Advertisement
E-Paper

ভাগ হেপাটাইটিস ভাগ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) উদ্যোগে আজ ২৮ জুলাই পৃথিবী জুড়ে পালন করা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস ডে। হু-র হিসেব অনুযায়ী ২০১৫ সালে বিশ্বজুড়ে ৩২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ ক্রনিক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। ওই বছরেই পৃথিবীর ১০ লক্ষ ৩৪ হাজার মানুষ এই রোগে মারা যান। সচেতনতা আর সঠিক চিকিৎসা রুখে দিতে পারে হেপাটাইটিসের বাড়বাড়ন্ত। হেপাটাইটিস ও জন্ডিস নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি ভুল ধারণা ভেঙে আধুনিক চিকিৎসা করতে অনুরোধ করলেন গ্যাস্ট্রোএন্ট্রলজিস্ট ডা মহেশ কুমার গোয়েঙ্কা।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) উদ্যোগে আজ ২৮ জুলাই পৃথিবী জুড়ে পালন করা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস ডে। হু-র হিসেব অনুযায়ী ২০১৫ সালে বিশ্বজুড়ে ৩২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ ক্রনিক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। ওই বছরেই পৃথিবীর ১০ লক্ষ ৩৪ হাজার মানুষ এই রোগে মারা যান। সচেতনতা আর সঠিক চিকিৎসা রুখে দিতে পারে হেপাটাইটিসের বাড়বাড়ন্ত। হেপাটাইটিস ও জন্ডিস নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি ভুল ধারণা ভেঙে আধুনিক চিকিৎসা করতে অনুরোধ করলেন গ্যাস্ট্রোএন্ট্রলজিস্ট ডা মহেশ কুমার গোয়েঙ্কা।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ১৫:১৩
“এলিমিনেট হেপাটাইটিস”, এ বারের হেপাটাইটিস ডে-র স্লোগান।

“এলিমিনেট হেপাটাইটিস”, এ বারের হেপাটাইটিস ডে-র স্লোগান।

“এলিমিনেট হেপাটাইটিস”, এ বারের হেপাটাইটিস ডে-র এই স্লোগানকে বাস্তব করতে গেলে চাই সব মানুষের সহযোগিতা। ঠিক যে ভাবে গুটিবসন্তের ভাইরাসকে পৃথিবী ছাড়া করা হয়েছে, সে ভাবেই এই রোগের ভাইরাসদের বিদায় করতে হবে। পাঁচ ধরনের ভাইরাস হেপাটাইটিস রোগটি ডেকে আনে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই, এই পাঁচটি ভাইরাসের মধ্যে হেপাটাইটিস বি, সি এবং ডি এই তিন ভাইরাস সবথেকে মারাত্মক। এরা এক বার শরীরে প্রবেশ করলে আজীবনই ঘাপটি মেরে বসে থাকার চেষ্টা করে আর তিলে তিলে লিভারের বারোটা বাজায়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ক্রনিক হেপাটাইটিস। অসুখটা ক্রনিক হয়ে গেলে লিভার ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর চরম পরিণতি সিরোসিস অফ লিভার এবং লিভার ক্যানসার। অবশ্য অ্যাকিউট হেপাটাইটিসেও রোগী জটিল অবস্থায় পৌঁছে গিয়ে তার থেকে হেপাটিক কোমা এমনকী জীবনহানির আশঙ্কাও থাকে। তাই জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের কোনও রকম উপসর্গ দেখা গেলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

জীবাণুরা ঘাপটি মেরে বসে থাকে

জলবাহিত হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাস আক্রমণ করলে সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব। বিরল কয়েকটি ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা গেলেও সঠিক চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায়। হেপাটাইটিস বি ও সি-র ক্ষত্রে ডাক্তারবাবুদের কপালে ভাঁজ পড়ে, যদি অসুখটা ক্রনিক পর্যায়ে চলে যায়। হেপাটাইটস বি-র ক্ষেত্রে ১০০ জন আক্রান্ত হলে ৯০ জনেরই অ্যাকিউট সমস্যা হয়। বাকি ১০ জনের ক্ষেত্রে অসুখটা ক্রনিক হয়ে দাঁড়ায়। এই অসুখ ৬ মাসের কম সময় স্থায়ী হলে তা অ্যাকিউট, আরও বেশি হলে ক্রনিক। হেপাটাইটিস সি হলে শতকরা ৫০ জনেরই ক্রনিক পর্যায়ে পৌঁছয়।

হেপাটাইটিস হলে জন্ডিস ছাড়াও আরও কয়েকটি উপসর্গ দেখা যায়-

যেমন খাবার বিস্বাদ লাগে অরুচি হয় জ্বর বা জ্বরজ্বর ভাব থাকে রোগী সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠে হেপাটোমেগালি অর্থাৎ লিভার ফুলে যেতে পারে স্প্লিনেমেগালি অর্থাৎ প্লীহা বা স্প্লিন বড় হয়ে যায় লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে সামগ্রিক দূর্বলতা ও ক্লান্তি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে

আখের রস বা অড়হড় পাতার রস অপ্রয়োজনীয়

হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণে জন্ডিস হলে বেশির ভাগ মানুষই খাওয়া দাওয়া নিয়ে ভীষণই চিন্তায় পড়ে যান। অনেকের ধারণা, এই সময় হলুদ ছাড়া রান্না আর পেঁপে সেদ্ধ বা আখের রস না খেলে রোগ সারে না। ঘন ঘন গ্লুকোজের জল খাওয়া মাস্ট। আর এই রোগের একমাত্র দাওয়াই অড়হড় গাছের পাতার রস খাওয়া। অনেকেই হন্যে হয়ে এই পাতা খুঁজে বেড়ান। জেনে রাখুন, রাস্তা থেকে আখের রস কিনে খাওয়ালে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। গ্লুকোজের জল বা আখের রস জন্ডিস সারাতে পারে না। বরং অ্যাসিডিটি হয়ে রোগীর কষ্ট বাড়ে। শরীর হলুদ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে হলুদ খাওয়া বা না খাওয়ারর কোনও সম্পর্ক নেই। বরং হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে। তাই হেপাটাইটিস হলে বাড়ির স্বাভাবিক সব রান্নাই দিতে পারেন। কম তেল মশলাযুক্ত রান্না সবই খাওয়া চলে। এই অসুখ শুরু থেকে পুরোপুরি নিরাময় হতে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। এক নাগাড়ে শুয়ে না থাকলেও চলে। অফিস করা যায়, তবে বেশি ঘোরাঘুরি না করাই ভালো। বিলিরুবিন খুব বেশি হলে বা পেটে জল জমলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

টিকা নেওয়া জরুরি

লিভার ক্যানসারের এক অন্যতম কারণ ভাইরাল হেপাটাইটিস। হেপাটাইটিস বি ও সি লিভার ক্যানসার ডেকে আনে। হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে টিকা নিলে এই অসুখের হাত এড়ানো যায়। এ ছাড়া জল বাহিত হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধেরও ভ্যাক্সিন রয়েছে। বয়স্ক ও শিশুদের টিকা দিলে ভাল হয়।

আরও পড়ুন: কম বয়সেও ছানি, বাড়ছে ফাস্ট ফুডে

জেনে রাখুন তাইওয়ানে হেপাটাইটিস বি-র টিকা বাধ্যতামূলক করায় ও দেশে লিভার ক্যানসারের ঘটনা অনেক কমে গেছে। আমাদের দেশেও এই টিকা বাধ্যতামূলক করা দরকার। বাচ্চার জন্মের পরেই টিকা ও বুস্টার ডোজ দেওয়া থাকলে ভবিষ্যতে এই রোগের ঝুঁকি থাকে না।

হেপাটাইটিস প্রতিরোধ করুন ভাল থাকুন।

WHO World Hepatitis Day Celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy