বয়স বাড়লে তা জানান দেয় শরীরের অস্থিসন্ধিরা। বয়স বাড়ছে বোঝা যায় আয়নার সামনে দাঁড়ালেও। চুলের পাক, ত্বকে শুষ্ক ভাব, সূক্ষ্ম বলি রেখা, চোখের তলার চামড়ায় টোল— সবই বয়সের লক্ষ্যণ। অস্থিসন্ধির ব্যথা নয় বাইরে থেকে বোঝা যায় না। চুলেও রং করে নেওয়া যায়। কিন্তু ত্বকে বয়সের ছাপ লুকোতে অনেক কসরৎ করতে হয়। একটি গবেষণা অবশ্য বলছে নিরামিষ কিছু খাবারে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। ত্বককে দ্রুত বুড়িয়ে যেতেও দেয় না।
২০২২ সালের ওই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অফ দ্য অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সে। সেখানে বলা হয়েছে কয়েকটি ফল, সব্জি এবং বাদাম বা ডাল শস্য খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি হতে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে ওই প্রত্যেকটি খাবারেই পাওয়া গিয়েছে ফাইটোকেমিক্যালস যা ত্বককে তারুণ্যে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করেছে।
এমন পাঁচটি খাবারের নাম হল—
১। কমলালেবু
কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে উপযোগী কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে ব্লাড অরেঞ্জ নামের এক ধরনের কমলালেবু ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০-২৭ বছর বয়সিদের প্রতিদিন ৬০০ মিলিলিটার করে রক্তাভ কমলালেবুর রস টানা ২১ দিন খাওয়ানোর পরে তাঁদের ডিএনএ-র ক্ষতি হয়েছে কম।
২। টম্যাটো
টম্যাটোতচে রয়েছে লাইকোপিন। যা অত্যন্ত জোরালো অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। যা ত্বকের ক্ষতি আটকায়। একটি গবেষণায় ২১ থেকে ৭৪ বছর বয়সি মহিলাদের টানা ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৫৫ গ্রাম (১৬ মিলিগ্রাম লাইকোপিন ) টম্যাটো বাটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, তাঁদের ত্বক সূর্যের রোদ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক কম। গবেষকেরা জানিয়েছেন, টম্যাটো দূষণ এবং রোদের হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য করে।
৩। কাঠবাদাম
কাঠবাদামে রয়েছে মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন ই এবং পলিফেনল। রজোনিবৃত্তি হওয়া মহিলাদের উপর করা একটি গবেষণায় ৫৫ থেকে ৮০ বছর বয়সি মহিলাদের টানা ১৬ সপ্তাহ ধরে কিছুটা বেশি পরিমাণে কাঠবাদাম খাওয়ানো হয়েছিল। প্রতিদিন তাঁরা যে পরিমাণ ক্যালোরি খান, তার ২০ শতাংশই কাঠবাদাম থেকে পাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন গবেষকেরা। দেখা যায়, ১৬ সপ্তাহ পরে তাঁদের মুখের বলিরেখা চোখে পড়ার মতো কমেছে।
৪। সয়াবিন
বয়স বাড়লে বিশেষ করে মহিলাদের রজোনিবৃত্তির পরে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। ইস্ট্রোজেন কমলে ত্বকে আসে শুষ্ক ভাব। তা থেকে বলিরেখা এবং দাগ-ছোপের সমস্যাও দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে সয়াবিনে থাকা আইসো ফ্ল্যাভোনেস নামের একটি উপাদান অনেকটা ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে। যা ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৫। কোকো
কোকোতে রয়েছে ভরপুর ফ্ল্যাভানলস । যা রক্তসঞ্চালন উন্নত করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় ফলে ত্বকের স্বাস্থ্যও ভাল থাকে। ৪৩ থেকে ৮৬ বছর বয়সি কোরিয়ান মহিলাদের উপরে করা একটি গবেষণায় তাঁদের প্রত্যেককে ৩২০ মিলিগ্রাম ফ্ল্যাভানলস থাকা কোকো পানীয় দেওয়া হয়। ২৪ সপ্তাহ পরে দেখা যায় তাঁদের প্রত্যেকের ত্বকে টানটান ভাব ফিরে এসেছে। কমেছে বলিরেখা এবং অমসৃণ ভাবও।