Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রী খুনে ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড বাংলাদেশে

অভিযোগ, ফেনির একটি মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে তাঁর আনা ধর্ষণের অভিযোগ তুলে না নেওয়ায় নুসরত নামে ১৯ বছরের ওই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে (সাদা জামা) আদালত থেকে বার করে আনা হচ্ছে।  বাংলাদেশের ফেনিতে। রয়টার্স

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে (সাদা জামা) আদালত থেকে বার করে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশের ফেনিতে। রয়টার্স

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফেনি শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৫১
Share: Save:

মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরত জহান রফিকে পুড়িয়ে খুনের ঘটনায় ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিল বাংলাদেশের আদালত। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মাত্র ৬২ দিনের মাথায় আজ চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা করে ফেনির নারী ও শিশু নির্যাতন বিরোধী আদালত। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক অপরাধীকে এক লক্ষ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা নুসরতের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে আগামী সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আবেদন জানাতে পারবে আসামিরা।

অভিযোগ, ফেনির একটি মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে তাঁর আনা ধর্ষণের অভিযোগ তুলে না নেওয়ায় নুসরত নামে ১৯ বছরের ওই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। সরকারি আইনজীবী হাফিজ আহমেদ বলেন, ‘‘এই রায় প্রমাণ করল বাংলাদেশে খুন করে কেউ রেহাই পাবে না। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়।’’

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৭ মার্চ ওই শিক্ষক নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে নুসরতকে ধর্ষণ করে। নুসরতের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়। এর পর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানা ভাবে চাপ বাড়াতে থাকে অভিযুক্ত। তাতে কাজ না হওয়ায় গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হল থেকে বার করে ওই মাদ্রাসারই ছাদে নিয়ে গিয়ে নুসরতের হাত-পা বেঁধে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় পাঁচ জন। দেহের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল ওই ছাত্রীর। এই ঘটনার চার দিন বাদে নুসরতের মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

মহম্মদ ইকবাল নামে এক পুলিশ কর্তা জানান, নুসরতের মৃত্যুর পরে প্রাথমিকভাবে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যাদের অনেকেই ওই ছাত্রীর সহপাঠী। তারা স্বীকার করেছে, প্রধানশিক্ষক মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাদের নুসরতের উপরে চাপ বাড়াতে বলেছিল। কিন্তু ওই ছাত্রী পিছিয়ে যেতে রাজি না হলে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। ইকবাল জানান, ওই প্রধানশিক্ষকের পরিকল্পনা

ছিল বিষয়টি আত্মহত্যা বলে চালানোর। কিন্তু জ্বলন্ত অবস্থায় নুসরত ছাদ নীচে নেমে আসায় প্রকাশ্যে আসে যাবতীয় ঘটনা।

এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে বাংলাদেশ জুড়ে। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে মাত্র ২ মাসের মধ্যে শেষ হয় বিচারপ্রক্রিয়া। আইনজীবীরা বলছেন, এত দ্রুত কোনও মামলা নিষ্পত্তির নজির বাংলাদেশে বিরল। এই ঘটনার পরেই শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা রুখতে ২৭ হাজার স্কুলে

কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সরকার।

আজ সকালে সাড়ে দশ’টা নাগাদ কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ১৬ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে। মূল অভিযুক্ত ওই মাদ্রাসা শিক্ষকের উপরে চড়াও হয়ে মরধর করে কয়েকজন। রায় জানার পরে শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা

প্রকাশ করেছেন নিহতের বাবা-মা। রায় ঘিরে উত্তজনা সামাল দিতে সোনাগাজি ও ফেনিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nusrat Jahan Rafi Murder Case Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE