জঙ্গিপুরে শিশু মৃত্যু। উদ্বিগ্ন মায়েরা।
বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার, দুই দিনে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে মারা গেল ১২জন সদ্যোজাত। এদের আটজনের মৃত্যু হয়েছে ১৫ ঘণ্টার মধ্যে। সব ক’টি শিশুকেই রাখা হয়েছিল নবজাতক ইউনিটে (এসএনসিইউ)। আধুনিক প্রযুক্তি এবং বিশেষ পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও এতগুলি মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরও। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এক বিশেষজ্ঞকে তদন্তে পাঠানো হচ্ছে। যাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি চিকিৎসক দলও।
জঙ্গিপুর হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর বিষয়টিতে যা আরও উদ্বেগজনক তা হল, ওই ১২টি শিশুর আটজনেরই জন্ম হয়েছিল ওই হাসপাতালেই। এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসকষ্টে। বহু দূর থেকে আনতে দেরি হওয়ায় ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, এমনও বলা চলে না। হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল অবশ্য বলেন, “হাসপাতালে জন্মালেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। প্রসূতি কী অবস্থায় এসেছে, শিশুর ওজন কম কি না, দেখতে হবে।” ওই ইউনিটের চিকিৎসক অঞ্জন ঘোষ বলেন, “বেশির ভাগ শিশুই ছিল প্রি-ম্যাচিওর বেবি। শ্বাসকষ্ট-সহ নানা রকম সমস্যা ছিল।”
সংক্রমণজনিত কারণে ওই শিশুদের মৃত্যুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন অঞ্জনবাবু। তাঁর ব্যাখ্যা, “সংক্রমণের কারণে মৃত্যু ঘটলে চিকিৎসাধীন আরও ২২ জনের সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যেত। কিন্তু তেমন কোনও কিছু তো এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি।”
মৃত শিশুদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতালে একাধিক শিশু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কেউই নবজাতক ইউনিটে দায়িত্বে নেই। চুক্তিতে নিযুক্ত চিকিৎসক ও সদ্য পাশ-করা চিকিৎসকদের দিয়ে ওই ইউনিট চালানো হচ্ছে। এই কারণেই শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। নবজাতক ইউনিটে যে কোনও শিশুবিশেষজ্ঞ নেই, তা মেনে নিয়েছেন সুপারও। শাশ্বতবাবু জানান, “পাঁচ জন ডাক্তার রয়েছেন এসএনসিইউতে। এঁদের দু’জন চুক্তিতে, বাকিরা স্থায়ী। কেউই শিশুবিশেষজ্ঞ নন। সরকারি এসএনসিইউ ট্রেনিং নিয়েছেন।”
স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “আমাদের কাছে খবর, ২৯ জুলাই একজন, ৩০ জুলাই দু’জন ও ৩১ জুলাই ছ’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সকলেরই মৃত্যুর কারণ শ্বাসকষ্ট। শনিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউয়ের ইনচার্জ ভোলানাথ আইচকে ওই হাসপাতালে পাঠানো হবে। সরেজমিনে তদন্ত করে তিনি রিপোর্ট দেবেন।” জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “এসএনসিইউতে থাকা সত্ত্বেও জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে দু’দিনে ১২ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। এই অস্বাভাবিক শিশু মৃত্যুর কারণ নিয়ে তদন্ত করতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের শনিবার সেখানে পাঠানো হবে।”
এসএনসিইউ-তে রাখা সত্ত্বেও একের পর এক এ ভাবে শিশুমৃত্যুর ঘটনার কথা জানাজানি হতেই শিশুদের পরিজনরা ওই কেয়ার ইউনিটের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাঁদের অনেকে বিক্ষোভও দেখাতে শুরু করেন। এসএনসিইউয়ে কাউকে ঢুকতে না দেওয়ায় ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই কংগ্রেস সমর্থকরা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি হাসানুজ্জামান দাবি করেন, “চিকিৎসার গাফিলতিতেই শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy