট ছুড়ে দেন কিমের সৎ ভাইয়ের মুখে। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
কিম জং-উন বিশ্বের সেই গুটিকয় মানুষের এক জন, আপাদমস্তক রহস্যে মোড়া যাঁর জীবন। যে জীবনের বেশির ভাগটাই অজানা। যেটুকু জানা, তার অনেকটাই মুখে মুখে ঘোরা ও বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়া রটনা।
শুধু কিমই নন, তাঁর বাবা কিম জং-ইলকে নিয়েও ছিল নানা রটনা। তাঁকে ‘হ্যামবার্গারের জনক’ বলা হত। কারণ, তিনি দাবি করেছিলেন, দুটো পাউরুটির মধ্যে মাংস পুরে হ্যামবার্গার নাকি তিনিই প্রথম বানিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন, উত্তর কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠুক। কিন্তু যে কোনও কারণেই তা হয়নি।
খড়ের গুঁড়ো খুব পুষ্টিকর বলে দুর্ভিক্ষের সময় মানুষকে তা খাওয়ার পরামর্শ দিযেছিলেন কিমের বাবা কিম জং-ইল। তাঁর দেশবাসীর অবশ্য তা পছন্দ হয়নি।
কিমের বাবাও নাকি সর্বত্র ঘুরতেন পোর্টেবল টয়লেট নিয়ে!
কিমের বাবা কিম জং-ইলের জীবনীতে লেখা আছে, তাঁর জন্ম হয়েছিল নাকি পাহাড়চূড়োয়। আর জন্মের পরেই একটা তারার জন্ম হয়েছিল আকাশে! আর তার পর আচমকাই শীত চলে গিয়ে দেশে বসন্ত এসেছিল! যদিও সরকারি তথ্য বলছে, কিম জং-ইলের জন্ম হয়েছিল ১৯৪১ সালে। সাইবেরিয়ার একটি গ্রামে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy