এই তো কয়েক দশক আগেও জামাইষষ্ঠীর সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই সাজ সাজ রব পড়ে যেত। কাঁসার বা রুপোর থালার চারপাশে সাজানো পঞ্চব্যাঞ্জন। যত্নে বোনা নরম আসনে জামাই বাবাজীবনেরা বসে আয়েস করে তারিয়ে তারিয়ে রসাস্বাদন করতেন পঞ্চব্যাঞ্জনের। সেই আদলেই সিক্স বালিগঞ্জ প্লেসের জামাইষষ্ঠীর স্পেশাল মেনু। শেফ সুশান্ত সাবেকি বাঙালি মেনুতে মিশিয়ে দিয়েছেন অনেকখানি ভালবাসা। শেফ কয়েকটা রেসিপি জানালেন পাঠকদের জন্যে।
গলদা চিংড়ির ভূনা
কাজু বাদাম আর পোস্ততে মাখামাখি। সঙ্গে রাই সর্ষের মধুর ঝাঁজ, ইয়াব্বড় গলদা চিংড়ির ভূনা। আহা যেন স্বর্গীয় আস্বাদ। গলদা চিংড়ির নাম শুনলেই খাদ্য রসিকরা শিহরিত হন। ভূনা গলদা চিংড়ি মুখে দিলেই ঈষৎ টক আর সর্ষে কাঁচা লঙ্কার ঝাঁঝালো ঝাল। মাখনের মত নরম চিংড়ি মুখে দিলেই এক অনস্বাদিত ভাল লাগায় মন ভরে যাবে। বাড়িতেও তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিতে পারেন।
উপকরণ
গলদা চিংড়ি: ১০ টা
পেঁয়াজ: কুচি ( মাঝারি আকারের দেড় খানা)
আদা ও রসুন বাটা: ২ চামচ করে
রাই সর্ষে বাটা: ১ চামচ
পোস্ত বাটা: ১ চামচ
কাজু বাদাম বাটা: ২চামচ
টক দই: ২ চামচ
টম্যাটো ও কাঁচা লঙ্কা কুচনো: দুটো করে
জিরে বাটা: আধ চামচ
হলুদ: ১ চামচ
সাদা তেল: ২০০ মিলি
নুন, চিনি ও লঙ্কা গুঁড়ো: স্বাদ অনুযায়ী
প্রণালী: চিংড়ির গায়ের খোলা ছাড়িয়ে পিঠের ময়লা বের করে মুড়ো ও লেজের খোসা রেখে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। নুন হলুদ মাখিয়ে রেখে দিন। প্যানে তেল গরম করে চিংড়ি হালকা করে ভেজে তুলে রাখুন। এ বার বাকি তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি ও সামান্য নুন দিয়ে ঢিমে আঁচে ভেজে নিন। ভাজা ভাজা হলে রসুন ও আদাবাটা, চিনি মিশিয়ে নাড়তে হবে। এর পর একে একে সব মশলা যোগ করে হালকা আঁচে নাড়াচাড়া করে সুগন্ধ বেরোলে সামান্য জল দিতে হবে। ফুটে উঠলে চিংড়িগুলো দিয়ে মিনিট পাঁচেক রান্না করে নামিয়ে পোলাও বা গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।
পাকা আম ও গন্ধরাজ লেবুর কুলার
তীব্র গরমের এক মাত্র ভাল দিক কী বলতে পারেন? ভাবছেন রেসিপির আসরে আচমকা ক্যুইজ কেন! আর গরম মানেই তো কষ্টের শেষ নেই, ভাল আবার কী! গরম কালে মনের ও জিভের শান্তি বাজার ভরা পাকা আমে। যতই কষ্ট হোক না কেন এক প্লেট মিষ্টি আম খেলে মনটা ঠান্ডা হয় কিনা বলুন? জামাইএর জন্যেই হোক বা যে কোনও অতিথির জন্যে, ঠান্ড ঠান্ডা পাকা আমের কুলার সবারই মন জয় করবে এ কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়।
উপকরণ
টাটকা পাকা আমের ক্কাথ: ১ কাপ
স্প্রাইট: আধ কাপ
কনকনে ঠান্ডা জল: আধ কাপ
গন্ধরাজ লেবুর রস: ১চামচ
গন্ধরাজ লেবুর সবুজ খোসা মিহি করে কুচোন: আধ চামচ
এক চিমটে বিট নুন
দরকার হলে সামান্য চিনি
মিহি বরফ কুচি
প্রণালী: আমের ক্কাথের সঙ্গে গন্ধরাজ লেবুর রস, বিট নুন ও খোসা ভাল করে মিশিয়ে সুদৃশ গ্লাসে ঢেলে জল দিয়ে নেড়ে নিয়ে বরফকুচি দিন। ওপরে স্প্রাইট দিয়ে শীতল সুস্বাদু পানীয় অতিথিকে সার্ভ করুন।
আরও পড়ুন: জামাই এখন শেফের ভূমিকায়
আম ছানার পায়েস
শেষ পাতে মিষ্টি না খেলে কি মন ভরে! পায়েসকে বাঙালির হেঁশেলের সিগনেচার সুইট ডিশ বলা যায় অনায়াসে। তাই জামাইষষ্ঠীর দিনে ছানার সঙ্গে টসটসে পাকা আর চনচনে মিষ্টি আমের মিলনে বানিয়ে ফেলেছেন এক অসাধারণ সুইট ডিশ আম ছানার পায়েস। না আমের মিষ্টিতে ভরপুর বলে আলাদা করে মিষ্টি দেওয়ার খুব প্রয়োজন হয় না। লো ক্যালোরি আর পুষ্টিগুণে ভরপুর আম ছানার পায়েস সাইবার জামাইদেরও মন ভরাবে এ কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়।
উপকরণ
ছানা: ২৫০ গ্রাম
পাকা মিষ্টি আম: ৫০০ গ্রাম
দুধ: দেড় লিটার
চিনি: ১ কেজি
ময়দা: ১০ গ্রাম
জল: আধ লিটার
প্রণালী: জল ছাড়া ছানা ও ময়দা এক সঙ্গে মেখে ছোট্ট ছোট্ট রসগোল্লার মত বল গড়ে নিন। এ বার দু তিন চামচ চিনি রেখে দিয়ে সমস্ত চিনি জলে দিয়ে ফুটিয়ে সিরাপ তৈরি করে তার মধ্যে ছোট্ট রসগোল্লাগুলো দিয়ে পাঁচ-সাত মিনিট ফুটিয়ে নরম হলে নামিয়ে রাখুন। বাকি চিনি দিয়ে দুধ ফুটিয়ে ঘন করে নিন। ঘন দুধ ঠান্ডা হলে আমের ক্কাথ মিশিয়ে নিন। এ বার রস থেকে ছোট রসগোল্লাগুলো তুলে আম দুধের মধ্যে দিন। কিছু আম কুচো কুচো করে রেখে দিতে হবে। বাটিতে ঢেলে আমের টুকরো সাজিয়ে ফ্রিজে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা ঠান্ডা আম ছানার পায়েস জামাই সহ সকলেরই মন ভরাবে এ কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়।
অনুলিখন: সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: অনির্বাণ সাহা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy