Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘বাবা সাজার খেলা’য় ভরসা হলিউডি সংলাপ

মেক-আপ ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সংলাপটা একবার ঝালিয়ে নিলেন তাকাশি। আর কিছু ক্ষণ পরেই শুরু হয়ে যাবে সেই নাটকটা, গত কয়েক মাস ধরে তিনি যার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে চলেছেন।বাবা সাজার নাটক।

— প্রতীকী ছবি।

— প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
টোকিয়ো শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০৫
Share: Save:

মেক-আপ ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সংলাপটা একবার ঝালিয়ে নিলেন তাকাশি। আর কিছু ক্ষণ পরেই শুরু হয়ে যাবে সেই নাটকটা, গত কয়েক মাস ধরে তিনি যার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে চলেছেন।বাবা সাজার নাটক।

টোকিয়োতে অভিনেতা ভাড়া দেওয়ার একটি সংস্থা চালান তাকাশি। কর্মীর সংখ্যা কুড়ি। স্কুল-কলেজ, অফিসে বা জন্মদিনের পার্টিতে ছোটখাটো নাটক করেন তাকাশি ও তাঁর সহকর্মীরা। তবে বেশি বরাত আসে বাস্তব জীবন থেকেই। কেমন সে সব কাজ?

বুঝিয়ে দিলেন তাকাশিই। জাপানে ‘একটি সন্ধের বন্ধু’র চাহিদা প্রচুর। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সঙ্গী সাজার কাজ। চুক্তিপত্রে স্পষ্ট বলে দেওয়া থাকে, অন্য কোনও সম্পর্ক তৈরি হবে না দু’জনের মধ্যে। বহু বিয়েবাড়ি বা অফিস পার্টিতে জাপানি তরুণ-তরুণীরা এ রকম সাজানো বন্ধু নিয়ে যান। তাকাশির কথায়, ‘‘জাপানে ‘একা’ নারী-পুরুষকে খুব নিচু চোখে দেখা হয়। মনে করা হয়, আপনি যদি বিবাহিত হন, বা নিদেনপক্ষে আপনার প্রেমিক/ প্রেমিকা থাকে, তা হলেই আপনি সফল। না হলে নয়। এই সামাজিক চাপে পড়েই অনেকে বন্ধু-বান্ধবীর খোঁজে আমাদের সংস্থায় আসেন।’’

তেমন ভাবেই তাকাশির দফতরে এক দিন হাজির হয়েছিলেন আসাকো। বিবাহবিচ্ছিন্না, মেগুমি নামে দশ বছরের এক মেয়ের মা তিনি। আসাকো তাকাশিকে জানান, তিনি এমন কাউকে খুঁজছেন, যিনি মাঝেমধ্যে তাঁর মেয়ের ‘বাবা’ সাজতে পারবেন। স্কুলে অভিভাবকদের মিটিংয়ে বা কোনও বাচ্চার জন্মদিনের পার্টিতে। একটাই শর্ত, আসাকো ছাড়া কেউ জানতে পারবে না যে লোকটি আসল বাবা নয়। জানবে না মেগুমি-ও। আসাকো আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি একা মেয়েকে মানুষ করেছেন। তবে সম্প্রতি মেগুমির নানা মানসিক সমস্যা হচ্ছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই সমস্যার উৎস বাবাকে না-পাওয়া। তাই বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আসাকো। মেয়েকে বলেছেন, বাবা ফের বিয়ে করেছেন। তবে মাঝেমধ্যে তিনি এসে মেগুমির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তাতেই বেজায় খুশি হয়েছে ছোট্ট মেয়েটি।

সেই শুরু। মাসে দু’-এক বার করে মেগুমি ও তার মায়ের সঙ্গে দেখা করা শুরু করেন তাকাশি। কখনও সিনেমা হলে, কখনও বা চিড়িয়াখানায়। অভিনেতার কথায়, ‘‘প্রথম প্রথম একটা আড়ষ্টতা ছিল মেগুমির মধ্যে। একটা চাপা রাগও। আমাকে খালি জিজ্ঞাসা করত, এত দিন আমার খোঁজ নাওনি কেন? এই কয়েক মাসে ছবিটা পুরো পাল্টে গিয়েছে। এখন আমাকে দেখে দারুণ খুশি হয়। সে দিন ওর মায়ের সঙ্গে স্কুলে অভিভাবকদের মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। দূর থেকে দেখে মেগুমির মুখে হাসি আর ধরে না। ওর খুশি দেখে আমিও কাজে উৎসাহ পাচ্ছি। প্রতিদিন ভাল করে রিহার্সাল দিই। বিভিন্ন হলিউডের ছবি থেকে সংলাপ মুখস্থ করি। জর্জ ক্লুনির ‘দ্য ডিসেন্ডেন্টস’ থেকে বেশ কিছু জুতসই সংলাপ পেয়েছি।’’

একটা ছোট্ট মেয়ের সঙ্গে এ ভাবে প্রবঞ্চনা করতে বাধে না? তাকাশির স্পষ্ট উত্তর— ‘‘অভিনয়ের মাধ্যমে লোককে খুশি করাই আমার কাজ। তা-ই করছি। কোনও আইনবিরুদ্ধ কাজ তো করছি না।’’ কত দিন এ ভাবে চালাবেন? মেগুমি তো বড় হচ্ছে। ‘‘যত দিন পারব,’’ বললেন তাকাশি। ‘‘প্রতিদিন দশ হাজার ইয়েন (সাত হাজার টাকা) পাই। আমার মতো অভিনেতার কাছে এটা অ-নে-ক টাকা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tokyo Actor Japan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE