Advertisement
০৩ মে ২০২৪

অন্য ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রায় সব আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সের ক্ষেত্রে (বিবিএ ছাড়া) যে পরীক্ষা হয়, তাতে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন থাকে ২০০টা।

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:৩৯
Share: Save:

প্রশ্ন: আগামী বছর উচ্চ মাধ্যমিক দেব। এর পরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাই। স্নাতক স্তরে পড়তে কি কোনও পরীক্ষা দিতে হয়? যদি হয়, তা হলে পরীক্ষায় কী থাকে? কী ধরনের কোর্স পড়া যায়? উচ্চশিক্ষা এবং কাজের সুযোগ কেমন?

অনুভব দত্ত, কলকাতা

ইন্ডিয়ান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, কলকাতার অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং) কৃষ্ণেন্দু দাস জানালেন, আগে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি নেওয়া হত আইআইটি-র প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে। এখন হয় অল ইন্ডিয়া কমন এন্ট্রান্স টেস্ট-এর (সিইটি) মাধ্যমে। পরীক্ষাটা সাধারণত হয় মে বা জুন মাসে। আর মার্চ-এপ্রিলে বেরোয় এর বিজ্ঞপ্তি।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রায় সব আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সের ক্ষেত্রে (বিবিএ ছাড়া) যে পরীক্ষা হয়, তাতে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন থাকে ২০০টা। ইংরেজি, জেনারেল অ্যাপটিটিউড, দ্বাদশ শ্রেণি স্তরের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি এবং অঙ্ক থেকে প্রশ্ন করা হয়। কোনও নেগেটিভ মার্কিং থাকে না। পরীক্ষাটা হয় অনলাইন। যারা রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বা আইআইটি জয়েন্ট এন্ট্রান্স-এর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়, তারা এই পরীক্ষা দিতে পারে।

সাধারণত আইএমইউ সিইটি-র অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন বেরোয় মার্চ-এপ্রিল নাগাদ। তিনটি সিইটি পরীক্ষা হয়। একটা, বিভিন্ন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তির জন্য, একটি মেরিন সংক্রান্ত এমবিএ কোর্সে ভর্তির জন্য এবং আর একটি এম টেক-এ সুযোগ পাওয়ার জন্য। ছাত্রছাত্রীদের এই সূত্রে আইএমইউ ওয়েবসাইট দেখতে হবে (www.imu.edu.in)।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ম্যাথমেটিক্স-এ গড়ে ৬০ শতাংশ নম্বর এবং ইংরেজিতে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকলে এই কোর্সে আসা যায়।

স্নাতক স্তরে কোর্স

বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (৪ বছর), বি টেক নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং (৪ বছর),

বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স (৩ বছর), বি এসসি শিপ বিল্ডিং অ্যান্ড রিপেয়ার-এর (৩ বছর) মতো কোর্সে ভর্তি হতে পারে ছেলেমেয়েরা।

এ ছাড়াও, ৩ বছরের বিবিএ (লজিস্টিক্স, রিটেলিং অ্যান্ড ই-কমার্স) এবং এক বছরের ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স (যা শেষ করে পরে বি এসসি অ্যাপ্লায়েড নটিক্যাল সায়েন্সে যোগ দেওয়া যায়) পড়ারও সুযোগ রয়েছে। এই দুটি কোর্সের জন্য আলাদা সিইটি হয়। বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বিতীয় বর্ষে ল্যাটারাল এন্ট্রি-র মাধ্যমে যোগ দিতে পারে ডিপ্লোমা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা।

প্রতিষ্ঠান ও কোর্স

ইন্ডিয়ান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি (আইএমইউ) কেন্দ্রীয় সরকারের জাহাজ মন্ত্রকের অন্তর্গত একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাস রয়েছে কলকাতা (www.merical.ac.in), মুম্বই পোর্ট, নভি মুম্বই, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম এবং কোচিন-এ। বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন কোর্স পড়ানো হয়। যেমন, কলকাতায়, মুম্বই পোর্টে পড়ানো হয় বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং। আবার বিশাখাপত্তনমে পড়া যায় বি টেক নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং। চেন্নাই ক্যাম্পাসে

বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স, ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স এবং বিবিএ (লজিস্টিক্স, রিটেলিং অ্যান্ড ই-কমার্স) পড়ায়। নভি মুম্বই ক্যাম্পাসে রয়েছে বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স এবং ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স। কোচিন ক্যাম্পাসে পড়া যায় বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স, বিবিএ (লজিস্টিক্স, রিটেলিং অ্যান্ড ই-কমার্স) এবং

বি টেক নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং (ল্যাটারাল এন্ট্রি-র মাধ্যমে ঢোকা যায়)।

এ ছাড়াও আইএমইউ-অধীনস্থ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্নাতক বা ডিপ্লোমা কোর্স পড়া যায়। যেমন,

• অ্যাংলো ইস্টার্ন মেরিটাইম অ্যাকাডেমি, মুম্বই

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স

www.angloeasterncollege.com

• অ্যাপ্লায়েড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স

www.ariedu.com

• কোয়েম্বত্তুর মেরিন কলেজ, কোয়েম্বত্তুর

বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

www.cmcmarine.in

• ড. বি আর অম্বেডকর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, পোর্ট ব্লেয়ার

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স

https://dbrait.andaman.gov.in/#no-back-button

• ইউরো টেক মেরিটাইম অ্যাকাডেমি, কোচিন

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স,

বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

https://eurotechmaritime.org

• এইচআইএমটি কলেজ, চেন্নাই

বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স

www.himtcollege.com

• ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, গ্রেটার নয়ডা

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স,

বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

www.imi.edu.in

• আরএল ইনস্টিটিউট অব নটিক্যাল সায়েন্সেস, মাদুরাই

বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

http://rlins.edu.in

• সমুদ্র ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম স্টাডিজ, মুম্বই

ডিপ্লোমা ইন অ্যাপ্লায়েড নটিক্যাল সায়েন্স, বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

www.samundra.com

• দ্য গ্রেট ইস্টার্ন ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম স্টাডিজ, মুম্বই

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স

www.geinstitute.com

• তোলানি মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, পুণে

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স,

বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স, বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং

www.tmi.tolani.edu

• ট্রেনিং শিপ রহমান, মুম্বই

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স

www.tsrahaman.org

• বিশ্বকর্মা মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, পুণে

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স

http://vmipune.com

• ইয়াক এডুকেশন ট্রাস্ট, মুম্বই

ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স

www.yakindia.com ইত্যাদি।

এগুলি ছাড়া কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত কোর্স পড়ানো হয়।

উচ্চশিক্ষা

এম টেক বা এম এসসি করা যায়। এম টেক পড়ানো হয় তিনটি বিষয়ে— নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং, ড্রেজিং অ্যান্ড হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং আর মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট। এম টেক পড়তে গেলে কিন্তু তার বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বা বি টেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি সিইটি পরীক্ষা হয়। ইংরেজি, অঙ্ক ছাড়াও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, নেভাল আর্কিটেকচার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো যে কোনও একটা বিষয় থেকে প্রশ্ন থাকে। এম এসসি পড়ানো হয় কমার্শিয়াল শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক্স-এ। আইএমইউ-তে এম এসসি ও পিএইচ ডি-ও হয়। এর জন্য আলাদা পরীক্ষা রয়েছে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটা অনেকটা প্যারামিলিটারি কোর্সের মতো। ফলে এ ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক দৃঢ়তা, বিচক্ষণতার প্রয়োজন পড়ে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরে কোনও ছাত্র জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জাহাজে যোগ দেন। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেখানে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে থাকার পরে ধাপে ধাপে পরীক্ষা দিয়ে উঁচু পদে ওঠা যায়। জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পরের পোস্টটাই হল ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার। সেটা হতে তাঁকে ডিরেক্টর জেনারেল অব শিপিং-এর পরীক্ষা দিতে হবে। সেটা পাশ করলে তবেই তিনি ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন। একই ভাবে নটিক্যাল সায়েন্স পাশ করে যোগ দেওয়া যাবে জুনিয়র অফিসার হিসেবে। তার পরে একই ভাবে পরীক্ষা দিয়ে এক সময় তিনি জাহাজের ক্যাপ্টেন হতে পারবেন। যদি তিনি কোনও কারণে পরীক্ষায় পাশ না করেন তা হলে কিন্তু তিনি ওই র‌্যাঙ্কে পৌঁছতে পারবে না। এই পরীক্ষাগুলোকে বলে ‘সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সি’।

তবে এটা শুধু ভারতেই নয়, গোটা দুনিয়ায় এই নিয়ম রয়েছে। কারণ ছাত্র বা ছাত্রীটি যে কোনও দেশের জাহাজে যোগ দিতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জাহাজ সংস্থায়, বহুজাতিক সংস্থাতেও যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রছাত্রীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marine Engineering Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE