Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
International news

লন্ডন ব্রিজে গাড়ি নিয়ে হামলা, নিহত অন্তত ৭, খতম ৩ জঙ্গিও

এক মাসও পেরলো না। ফের জঙ্গি হানায় রক্তাক্ত হল ব্রিটেন। গাড়ি দিয়ে পিষে, ছুরি দিয়ে হামলা চালিয়ে অন্তত সাত জনকে খুন করল জঙ্গিরা। আহত অন্তত ৩০ জন। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তিন জঙ্গিরও। চলতি মাসেই ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন।

লন্ডন ব্রিজে হামলার পর গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ।

লন্ডন ব্রিজে হামলার পর গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০৮:৩৭
Share: Save:

এক মাসও পেরলো না। ফের জঙ্গি হানায় রক্তাক্ত হল ব্রিটেন। গাড়ি দিয়ে পিষে, ছুরি দিয়ে হামলা চালিয়ে অন্তত সাত জনকে খুন করল জঙ্গিরা। আহত অন্তত ৪৮ জন। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে তিন জঙ্গিরও।

শনিবারের সন্ধে। অনেকেই তখন ক্লাব ও শপিং মলগুলিতে কেনাকাটায় ব্যস্ত। জমজমাট লন্ডন ব্রিজ এবং বরো মার্কেট চত্বর। রাত তখন প্রায় সাড়ে ১০টা। দুধ সাদা রঙের একটি ভ্যানকে ঝড়ের গতিতে ছুটে আসতে দেখা যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগে লন্ডন ব্রিজের ফুটপাতে উঠে পড়ে ভ্যানটি। ফুটপাতে তখন অসংখ্য মানুষ। চোখের পলকে ভ্যানটি পিষতে থাকে পথচারীদের। তার পরই ব্রিজের রেলিংয়ে গিয়ে ধাক্কা মেরে আটকে যায় গাড়িটি। তখন লন্ডন ব্রিজের পরিবেশ আর্তনাদে ও চিত্কারে ভরে উঠেছে। যে যে দিকে পেরেছেন প্রাণভয়ে পালিয়েছেন। কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী এই ঘটনায় দায় স্বীকার না করলেও। হামলার কৌশল এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে ঘটনার বিবরণ জেনে এটাকে জঙ্গি হামলা বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-ও এটাকে জঙ্গি হামলা বলেই জানিয়েছেন। চলতি মাসেই ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন এবং এই মুহূর্তে ব্রিটেনের বিভিন্ন ভেন্যুতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেলা চলছে। দু’সপ্তাহেরও কম সময়ে পর পর দু’টি জঙ্গি হামলা প্রশাসনের কপালের ভাঁজ অনেকটাই চওড়া করল।

আরও পড়ুন: ম্যানচেস্টার বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ২২, দায় নিল আইএস

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়ি থেকে নেমে ছুরি নিয়ে তিন জঙ্গি পার্শ্ববর্তী বরো মার্কেটে ঢুকে পড়ে। তাদের হাতে বড় বড় ছুরি ছিল। এলোপাথারি ছুরি চালিয়ে বেশ কিছু মানুষকে ক্ষতবিক্ষত করে। তারপর মার্কেটের মধ্যে থাকা একটি পাব-এ ঢুকতে চেষ্টা করে তারা। এক প্রত্যক্ষদর্শী জেরার্ড ভাওলস জানান, গাড়িটি রেলিংয়ে গিয়ে ধাক্কা মারতেই তিন ব্যক্তি নেমে ছুরি নিয়ে হামলা চালায় পথচারীদের উপর। ব্রিজের কাছেই বরো মার্কেটের একটি পাবে কাজ করছিলেন ফ্যাবিও লামাস। বলেন, “কাজ করতে করতেই হঠাত্ শুনতে পেলাম কেউ চিত্কার করে বলছেন, ছুরি..ছুরি..ছুরি। প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। বাইরের দিকে তাকাতেই দেখি তিন জন ছুরি হাতে মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তার পরই বেশ কয়েকটা গুলির শব্দ।” জেরার্ড আরও জানান, এক তরুণীকে ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করার আগে হামলকারীদের মধ্যে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা আল্লার জন্য।’


লন্ডন ব্রিজে হামলার পর পুলিশের টহলদারি।

বরো মার্কেটের আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলাকারীরা মার্কেটের একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকে এক মহিলাকে এবং রেস্তোরাঁর ম্যানেজারের উপর ছুরি দিয়ে হামলা চালায়। রেস্তোরাঁর কর্মীরা হামলাকারীদের দিকে বোতল, চেয়ার টেবিল ছুড়ে মারেন। বাধা পেয়ে হামলাকারীরা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। অন্যান্য শনিবারের মতো এ দিনও বরো মার্কেটে কিছু কেনাকাটার জন্য গিয়েছিলেন রেলওয়ে কর্মী ম্যাট কুপার। তিনি বলেন, “কফি শপে বসে সবে মাত্র কাপে চুমুক দিয়েছি। হঠাত্ দেখি চিত্কার করে প্রাণপণে আমার দিকে ছুটে আসছে। তার পরই কয়েকটা গুলির শব্দ। মনে হয় ১২ রাউন্ড গুলি চলেছে। পুলিশকে বলতে শুনলাম পালান এখান থেকে। আমিও সবার সঙ্গে ছুট লাগালাম।”


শনিবার রাতে হামলার পর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মানুষদের।

লন্ডনে এ দিনের হামলার কারণে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করে দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আপত্কালীন পরিস্থিতে বৈঠক করেন। লন্ডনের হামলার তীব্র নিন্দা করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁ। হামলার পরই লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে হাই অ্যালার্ট জারি করে দেওয়া হয়।

ম্যানচেস্টারে পপ গায়িকা আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে বিস্ফোরণের দু’সপ্তাহের মধ্যেই এই হামলা কপালে ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের। সে দিনের বিস্ফোরণে শিশু-সহ ২২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। শনিবার রাতের হামলার দায় অবশ্য এখনও কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী স্বীকার করেনি। তবে ব্রিটিশ পুলিশ মনে করছে এটা জঙ্গি হামলা। শনিবারের রাতের এই হামলা ২০১৬-র ১৪ জুলাইয়ের উত্সব চলাকালীন ফ্রান্সের নিসে গাড়ি নিয়ে হামলার স্মৃতিকে উস্কে দিল। এ দিন রাতে লন্ডনের হামলাও অনেকটা একই কায়দায়।

২০১৬-র ১৪ জুলাই বাস্তিল দিবসের দিন উত্সবমুখর ছিল ফ্রান্সের নিস শহর। ওই দিন রাতে সাদা রঙের বিশাল বড় ট্রাক নিয়ে উত্সবে যাওয়া মানুষের উপর হামলা চালায় এক জঙ্গি। ট্রাকের চাকায় পিষতে পিষতে নিয়ে যায় মানুষকে। ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৮৪ জন। আহতের সংখ্যা ছিল দুশোরও বেশি। হামলাকারী ছিল তিউনিসিয়ার বংশোদ্ভূত ফ্রান্সের বাসিন্দা মোহামেদ লাহুআইয়েজ বুহলেল। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলার দায় স্বীকার করে আইএস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE