Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোজগার কমছে, কোণঠাসা আইএস

দেশে-দেশে আস্তানা হারানোয় রোজগার পড়তির দিকে জঙ্গি গোষ্ঠীটির। যেমন, ইরাকে আইএসের শক্ত ঘাঁটি মসুলের অনেকটাই এখন আমেরিকা সমর্থিত জোটশক্তির দখলে। তার উপর, গত মাসের ৎশেষেই মসুলের আল নুরি মসজিদ দখল করে ইরাকের সরকারি বাহিনী।

নিয়ন্ত্রণ: কয়েক দিন আগেই আইএসের হাত থেকে আল নুরি মসজিদের দখল নিয়েছে ইরাকি সেনাবাহিনী। সেখানেই জাতীয় পতাকা হাতে ছবি তুলতে ব্যস্ত ইরাকি সেনারা। রবিবার মসুলে। ছবি: এএফপি

নিয়ন্ত্রণ: কয়েক দিন আগেই আইএসের হাত থেকে আল নুরি মসজিদের দখল নিয়েছে ইরাকি সেনাবাহিনী। সেখানেই জাতীয় পতাকা হাতে ছবি তুলতে ব্যস্ত ইরাকি সেনারা। রবিবার মসুলে। ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৭
Share: Save:

ইরাক থেকে সিরিয়া— রাজত্ব হারাচ্ছে ইসলামিক স্টেট। দখলে থাকা এলাকাগুলি থেকে নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় এত দিন তেল বা জমির উপরে কর বসিয়ে যে টাকা আদায় হতো, তা আর পাচ্ছে না জঙ্গি সংগঠনটি। যার জেরে গত দু’বছরে প্রায় ৮০ শতাংশ আয় কমেছে আইএসের। একটি আন্তর্জাতিক তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৫ সালে এই সংগঠনের মাসিক আয় ছিল ৮ কোটি ডলারের বেশি। যা এই বছর এসে ঠেকেছে দেড় কোটিতে!

কেন এই আর্থিক ধস?

দেশে-দেশে আস্তানা হারানোয় রোজগার পড়তির দিকে জঙ্গি গোষ্ঠীটির। যেমন, ইরাকে আইএসের শক্ত ঘাঁটি মসুলের অনেকটাই এখন আমেরিকা সমর্থিত জোটশক্তির দখলে। তার উপর, গত মাসের ৎশেষেই মসুলের আল নুরি মসজিদ দখল করে ইরাকের সরকারি বাহিনী। যার জেরে আরও চাপে আইএস। প্রসঙ্গত, তিন বছর আগে এই মসজিদ থেকে ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছিলেন আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি। কিন্তু আইএস যে কোণঠাসা, সম্প্রতি এই মসজিদ উড়িয়ে তার প্রমাণই দিয়েছে জঙ্গিরা। একই হাল সিরিয়াতে। বাশার আল আসাদ সরকার ও মার্কিন সেনার লাগাতার বিমান হামলায় সে দেশেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জঙ্গি দলটি। বিমান হানায় বহু তেল কারখানা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকেও আয়ের সুযোগ হারিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন: গাড়ি-বোমা ফেটে রক্তাক্ত দামাস্কাস

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আইএস সংগঠনটি একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের মতোই চলে। তাদের আলাদা শরিয়ত আদালত রয়েছে। রয়েছে স্কুল, এমনকী আলাদা মুদ্রাও। এই খরচ চালানোর জন্য নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলি থেকে কর আদায় করে আইএস। ওই এলাকাগুলিতে থাকা তৈল শোধনাগারগুলি থেকেও মোটা টাকা আসে জঙ্গিদের হাতে। আন্তর্জাতিক তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে, বর্তমানে আইএসের হাতে রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আইএস জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল ৩৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি অঞ্চল। সংস্থার এক বিশেষজ্ঞ লুডোভিকো কার্লিনো বলেছেন, ‘‘জমি হারানোই আইএসের কোষাগারে টান পড়ার পিছনে বড় কারণ। ইরাকে মসুলের মতো জনবহুল শহর ক্রমে হাতছাড়া হচ্ছে জঙ্গিদের। পাশাপাশি সিরিয়ার রাকা ও হোমসের মতো তেল সমৃদ্ধ প্রদেশগুলি থেকেও মোটা অঙ্কের লাভের সুযোগ কমছে।’’ লন্ডনের কিংগস কলেজের তরফে একটি সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, গত এক বছরে আইএসের আয় অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।

এ ছাড়া, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের থেকেও কর আদায়ের সুযোগ কমায় পড়তির দিকে তাদের রোজগার। বন্ধ হতে বসেছে চোরাচালান বা অন্যান্য দুর্নীতিমূলক পথে আয়ের উৎসও। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে সরকারি কর্মীরা যে বেতন পেতেন, তাতেও এক সময় ভাগ বসাত জঙ্গিরা। পরে অবশ্য আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলিতে বেতন দেওয়াই বন্ধ করে দেয় ইরাক সরকার। কোষাগারে ঘাটতির এটাও একটা বড় কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE