Advertisement
E-Paper

শাড়িতে দুই বাংলার ইতিহাস! চার শতকের কথা তুলে ধরল বালুচরি-জামদানিতে সেজে ওঠা প্রদর্শনী

শিল্পের ইতিহাস চর্চা করা যায় নানা ভাবেই। এ বার ধরা হল বাংলার শাড়ির শিল্প। তার নিরিখেই পড়া হল গোটা অঞ্চলের ইতিহাস।

বুনন শিল্পে ভারত এবং বাংলাদেশকে অনায়াসে বাকি দুনিয়ার পথপ্রদর্শক বলা যায়।

বুনন শিল্পে ভারত এবং বাংলাদেশকে অনায়াসে বাকি দুনিয়ার পথপ্রদর্শক বলা যায়। ছবি: উইভার্স স্টুডিয়োর ইনস্টাগ্রাম থেকে। গ্রাফিক— আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:০০
Share
Save

ইংরেজরা এ দেশে বাণিজ্য শুরু করার কেন্দ্র হিসাবে বেছে নিয়েছিল বাংলাকে। সেই ইতিহাসের সঙ্গে যে বাংলার শাড়ির সম্পর্ক থাকতে পারে, তা নিয়ে কত জনে ভেবেছেন এত দিনে!

বুনন শিল্পে এই উপমহাদেশকে যদি বলি বাকি দুনিয়ার তুলনায় অনেকটা এগিয়ে, তবে এ কথাও বলে দিতে হবে যে, ভারত এবং বাংলাদেশ হল তার পথপ্রদর্শক। শুধু শাড়ি নয়, এ অঞ্চলে তৈরি হওয়া নানা ধরনের কাপড় এক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছে। এখনও যায়।

বাংলা আবার এক সময়ের বাণিজ্যের কেন্দ্র যে হেতু, তাই এই অঞ্চলে ঘটেছে বহু সংস্কৃতির মিশেল। পারসি থেকে চিনা, আরমেনীয় থেকে পর্তুগিজ— ব্যবসার প্রয়োজনে এক এক করে কত ধরনের মানুষই তো এসে বসবাস শুরু করেন এই অঞ্চলে! ফলে বহু সংস্কৃতির মিশেল ঘটেছে এই এলাকায়। সেই মিলমিশের ছাপও পড়েছে শাড়িতে। ইতিহাস সে ভাবেও ধরে রেখেছে শাড়ি। আবার শাড়ি ঘিরে তৈরি হয়েছে এ প্রান্তের ঐতিহাসিক নানা ঘটনা।

শান্তিপুরী শাড়ি থেকে শুরু করে বেগমপুরী— দৈনন্দিন পরনের হোক বা জমকালো, সব ধরনের শাড়িই দেখা যাবে প্রদর্শনীতে।

শান্তিপুরী শাড়ি থেকে শুরু করে বেগমপুরী— দৈনন্দিন পরনের হোক বা জমকালো, সব ধরনের শাড়িই দেখা যাবে প্রদর্শনীতে। —নিজস্ব চিত্র।

এক কথায় বলতে গেলে, শাড়ির গুরুত্ব বাদ দিয়ে বাংলার ইতিহাস পড়া বা চেনা যায় না। কিন্তু আরও পাঁচটি ‘মেয়েলি’ জিনিসের মতোই ইতিহাসচর্চার ‘গুরুতর’ ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও স্থান করে নিতে পারেনি শাড়ি। এত দিনে কলকাতা শহর খানিকটা জায়গা দিল। এক নারীর প্রচেষ্টাতেই।

‘উইভার্স স্টুডিয়ো’র দর্শন শাহ একটি বড়সড় প্রকল্পে হাত দিয়েছেন।

‘উইভার্স স্টুডিয়ো’র দর্শন শাহ একটি বড়সড় প্রকল্পে হাত দিয়েছেন। ছবি: উইভার্স স্টুডিয়োর ইনস্টাগ্রাম থেকে।

‘উইভার্স স্টুডিয়ো’র দর্শন শাহ একটি বড়সড় প্রকল্পে হাত দিয়েছেন। গত পাঁচ বছর ধরে চলছে গবেষণা। তা-ই ধরা হল বাংলার শাড়ি ও বুনন শিল্পের নানা সময়ের কথা। ইতিহাসে তার জায়গা কেমন করে দেখা হবে, তা-ও প্রতিষ্ঠা করল দর্শনের সাজানো এক প্রদর্শনী। উইভার্স স্টুডিয়োর উদ্যোগে ইএম বাইপাস সংলগ্ন আনন্দপুরে, কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে যা চলবে মার্চ মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত। উদ্যোক্তাদের দাবি, শাড়ি সংক্রান্ত ইতিহাস নিয়ে এমন প্রদর্শনী কলকাতা শহরে এই প্রথম।

কাঁথার কাজে, কখনও জামদানির সুতোর টানে, কখনও বা বালুচরির রেশমে নানা দেশের গল্পকথা বোনা হয়েছে।

কাঁথার কাজে, কখনও জামদানির সুতোর টানে, কখনও বা বালুচরির রেশমে নানা দেশের গল্পকথা বোনা হয়েছে। ছবি: উইভার্স স্টুডিয়ো।

বাংলার বাইরের মানুষজন যে ভাবে এই অঞ্চলের শাড়ি নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে, তা হয়তো শাড়ি যাঁদের দৈনন্দিনের পরিধান, তাঁরা সব সময়ে সে ভাবে খেয়ালই করতে পারেননি। তেমনটা তো হয়েই থাকে। যা রোজের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত, তার গুরুত্ব সব সময়ে আলাদা ভাবে চোখেই পড়ে না। সে কারণেই বাইরে থেকে শিল্প দেখতে এক রকম, আর যাঁরা সেই সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জীবন ও শিল্প আর এক রকম। কিন্তু তাই বলে ইতিহাসে সে জিনিসের গুরুত্ব কমে যায় না।

বেনারসি থেকে অনুপ্রাণিত জমকালো বালুচরি শাড়ি। প্রদর্শনীতে দেখা যাবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

বেনারসি থেকে অনুপ্রাণিত জমকালো বালুচরি শাড়ি। প্রদর্শনীতে দেখা যাবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ছবি: উইভার্স স্টুডিয়োর ইনস্টাগ্রাম থেকে।

দর্শন এক অর্থে শাড়ির জগতের অন্দর এবং বাহিরের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করছেন। তুলে আনছেন ১৬ শতকের শাড়ি বোনার সময়কার কথাও। বালুচরি থেকে মুর্শিদাবাদের সিল্ক, বেনারসি থেকে জামদানি— বাংলার নানা প্রান্তে তৈরি রকমারি শাড়ির শিল্পের সঙ্গে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক যোগ।

বেনারসি থেকে জামদানি— বাংলার নানা প্রান্তে তৈরি রকমারি শাড়ির শিল্পের সঙ্গে আছে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক যোগ।

বেনারসি থেকে জামদানি— বাংলার নানা প্রান্তে তৈরি রকমারি শাড়ির শিল্পের সঙ্গে আছে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক যোগ। ছবি: উইভার্স স্টুডিয়োর ইনস্টাগ্রাম থেকে।

১৯ শতকের কাঁথার কাজ, জামদানির বিবর্তন যেমন উঠে আসে ‘টেক্সটাইলস ফ্রম বেঙ্গল: আ শেয়ার্ড লিগ্যাসি’ নামের এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে, তেমন আসে বাংলার সুতোর কাজ করা কাপড়ের রফতানির ইতিহাসও। ১৭ শতকের শুরুর দিকে পর্তুগিজদের হাত ধরে কোন পথে বাংলায় সব কাপড় গিয়েছে, তা ধরার চেষ্টা হয়েছে প্রদর্শনীতে। দেখা হয়েছে, আরব অঞ্চল থেকে ইন্দোনেশিয়া, বিভিন্ন দেশে কী ভাবে কোন কাপড় ব্যবহার হচ্ছে। তার উপর নির্ভর করেই বাংলার বুনন শিল্পের যাত্রাপথের ইতিহাস ধরার চেষ্টা হয়েছে।

 ১৭ শতকের শুরুর দিকে পর্তুগিজদের হাত ধরে কোন পথে বাংলায় সব কাপড় গিয়েছে, তা ধরার চেষ্টা হয়েছে প্রদর্শনীতে।

১৭ শতকের শুরুর দিকে পর্তুগিজদের হাত ধরে কোন পথে বাংলায় সব কাপড় গিয়েছে, তা ধরার চেষ্টা হয়েছে প্রদর্শনীতে। ছবি: উইভার্স স্টুডিয়ো।

শুধু তো রফতানি নয়, ইতিহাসে ছাপ ফেলে আমদানিও। কখনও এ অঞ্চলে এসেছেন দূর দেশের ব্যবসায়ী। তাঁর সঙ্গে মুখে মুখে এসেছে সে সব দেশের গল্প। সবই তো ধরা থাকে শিল্পে। কখনও কাঁথার কাজে, কখনও জামদানির সুতোর টানে, কখনও বা বালুচরির রেশমে নানা দেশের গল্পকথা বোনা হয়েছে। আবার নীল চাষের ইতিহাস ধরা যায় এ প্রান্তের কাপড়ে ইন্ডিগো রঙের ব্যবহারের পথ খুঁজে। সে সব, এবং আরও অনেক কিছু পড়তে ও খুঁজতে শেখাচ্ছে এই প্রদর্শনী। ঘুরে দেখে আসা যায় নিজের সময় মতো। গ্যালারি খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।

weavers studio kolkata Darshan Shah

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}