ফাইল চিত্র।
বচসা-হাতাহাতির কথা বলে প্রথমে একটা ‘দুর্ঘটনার তত্ত্ব’ খাড়া করার চেষ্টা হয়েছিল। তবে বাড়তে থাকা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি বিদেশমন্ত্রী আদেল আল-জ়ুবের এ বার জানালেন, ইস্তানবুলে সৌদি কনসুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে খুন ‘দুর্ভাগ্যজনক এবং বড়সড় ভুল’। কিন্তু ভুলটা করল কারা! এ বার আরও সরাসরি রাজ পরিবারকে আড়াল করার চেষ্টা ধরা পড়ল মন্ত্রীর বয়ানে। জ়ুবের স্পষ্ট জানালেন, খাশোগিকে খুনের নির্দেশ যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন দেননি।
গত কাল এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও রকম অনুমতি ছা়ড়া নিজেদের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে এই ঘটনাটা যারা ঘটাল, তাদের কাউকে ছা়ড়া হবে না। সাংবাদিকের দেহ কোথায়, সরকার জানে না। যুবরাজ কিংবা সৌদি রাজার সঙ্গে ওই অপারেশনের যে যোগ খোঁজার চেষ্টা চলছে, সেটাও অমূলক।’’ আজই সৌদি যুবরাজ ফোনে সমবেদনা জানান খাশোগি-পুত্রকে। সাংবাদিকের পরিবারকে শোকবার্তা দিয়েছেন রাজা সলমনও।
চিঁড়ে তবু ভিজছে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট খানিক সুর নরম রাখলেও, খাশোগি-তদন্ত নিয়ে রিয়াধের উপর চাপ বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটনের একটা বড় অংশ। খাশোগি-খুনের কড়া নিন্দা করে সৌদি রাজ পরিবারকে স্বস্তি দিচ্ছে না ইউরোপের অন্যতম প্রধান তিন শক্তিধর দেশ ব্রিটেন-ফ্রান্স-জার্মানিও। আর তুরস্ক তো প্রথম থেকেই নাছো়ড়বান্দা। আঙ্কারা আজ জানিয়েছে, ফোনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে খাশোগি-খুন নিয়ে কথা হয়েছে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এর্দোয়ানের। দু’জনেই চাইছেন আসল সত্যিটা বেরিয়ে আসুক। এত দিন কিছু না বললেও, আজ তোপ দেগেছেন এর্দোয়ান নিজেও। জানিয়েছেন, কাল মঙ্গলবার, পার্লামেন্টে দলীয় বৈঠকে অনেক কিছু ফাঁস করে দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক কিছুই স্পষ্ট নয়। রিয়াধ থেকে ১৫ জনের একটা হিট-স্কোয়াড এল ইস্তানবুলে, অথচ গ্রেফতার করা হল ১৮ জনকে! সব হিসেব পরিষ্কার করে দেব কাল।’’
২ অক্টোবর খাশোগিকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল তুর্কি শহর ইস্তানবুলের সৌদি কনসুলেটে ঢুকতে। তুরস্ক তখন থেকেই বলে আসছিল, সৌদি রাজ পরিবারের সমালোচক হওয়ার কারণেই খাশোগিকে খুন করেছে সে দেশের সরকার। গোড়ায় সব অভিযোগ ও়ড়ালেও গত শুক্রবার সৌদি প্রথম বার খাশোগিকে খুনের কথা স্বীকার করে। তার পর থেকে সৌদি প্রশাসন ও রাজ পরিবারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমে বেড়েই চলেছে। কূটনীতিকদের দাবি, এর জেরেই রিয়াধের কোনও মন্ত্রী প্রথম বার মুখ খুললেন।
সৌদি বিদেশমন্ত্রীর কথায়, ‘‘খুনটা তো ভুল বটেই। পরে প্রমাণ লোপের যে চেষ্টা হয়েছিল, সেটা আরও ভয়াবহ।’’ কিন্তু সৌদি প্রশাসন বা রাজ পরিবার এত বড় কাণ্ডের কিছুই জানতেন না? জ়ুবেরের দাবি, গোয়েন্দা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও কিছু জানতেন না।
যদিও তুরস্কের সরকারপন্থী এক সংবাদমাধ্যম আজ দাবি করেছে, খাশোগিকে খুনের পরে সে দিন চারটে ফোন যায় সৌদি যুবরাজের অফিসে। মাহেব মুতরেব নামে কনসুলেটের এক অফিসার আমেরিকার একটি নম্বরেও ফোন করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ওই দ্বিতীয় নম্বরটি যুবরাজের ভাই রাজকুমার খালেদের। যিনি কর্মসূত্রে আমেরিকায় সৌদি রাষ্ট্রদূত হলেও সে দিন রিয়াধে ছিলেন। এবং ইস্তানবুল কনসুলেটে ওই ঘটনার পর পরই আমেরিকায় চলে যান।
ঠিক কী ঘটেছিল কনসুলেটে? সৌদি বিদেশমন্ত্রীর দাবি, সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সৌদি কর্মকর্তা যদিও কাল জানিয়েছিলেন, কী ভাবে খুনের পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞকে দিয়ে প্রমাণ সাফ করা হয়েছিল। কনসুলেটের চোখে ধুলো দিতে কী ভাবে এক জন খাশোগিরই পোশাক পরে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। আজ মার্কিন এক সংবাদমাধ্যম কনসুলেটের সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস করে দেখিয়েও দিয়েছে মুস্তাফা আল-মাদানি নামে খাশোগির সেই ‘বডি ডাবল’কে।
কিন্তু খাশোগির ‘বডি’ কোথায়? উত্তর নেই ঘটনার কুড়ি দিন পরেও। কাল ওই সৌদি কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, কাপড়ে মুড়ে কনসুলেটের গাড়িতেই দেহ পাচার করে দেওয়া হয়েছিল সে দিন। তুরস্ক এ দিকে আজও দাবি করেছে, নির্যাতনের সময়ে প্রথমে আঙুল কাটা হয় সাংবাদিকের। পরে ধড়-মাথা আলাদা করে করেগান শুনতে শুনতে খাশোগির দেহ মোট ১৫ টুকরো করেন স্কোয়াডের এক সদস্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy