Advertisement
০৮ মে ২০২৪

দু’শো বছরে এই প্রথম, বড়দিনের প্রার্থনা বন্ধ নোত্র দামে

২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তাই প্রতি বারের মতো এ বার আলো জ্বলবে না ৮৫৫ বছরের প্রাচীন এই গির্জার পুড়ে যাওয়া বিরাট হলে।

সংবাদ সংস্থা
প্যারিস শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
Share: Save:

দুই বিশ্বযুদ্ধও থামাতে পারেনি নোত্র দামের বড়দিনের উৎসব। কিন্তু এপ্রিলের ভয়াবহ আগুনের পরে এ বার ক্রিসমাসের প্রার্থনা বন্ধ রাখা হচ্ছে প্যারিসের এই ঐতিহাসিক গির্জাটিতে। গত দু’শতাব্দীতে যা এই প্রথম!

২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তাই প্রতি বারের মতো এ বার আলো জ্বলবে না ৮৫৫ বছরের প্রাচীন এই গির্জার পুড়ে যাওয়া বিরাট হলে। যদিও গির্জার রেকটর প্যাট্রিক শোভে জানিয়েছেন, নোত্র দামের ‘আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখতে ক্রিসমাস উপলক্ষে প্রার্থনার আয়োজন করেছেন তাঁরা। এ বারের জমায়েত হবে নোত্র দামের এক মাইলের মধ্যে অন্য একটি গথিক গির্জায়। প্যাট্রিক এ-ও জানিয়েছেন, সেখানে নোত্র দামের আদলেই উপাসনার জন্য কাঠের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘‘নোত্র দামের বাইরে এ বার আমাদের প্রার্থনা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই কোনও একটি চিহ্ন দিয়ে নোত্র দামকে আমাদের সঙ্গে জুড়ে রাখার চেষ্টা করছি। ফরাসি বিপ্লবের পরে এই প্রথম বড়দিনের রাতে কোনও প্রার্থনা হবে না গির্জাটিতে।’’ বহু ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও গত দু’শো বছরের ইতিহাসে বড়দিনের ৎপ্রার্থনা বন্ধ থাকেনি নোত্র দামে। শুধুমাত্র ১৭৯০ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময়ে ক্যাথলিক-বিরোধী শক্তির তাণ্ডবে বন্ধ হয়েছিল বড়দিনের জমায়েত।

এ বছর ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তাই প্যাট্রিকের নেতৃত্বে প্রার্থনা হবে স্যাঁ-জার্ম্যাঁ লোক্সেরোয়া গির্জায়। হাজার হাজার মানুষের সমাগমের মধ্যে বেজে উঠবে প্রার্থনাসঙ্গীত। তাতে অংশ নেওয়ার কথা নোত্র দামের নিজস্ব কয়েকটি গায়কদলেরও। সে সময়ে ক্যাথিড্রালের ‘আইকনিক’ গথিক কাঠামোর ছবি ভেসে উঠবে পর্দায়।

এ বছর ১৫ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় নোত্র দাম। ভেঙে পড়েছিল গির্জার ধাতব মিনারের চূড়াটি। বহু মূল্যবান শিল্পকর্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায় আগুনে। তার পরেই কর্তৃপক্ষ জানান, স‌ংস্কার কাজের জন্য আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ক্যাথিড্রালটি। এক মাস আগে ফরাসি শিল্প মন্ত্রক জানিয়েছিল, নোত্র দামের সংস্কারের

জন্য এখনও পর্যন্ত একশো কোটি ইউরো জোগাড় হয়েছে। বিপর্যয়ের পরে ফরাসি ধনকুবেররা এই গির্জায় পুনর্নিমাণে মোটা অঙ্কের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি বলেই অভিযোগ।

নোত্র দামে কেন আগুন লেগেছিল তা দুর্ঘটনার ন’মাস বাদে এখনও স্পষ্ট হয়নি। তদন্তকারীরা প্রথম থেকেই বলছেন, এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে গাফিলতিই দায়ী। সিগারেটের ফুলকি বা বৈদ্যুতিক গোলযোগ— যে কোনও কারণেই অসাবধানতাবশত আগুন লেগে যেতে পারে বলে দাবি তাঁদের।

এপ্রিলের সেই অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই গির্জার কাজকর্ম, প্রার্থনা অস্থায়ী ভাবে চলছে স্যাঁ-জার্ম্যাঁ লোক্সেরোয়া গির্জাটিতেই। দ্বিতীয় এই গির্জাটি নোত্র দামের কাছেই লুভ্‌র-এর ঠিক পাশে। এক সময় এটি ছিল ফরাসি রাজাদের প্রার্থনার জায়গা। কারণ তাঁরা মূলত থাকতেন লুভ্‌র-এর আশপাশেই। সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি রবিবার নোত্র দামে নিয়মিত আসতেন যাঁরা, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন স্যাঁ-জার্ম্যাঁ গির্জার প্রার্থনায়।

নোত্র দামে ছিল মোট ১৬০টি কয়্যার স্কুল। সদস্যদের বয়স ছিল ছয় থেকে তিরিশ। ক্যাথিড্রালের এক হাজার বার্ষিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে অংশ নিত সেখানকার গায়ক-গায়িকারা। ক্রিসমাসের প্রার্থনার রাত তাঁদের কাছে ছিল বিশেষ ভাবে প্রিয়। এই সময় প্রত্যেক গায়ক-গায়িকা অংশ নিত সমবেত সঙ্গীতে। নোত্র দামের এক গায়িকার আফসোস, গত বার বড়দিনের সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আগের বার অংশ নিতে পারিনি। এ বার যদি পারতাম।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas Notre Dam Paris
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE