Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

শুধু করোনা নয়, লড়াই অবসাদের বিরুদ্ধেও

২০১৮ সালে আমেরিকায় ৪৮,৩৪৪ জন আত্মহত্যা করেছেন, অর্থাৎ গড়ে প্রত্যেক দিন ১৩২ জন।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
বস্টন শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৩:৩৬
Share: Save:

কোভিড-জর্জরিত এই পৃথিবীতে সাধারণ মানুষ এখন নানা ভয় ও আশঙ্কার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। সংক্রমণের আশঙ্কা, মৃত্যু, বেকারত্ব, এই সব কিছু নিয়ে আশঙ্কা ও উদ্বেগের ফলে অনিশ্চয়তার একটা টানেলের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বিশ্বের নানা দেশের মানুষ। সেই সুড়ঙ্গের শেষ দেখা যাচ্ছে না সে ভাবে। আমেরিকাও এর ব্যতিক্রম নয়।

এই অনিশ্চিত সময়ে দাঁড়িয়ে ফিরে যাচ্ছি এক বছর আগের একটা রাতে। ১৯ জুন, ২০১৯। রাত্রি ৮.৩০।

বস্টনের আকাশে তখনও আলো। বস্টন কলেজের অ্যাথলেটিক্স ফিল্ডে দাঁড়িয়ে আছি আমরা তিন বন্ধু, আমাদের আশে পাশে হাজার হাজার মানুষ, সামনে একটা স্টেজ, সেখানে কুড়ি-পঁচিশ জন মানুষ। এঁরা সকলে এসেছেন আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। স্টেজে যাঁরা আছেন, একে একে বলছেন তাঁদের কথা, যাঁদের জন্য তাঁরা ওই সন্ধেয় এসেছেন, আর জ্বালিয়ে দিচ্ছেন একটা একটা করে মোমবাতি। আমাদের সামনে একটা গোটা রাত্রি, যে রাতে কয়েক হাজার মানুষ বস্টনের রাস্তায় ষোলো মাইল হাঁটবেন ‘আউট অব দ্য ডার্কনেস ওভারনাইট ওয়াক’— আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন সংস্থার উদ্যোগে।

প্রত্যেক বছরই আমেরিকার কোনও এক বড় শহরে এই ফান্ডরেজ়িং ইভেন্টের আয়োজন হয়, প্রত্যেক বছর হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন, হাঁটেন সারা রাত, যাঁরা চলে গিয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করে। যাতে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা ছড়িয়ে পড়তে পারে সমস্ত স্তরে।

আরও পড়ুন: ফের সংক্রমণ! কোয়রান্টিনে কড়া আর্ডের্ন

যাতে মানসিক অবসাদে তলিয়ে যাওয়া মানুষদের কাছে পৌঁছতে পারে সাহায্য। শুধু সরকারি বাজেটে সেটা সম্ভব হয় না। সেন্টার্স ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে আমেরিকায় ৪৮,৩৪৪ জন আত্মহত্যা করেছেন, অর্থাৎ গড়ে প্রত্যেক দিন ১৩২ জন। ১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সালে আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৩৫%। আর ২০২০-র এই দুঃসময়টায়, যখন আমরা কোভিড-১৯-এর কারণে বাড়িতে আটকে, চাকরি চলে যাচ্ছে, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অসুস্থতার ভয়ে আতঙ্কিত, পরিবার ও বন্ধুদের থেকে দূরে, নজিরহীন ভাবে বেড়ে যাচ্ছে মানসিক উদ্বেগ, মানসিক অবসাদ। হারিয়ে যাচ্ছে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ। একটি প্রথম সারির মার্কিন দৈনিকে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নিবন্ধে পড়লাম, মারাত্মক মানসিক উদ্বেগে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে ৭০০%। আমার মতো যাঁদের কর্মক্ষেত্র স্কুল, তাঁরা জানেন কোনও পড়ুয়া, যাদের মানসিক অবসাদ খুব বেশি, স্কুলে তাদের লম্বা অনুপস্থিতি কতটা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: ৯০০ অ্যাকাউন্ট সরাল ফেসবুক

জানতে পারলাম, এ বছর ‘আউট অব দ্য ডার্কনেস’ অনুষ্ঠানটি হবে ২০-২১ জুন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠান হবে ‘ভার্চুয়াল’। আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে, সংক্রমণ রুখতে এ বছর দল বেঁধে সারারাত ধরে হাঁটা সম্ভব নয়। তাই ইচ্ছুক অংশগ্রহণকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে, তাঁরা যেন নিজেদের নাম নথিভুক্ত করে ১ থেকে ২৫ জুনের মধ্যে নিজেদের হাঁটা, দৌড়নো বা সাইকেল চালানোর বিষয়ে একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য পাঠান। তার পরে ২০-২১ জুন সংস্থার ওয়েবসাইটে ও বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সকলে মিলে তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবেন। পাশে থাকার বার্তা দেবেন একে-অপরকে।

মানসিক অবসাদের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তো আমরা তো সকলেই সহযোদ্ধা।

(লেখক স্পেশাল এডুকেটর)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus USA Mental Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE