ভাবুন তো, শাহরুখ খান কোনও নামী সংস্থার শোরুমে গাড়ি কিনতে গেলেন। আর সংস্থাটি তাঁর মুখের উপর জানিয়ে দিল, আর যাকেই হোক শাহরুখকে তারা গাড়ি তো দূর, গাড়ির একটি আয়নাও বেচবে না। কারণ, শাহরুখ কোনও এক সময়ে তাদের তৈরি গাড়িকে ‘অপমান’ করেছিলেন! ভারতে এমন ঘটনা কেউ ভাবতেই পারবেন না। শাহরুখের ক্ষেত্রেও সত্যিসত্যি এমন হয়নি কখনও। কিন্তু হলিউডের তারকা অভিনেতা টম ক্রুজকে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল!
বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা বুগেটি ‘নিষিদ্ধ’ বলে ঘোষণা করেছিল টমকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, বুগেটির বানানো গাড়ির সম্মানহানি করেছেন অভিনেতা। যার ফলে আজও ওই সংস্থার তৈরি গাড়ি কিনতে পারেন না টম।
ভাবছেন এমনও হতে পারে? গাড়ি তো জড়বস্তু। তারও মান-সম্মান থাকতে পারে! বিশ্বের কিছু বিলাসবহুল গাড়ি সংস্থা মনে করে, আলবাৎ থাকতে পারে। শুধু তা-ই নয়, প্রয়োজনে সেই সম্মান রক্ষার্থে বাঘা বাঘা তারকাদের সঙ্গে সংঘাতে নামতেও পিছপা হবে না তারা। টমের সঙ্গে বুগেটির সংঘাত বেধেছিল তেমনই এক ‘গাড়ির অসম্মান’-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তবে তিনি একা নন। কিম কার্দাশিয়ান, জাস্টিন বিবারের মতো তারকারাও একই ভাবে গাড়ি সংস্থার 'নিষিদ্ধ' তালিকাভুক্ত হয়েছেন। খ্যাতনামী তারকাদের কাছে বিষয়টি নিঃসন্দেহে অস্বস্তির। কিন্তু তাঁরা আজ পর্যন্ত এর প্রতিকারও করতে পারেননি।
বুগেটির ভেরন মডেলের একটি গাড়ি।
প্রশ্ন উঠতেই পারে একটি ব্র্যান্ড তাদের ক্রেতা বেছে নেওয়ার মতো ক্ষমতা পায় কী করে? বিশেষ করে বিলাসী ব্র্যান্ডের ক্রেতার সংখ্যা যেখানে হাতেগোনা, সেখানে তারা এমন বাছাবাছি করলে অর্থনৈতিক ভাবেও তো অসুবিধা হওয়ার কথা! গাড়ি সংগ্রাহকেরা বলছেন, আসলে এই ধরনের বিলাসবহুল গাড়ির বিপুল দামের একটা বড় কারণ গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি, গাড়িটি বানানোর ক্ষেত্রে নৈপুণ্য এবং শৈল্পিক দিকেও মন দেয় সংস্থাগুলি। তবে সবচেয়ে বেশি মন দেয় নিজেদের ভাবমূর্তিতে। ‘মিশন ইমপসিবল’-এর অভিনেতা টমের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল, তা ওই ভাবমূর্তিতেই আঘাত করেছিল বলে মনে করেছিল বুগেটি।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৬ সালে। তার আগের বছরই বুগেটির ভেরন মডেলের গাড়ি কিনেছিলেন টম। অভিনেতার দামি গাড়ির শখের কথা তাঁর অনুরাগীরা জানতেন। টমও নতুন নতুন গাড়ি কিনে চমকে দিতেন তাঁদের। ভেরন ছিল ১০০১ অশ্বশক্তির ১৬ সিলিন্ডারের ইঞ্জিন বিশিষ্ট অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি। সে যুগে গাড়িটির দাম ছিল দশ লক্ষ মার্কিন ডলারেরও বেশি। অর্থাৎ টাকার হিসাবে এ যুগে প্রায় ১০ কোটির কাছাকাছি।
২০০৬ সালে ‘মিশন ইমপসিবল থ্রি’-র প্রিমিয়ারে টম ক্রুজ়।
টম গাড়িটি নিয়ে এসেছিলেন তাঁর ‘মিশন ইমপসিবল থ্রি’ ছবির প্রিমিয়ারে। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর পরে গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন টম। প্রায় ৪০ সেকেন্ড ধরে চলতে থাকে দরজা খোলার চেষ্টা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা তো ছিলেনই, সেই সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে ওই অনুষ্ঠানের সম্প্রচারও হয়েছিল। ফলে গোটা পৃথিবীর দর্শকদের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। বিষয়টিকে ‘অপমান’ হিসাবেই দেখেছিলেন বুগেটি কর্তৃপক্ষ। কারণ ওই ঘটনা তাঁদের বিলাসবহুল গাড়ির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছিল গোটা দুনিয়ার সামনে। এর পরেই তাঁরা ঠিক করেন, আর কোনও দিনও হলিউড অভিনেতা টমকে বুগেটির গাড়ি কিনতে দেওয়া হবে না।
অর্থাৎ দাম দিয়ে গাড়ি কিনলেই হবে না। জনসমক্ষে গাড়ির মান-সম্মানের খেয়ালও রাখতে হবে। তা যদি না হয়, তবে গাড়ির সৃষ্টিকর্তাদের বিষনজরে পড়তে পারেন আপনিও।