রাস্তায় বেরোলেই ঝাঁ ঝাঁ রোদ। চামড়া যেন পুড়ে যাচ্ছে। চড়া রোদে বেশি ক্ষণ থাকলেই মুখে, হাতে কালচে দাগ পড়ে যাচ্ছে। এই দাগছোপ পড়া বা ‘ট্যান’ হওয়া এক রকম, আর রোদ থেকে ত্বকে বিষক্রিয়া হওয়া আরও বিপজ্জনক। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘সান পয়জ়নিং’। অনেকেই ‘সানবার্ন’ আর ‘সান পয়জ়নিং’-এর মধ্যে তফাত করতে পারেন না। দুটি ক্ষেত্রে উপসর্গ ভিন্ন। কোনটি কী কারণে হচ্ছে, জেনে নেওয়া যাক।
‘সান পয়জ়নিং’ কি আপনারও হচ্ছে?
ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে থাকলে প্রথমে ত্বকে কালচে দাগছোপ পড়বে, যাকে সান ট্যান বলা হয়। সেই অংশের চামড়ায় ব্রণ বা ফুস্কুড়ি হতে পারে, অথবা ত্বকে ঘামাচি হতে পারে। চুলকানি, জ্বালাপোড়ার মতো অনুভূতি হতে পারে। এই সমস্যা হলে তাকে ‘সানবার্ন’ বলা হবে। কিন্তু সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির কারণে যদি ত্বকের রং বদলাতে শুরু করে, লালচে র্যাশ এবং তা থেকে ত্বকে ঘা, চামড়া উঠতে থাকা বা ক্ষত তৈরি হয়, তা হলে বুঝতে হবে ‘সান পয়জ়নিং’ হচ্ছে। অনেক সময়ে সোরিয়াসিস বা কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসের লক্ষণও দেখা দেয়।
আরও পড়ুন:
সানবার্নের ক্ষেত্রে ত্বকে প্রদাহ হয়। ত্বকের ডিএনএ কোষ নষ্ট হতে থাকে। কিন্তু পয়জ়নিং হলে কেবল ত্বকের ক্ষতি হয় না, শরীরে আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এমনও দেখা গিয়েছে, যাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা চড়া রোদে থাকতে হয় অথবা যিনি সমুদ্র সৈকতে রোদের মধ্যে টানা চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় রয়েছেন, তাঁর ত্বকে র্যাশের পাশাপাশি মাথা যন্ত্রণা, জ্বর, ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা, ডায়েরিয়া, প্রবল ক্লান্তি ভাব, ঘন ঘন বমি পাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এই সবই সান পয়জ়নিং-এর লক্ষণ।
সানবার্ন হলে তা ৩ থেকে ৭ দিন থাকে। ত্বকে জ্বালা, চুলকানি হয়। কিন্তু সান পয়জ়নিং হলে তা সারতে অনেক দেরি হয়। শুরুটা সানবার্ন দিয়েই হয়, তার পর তা থেকে নানা রকম চর্মরোগ দেখা দিতে থাকে। ‘পলিমরফাস লাইট ইরাপশন’ (পিএমএলই) এক ধরনের র্যাশ যা সান পয়জ়নিং-এর কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত ২০-৪০ বছর বয়সি মহিলাদের এই চর্মরোগ বেশি হয়। ত্বকে লালচে ফোস্কা পড়ে যায়, সারা ত্বক ব্রণ-ফুস্কুড়িতে ভরে যায়। সেই সঙ্গেই জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ভাব থাকে।
রেহাই পাবেন কী করে?
সান পয়জ়নিং থেকে বাঁচতে রোদ থেকে ফিরেই ঠান্ডা জলে স্নান করা জরুরি।
ত্বকের যে জায়গাগুলিতে লালচে দাগ পড়বে বা চুলকানি হবে, সেখানে বরফ ঘষলে আর ফোস্কা পড়বে না।
গরমের সময়ে সুতির হালকা পোশাক পরাই ভাল। সিন্থেটিক বা জর্জেটের আঁটসাঁট পোশাক পরলে তা থেকে র্যাশ হতে পারে।
ত্বকে র্যাশ হলে সেখানে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় লোশন লাগানো যেতে পারে। তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ব্যবহার করতে হবে।
রোগ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েই চিকিৎসা করা হয়। অনেক সময়ে ত্বকের জ্বালা কমাতে কর্টিকোস্টেরয়েডের মতো ওষুধও দেন চিকিৎসকেরা। তবে নিজে থেকে এমন ওষুধ খাওয়া ঠিক হবে না।