Advertisement
০২ মে ২০২৪

ক্যামেরনের কুর্সিতে বসছেন থেরেসা-ই

দু’দিন আগেই প্রতিদ্বন্দ্বীর সন্তানহীনতাকে নিজের ‘ইউএসপি’ বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য নিজের ‘যোগ্যতা’ প্রমাণ করতে গিয়ে আন্দ্রিয়া লিডসম বলেছিলেন, ‘‘এই পদের জন্য আমিই উপযুক্ত। কারণ আমি এক জন মা।

শাড়িতে থেরেসা। বছর পাঁচেক আগে এক অনুষ্ঠানে।- ফাইল চিত্র

শাড়িতে থেরেসা। বছর পাঁচেক আগে এক অনুষ্ঠানে।- ফাইল চিত্র

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৫
Share: Save:

দু’দিন আগেই প্রতিদ্বন্দ্বীর সন্তানহীনতাকে নিজের ‘ইউএসপি’ বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য নিজের ‘যোগ্যতা’ প্রমাণ করতে গিয়ে আন্দ্রিয়া লিডসম বলেছিলেন, ‘‘এই পদের জন্য আমিই উপযুক্ত। কারণ আমি এক জন মা। থেরেসা মা নন, ওঁর কোনও সন্তান নেই। তাই দেশ চালানোর জন্য যে যোগ্যতাটা লাগে, সেটা আমার থেকে কিছুটা হলেও ওঁর কম।’’ খবরের কাগজকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারের পরে বিতর্ক ছড়াতে সময় লাগেনি।

তিন দিনও কাটল না। এর মধ্যেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য রাস্তা ছেড়ে দিলেন আন্দ্রিয়া। আজই জানিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকে নিজের নাম তুলে নিচ্ছেন তিনি। সেই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্যই এই সিদ্ধান্ত কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি আন্দ্রিয়া। শুধু বলেছেন, ‘‘একটা শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সরকার পরিচালনার গুরুভার আমি নিতে পারব না বলেই মনে হয়। অত সমর্থনই আমার নেই।’’

তাঁর এই ঘোষণার পরে একটা ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ডেভিড ক্যামেরনের পরে স্বরাষ্ট্রসচিব থেরেসা মে-ই হচ্ছেন পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে এ বার থাকতে আসছেন দেশের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯০-এর ২২ নভেম্বর পদত্যাগ করেছিলেন দেশের একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। তার পর দু’দশক পেরিয়ে গিয়েছে। আর কোনও মহিলা প্রধানমন্ত্রী পায়নি ব্রিটেন। এ বার থেরেসা সেই সুযোগই পেতে চলেছেন। আন্দ্রিয়ার ওই বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে প্রথমে মুখ না খুললেও সন্তানহীনতার যন্ত্রণা তাঁকে কতটা কষ্ট দেয়, তা পরে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন থেরেসা।

প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে যে এ বার কোনও মহিলা বসতে চলেছেন, তা অবশ্য দিন কয়েক আগেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার কনজারভেটিভ মন্ত্রীদের অভ্যন্তরীণ ভোটে সব চেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছিলেন থেরেসাই। ১৯৯টি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর পিছনেই ছিলেন আর এক কনজারভেটিভ নেত্রী, আন্দ্রিয়া। লন্ডনের প্রাক্তন মেয়র বরিস জনসন-সহ মোট ৮৪ জনের ভোট পেয়েছিলেন ব্রিটেনের জুনিয়র শক্তিমন্ত্রী। তৃতীয় স্থানে ছিল আর এক কনজারভেটিভ নেতা, মাইকেল গোভের নাম। নিয়ম মেনে প্রথম দুই প্রার্থীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল এর পর। ব্রেক্সিটে ‘লিভ’পন্থী আন্দ্রিয়া লিডসম এবং ‘রিমেন’পন্থী থেরেসা মে। ক্যামেরনের দায়িত্ব সামলানোর কথা ছিল এঁদের দু’জনের মধ্যে এক জনের। সেই মতো ভোটের দিনও ধার্য হয়ে যায়। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। ১৯২২ সদস্যের কনজারভেটিভ কমিটির ভোটে ঠিক হওয়ার কথা ছিল দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম।

কিন্তু আজ সকালে আন্দ্রিয়ার এই আচমকা ঘোষণা সেই সব হিসেব গোলমাল করে দেয়। বিকেলের দিকে ক্যামেরন ঘোষণা করেন, আগামী কাল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক করবেন তিনি। বুধবার, ১৩ তারিখ বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে রানির কাছে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দেবেন তিনি। ক্যামেরন বলেছেন, ‘‘থেরেসার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন থাকবে।’’ আসলে তাঁর বিরুদ্ধে যতই বিরূপ মন্তব্যের ঝড় উঠুক না কেন, থেরেসা যে অনেক বেশি সমর্থন পেতে চলেছেন, তা বুঝতে পারছিলেন অতি বড় আন্দ্রিয়া-ভক্তও।

শপথ নেওয়ার পরেই ইইউ-এর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ছাড়াছাড়ি প্রক্রিয়া শুরু করবেন থেরেসা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বলছে, ভাবী প্রধানমন্ত্রীর সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। ওয়েস্টমিনস্টারে অবশ্য বলা হচ্ছে কাজটা ততটাও কঠিন হবে না। কারণ আঙ্গেলা মের্কেল বা ফ্রাসোঁয়া ওলাদেঁর মতো ইইউ নেতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে থেরেসার।

ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনের রাজনীতি কেমন সামলাবেন থেরেসা? টেমস-পারে জল্পনা শুরু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

theresa may Britain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE