Advertisement
E-Paper

চিকিৎসার ভুলে মৃত্যু যুবকের, মাসুল সাড়ে তিন কোটি

ডাক্তারদের ত্রুটিতে অনুরাধা সাহার মৃত্যুর মামলায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। চিকিৎসার গফিলতিতে এক যুবকের মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে এ বার ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল দমদমের এক হাসপাতালকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৬

ডাক্তারদের ত্রুটিতে অনুরাধা সাহার মৃত্যুর মামলায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। চিকিৎসার গফিলতিতে এক যুবকের মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে এ বার ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল দমদমের এক হাসপাতালকে।

এই নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

ইন্দ্রজিৎ সরকার নামে বছর ছত্রিশের এক যুবক ২০১৪ সালের ১০ জুলাই নিজের বাড়িতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন। তাঁকে দমদমের আইএলএস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দু’দিন পরে সেখানেই পেটে গুরুতর রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারের অভিযোগ ছিল, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁরা শুধু ওই যুবকের মেরুদণ্ডে একটা ছোট চোটের চিকিৎসা করেছেন। আহতের অন্যান্য সমস্যাকে গুরুত্বই দেননি। তারই খেসারত দিতে হয়েছে ইন্দ্রজিৎকে।

ওই যুবকের বাবা রণজিৎ সরকারের অভিযোগ, তাঁর ছেলের ঠিক কোথায় কতটা কষ্ট হচ্ছে, সেই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা কার্যত চোখ বুজে ছিলেন। গোড়া থেকেই চিকিৎসা ঠিকঠাক হয়নি। প্রথম ১২ ঘণ্টা কোনও ডাক্তার তাঁকে ছুঁয়েও দেখেননি। ‘‘ছেলে পেটে অসহ্য ব্যথার কথা বলছিল। আমরা হাসপাতালকে সেটা জানানোয় বলা হয়েছিল, ওটা হাড়ের ব্যথা। পরে যখন সব জানাজানি হল, তখন নিজেদের দোষ ঢাকতেও নানা কারচুপি করেছে ওরা। এমনকী ডেথ সার্টিফিকেট নিয়েও নানা গোলমাল হয়েছে,’’ বললেন রণজিৎবাবু।

ওই হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্রথমে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মৃতের বাবা। কিন্তু ছ’মাসেও রাজ্য কাউন্সিল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, এমনকী রণজিৎবাবুকে কোনও উত্তরও দেয়নি। অগত্যা তিনি দিল্লিতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার দ্বারস্থ হন। তিন চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের অভিযোগের শুনানি চলছে এমসিআইয়ে। পাশাপাশি জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতেও অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার নির্দেশ জারি করেছে আদালত। তবে হাসপাতালের তরফে নিরু বিজয়বর্গী বলেন, ‘‘আমরা এখনও চিঠি পাইনি। তাই এখনই এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।’’

কিছু দিন আগেই এমসিআই জানিয়েছিল, ‘অকর্মণ্যতা’র বিচারে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল দেশের মধ্যে প্রথম! এ রাজ্যে অভিযোগের সুবিচার পান না বলেই লোকজনকে দিল্লিতে এমসিআইয়ের কাছে ছুটতে হয়। পাশাপাশি ভিড় বাড়ছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতেও। এই ঘটনায় রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের ‘অকর্মণ্যতা’ ফের প্রমাণিত হল বলে মনে করছেন রোগী-স্বার্থে লড়াই চালানো সংগঠনগুলির সদস্যেরা।

রোগীদের স্বার্থে লড়াই করা একটি সংস্থার সভাপতি কুণাল সাহা জানান, এই ধরনের মামলায় উকিলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, উকিল রোগীর পরিবারের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন, আবার ডাক্তার বা হাসপাতালের সঙ্গেও হাত মিলিয়েছেন। ‘‘আমরা চাই, ভুক্তভোগীরা নিজেরা মামলা লড়ুন। সংগঠনগত ভাবে আমরা তাঁদের আইনি পরামর্শ দিতে সব সময় প্রস্তুত,’’ আশ্বাস দিয়েছেন কুণালবাবু।

স্ত্রী অনুরাধা সাহার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসকদের শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে কুণালবাবু সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিলেন। অনুরাধা মৃত্যু মামলায় ২০১৩ সালে সাড়ে ১১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। মাস কয়েক আগে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তামিলনাডুতে একটি চিকিৎসার গাফিলতির মামলায় এক কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। আর এ বার প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ জারি হল কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

3.5 crore compensation dumdum hospital mistreatment dumdum mistreatment youth dead youth dead mistreatment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy