হিমশৈল।
সমুদ্র উপকূল বরাবর ধূ ধূ মরুপ্রান্তর। কিন্তু সৈকতে পা রাখলেই চোখে পড়ে সাগরের জলে ভাসছে প্রকাণ্ড হিমশৈল!
আর বছর খানেকের মধ্যে এমন অভিনব দৃশ্যই হয়তো দেখা যাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। ‘বিশল্যকরণী’র খোঁজে গোটা পর্বতটাকেই তুলে আনছে তারা। দেশের জলসঙ্কট মেটাতে দক্ষিণ মেরু থেকে টেনে আনা হবে হিমশৈল। প্রকল্পটির দায়িত্বে রয়েছে ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যাডভাইসর ব্যুরো লিমিটেড’ নামে দেশেরই একটি সংস্থা। ২০১৭ সালের মে মাসে তাদের ওয়েবসাইটে প্রথম ঘোষণা করা হয় প্রকল্পটির কথা। রাতারাতি খবরের শিরোনামে উঠে আসে বিষয়টি। কিন্তু দ্রুত ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি সরকারও এড়িয়ে চলতে শুরু করে প্রসঙ্গটি।
গত রবিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে কাজ। দক্ষিণ মেরু থেকে আরবের পূর্ব উপকূলে ফুজ়াইরা পর্যন্ত হিমশৈল টেনে আনতে ৫ থেকে ১০ কোটি ডলার খরচ হবে। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল্লা মহম্মদ সুলেমান আল শেহি বলেন, ‘‘আমাদের প্রকল্প সফল হলে, এই অঞ্চলে আর জলাভাব থাকবে না। উল্টে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি হয়ে উঠবে বিশ্বের অন্যতম পরিশোধিত জল সরবরাহকারী দেশ।’’
পাঁচ বছর ধরে গবেষণা চলছে। অত দূর থেকে হিমশৈল টেনে আনার সময় বরফ গলা কী ভাবে ন্যূনতম করা যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে এখন। আল শেহি জানান, একটি শক্তিশালী ‘টো-বোট’ ব্যবহার করা হবে, যেটি ১০ কোটি টন হিমশৈল টেনে আনার ক্ষমতা রাখে। বলেন, ‘‘প্রথম ধাপ হচ্ছে, কোন হিমশৈলটিকে আনা হবে, উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে তা নির্ধারণ করা। হিমশৈলটিকে টেনে আনতে টো-বোটকে সাহায্য করবে সমুদ্রের উত্তরমুখী স্রোত। গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়তো লেগে যাবে ন’মাস।’’ তবে সময় ও খরচ, দু’টোই নির্ভর করছে হিমশৈলের মাপের উপরে। আল শেহির কথায়, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে বরফ গলছে। লক্ষ লক্ষ গ্যালন জল নষ্ট হচ্ছে। এ দিকে, ১২০ কোটি মানুষ জলকষ্টে ভুগছেন। আমাদের প্রকল্প তাঁদের সাহায্য করবে।’’
২০১৯ সালে পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হবে। একটি হিমশৈলকে টেনে আনা হবে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে। পরীক্ষা করে দেখা হবে, প্রকৃতিতে এর প্রভাব কী রকম পড়ছে। আর আইনি জটিলতা? সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরব উপকূলের কাছে আন্তর্জাতিক সমুদ্র ক্ষেত্রেই থাকবে হিমশৈলটি। তা ছাড়া সমুদ্রনীতি অনুযায়ী, হিমশৈল জলের উৎস। যে কোনও বেসরকারি সংস্থা তা অধিগ্রহণ করতে পারে ও পৃথিবীর অন্য প্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। সংস্থার বক্তব্য, ‘‘সব চেয়ে বড় কথা, আমরা দক্ষিণ মেরুর মূল ভূখণ্ড থেকে হিমশৈল আনছি না। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমুদ্রে ভাসতে থাকা একটি হিমশৈল বেছে নেওয়া হবে।’’
আরও কিছু বিষয়ে উৎসাহী আরব সরকার। এক, ওই হিমশৈল মেঘ টেনে আনবে। তাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়বে। যে দেশে সারা বছর বৃষ্টি হয় না, তাদের কাছে প্রলোভনই বটে। দ্বিতীয়ত, হিমশৈল দেখতে আর মেরুপ্রদেশে যেতে হবে না। ফলে মরু-দেশে বরফ দেখতে পর্যটকের ভিড়ও বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy