Advertisement
১১ মে ২০২৪

শরীরচর্চায় দূরে থাক ‘ব্যাক পেন’

সকালে একটু দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস। তার পরে ঘড়ির দিকে তাকিয়েই ছুটতে শুরু করেন বছর ছাব্বিশের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অঙ্কিতা ঘোষ। দশটার মধ্যে অফিসে ঢুকতে হয়। সারা দিন কম্পিউটারে চোখ এঁটে চেয়ারে বসে থাকা।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৩
Share: Save:

সকালে একটু দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস। তার পরে ঘড়ির দিকে তাকিয়েই ছুটতে শুরু করেন বছর ছাব্বিশের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অঙ্কিতা ঘোষ। দশটার মধ্যে অফিসে ঢুকতে হয়। সারা দিন কম্পিউটারে চোখ এঁটে চেয়ারে বসে থাকা। বিকেল হলেই কোমরে টান ধরে। কিছু দিন পরে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও সমস্যা শুরু হয়। যন্ত্রণা বাড়ায় চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক জানান, দীর্ঘক্ষণ এক ভাবে বসে থাকার জন্য মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দিনে অন্তত ৪৫ মিনিট হাঁটতে হবে। না হলে ভুগতে হবে আজীবন।

বাড়ি ফেরার পথে ব্যাগটা কাঁধে না নিয়ে মাঝে মধ্যেই হাতে নিয়ে আসে ক্লাস সেভেনের রোহন রায়। সাতটা ক্লাস, তার জন্য চোদ্দটা বই-খাতা, তার উপরে জলের বোতল, টিফিন বাক্স এত বোঝা বইতে ঘাড় ঝুঁকে যায়। এমনকী রাতে ব্যথায় ঘুমও আসে না। এই রকম যন্ত্রণা টানা দেড় সপ্তাহ হওয়ার পরে বাবার সঙ্গে ডাক্তার দেখাতে যায় সে। তিনি জানান, বয়সে ছোট হলেও রোগ ধরেছে বড়। কাঁধের হাড় বেড়েছে রোহনের। প্রতি দিন আধ ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে।

রোহন কিংবা অঙ্কিতা কোনও ব্যতিক্রম নয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন এ রাজ্যের প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ কোনও না কোনও সময়ে পিঠের ব্যথা অর্থাৎ ‘ব্যাক পেন’-এ ভুগেছেন বা ভুগছেন। কোনও না কোনও ধরনের মেরুদণ্ডের যন্ত্রণার ভুক্তভোগী এঁরা। ভারী ব্যাগ বহন করা, মাথা নিচু করে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা, কিংবা এক টানা চেয়ারে বসে থাকা— এই সব অস্বাস্থ্যকর কাজের জন্যই ব্যাক পেন দেখা দিচ্ছে আট থেকে আশি সব বয়সের মানুষের মধ্যে। চিকিৎসকদের মতে, এর থেকে বেরোনোর পথ নিয়মিত শরীর চর্চা।

স্নায়ুশল্য চিকিৎসক জি কে প্রুস্তির কথায়, ‘‘এই ধরণের ব্যথার মোকাবিলা করা যেতে পারে যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে। সকালে নিয়মিত ৪৫ মিনিট হাঁটলে কিংবা আধ ঘণ্টা ব্যায়াম করলে ব্যথা কমবে। এই অভ্যাস মেরুদণ্ডের যে কোনও সমস্যাকে দূরে রাখবে।’’ প্রুস্তির সঙ্গে এক মত আরও এক স্নায়ুশল্য চিকিৎসক পরিমল ত্রিপাঠী। তিনি মনে করেন, যদি এই ধরণের ব্যথার সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনও রোগের সম্পর্ক না থাকে তা হলে জীবন যাপনে কিছুটা পরিবর্তন আনলে এই সমস্যা এড়ানো যেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের বয়স, শারীরিক অবস্থা বুঝে নিজের জীবন যাপনের পদ্ধতি নির্বাচন করা জরুরি। তা হলে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’’ যোগাসন শিক্ষক দিব্যসুন্দর দাস বলেন, ‘‘শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি যোগাসন মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। দেহের বিভিন্ন পেশীর নড়াচড়া এবং প্রাণায়মের মতো অভ্যাস সুস্থ জীবন কাটাতে সাহায্য করে।’’

‘ব্যাক পেন’ এড়াতে কী কী করা উচিত?

চিকিৎসকদের পরামর্শ, যে কোনও বয়সের মানুষ সকালে হাঁটতে পারেন। এই ভাল অভ্যাসটি অনেক রোগকে দূরে রাখে। ঘাড় নিচু করে দীর্ঘক্ষণ বই পড়া কিংবা অন্য কোনও কাজ করা উচিত নয়। কুঁজো হয়ে পায়ের উপরে পা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকা অস্বাস্থ্যকর। বসার সময় কিংবা হাঁটার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখা উচিত। যারা ব্যাক পেনের সমস্যায় ভোগেন তাঁদের সামনের দিকে নিচু হয়ে মাটি থেকে জিনিস তোলা নৈব নৈব চ। এ সবের পাশাপাশি সকাল অথবা বিকেলে সামান্য কিছু ব্যায়াম করলেই নিজেকে ‘ফিট’ রাখা যায়। যেমন, দু’পাশে হাত দু’টোকে টানটান করে মেলে ধরে আস্তে আস্তে ঘোরানো, ধীরে ধীরে ঘাড় ডান দিক-বাঁ দিক, উপরে-নীচে ঘোরানো। এই ধরণের ব্যায়ামগুলো করলেই সমস্যা এড়ানো যাবে। যাঁদের হার্টের কোনও সমস্যা রয়েছে, তাঁরা ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ মতো রুটিন মাফিক ব্যায়াম করলে সুস্থ থাকতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Back pain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE