নিখিল বাবুকে দেখে অবাক ওঁর সহকর্মীরা। এক সপ্তাহ আগেই অফিসের ক্যান্টিনে চা সিগারেট সহযোগে জমিয়ে আড্ডা দিলেন, আর এর মধ্যেই এই অবস্থা! নিজে উঠে বসার ক্ষমতাটুকুও নেই। ফ্যালফ্যাল করে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মাত্র ৪৭ বছরেই এক স্ট্রোকেই এই হাল! তাও ভাল প্রাণে বেঁচেছেন!...
স্ট্রোকের কবলে পড়ে শয্যশায়ী জীবন কাটানোর এমন ঘটনা হরবখতই শোনা যায়। ব্রেন স্ট্রোক এমনই খতরনাক অসুখ। প্রতি ছয় জন মানুষের একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। অথচ একটু সচেতন হলেই এই রোগের হাত এড়ানো যায় অনায়াসে। স্ট্রোক সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন বা ডব্লিউএসও ২০০৬ সালে ২৯ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই বছরের থিম ছিল- “কেন স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে সচেষ্ট হবেন?”
প্রতি দশটি মৃত্যুর একটি হয় স্ট্রোকের কারণে। আর পঙ্গুত্বের জন্য ঘর বন্দি হয়ে বাকি জীবন কাটানোর পিছনেও একটিই কারণ, তা হল ব্রেন স্ট্রোক। একটু সতর্ক হলেই এই মারাত্মক রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই প্রত্যেকেরই উচিত স্ট্রোকের কারণ ও তা প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা।
বিশ্বের ৩২টি দেশের বিভিন্ন রোগীর উপর সমীক্ষা করে ল্যানসেট জার্নালে তার ফল প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে স্ট্রোকের জন্যে দায়ী প্রধান মোট ১০টি কারণকে দায়ী করা হয়। এদের প্রতিটিই প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত চেক আপ আর সতর্কতা মেনে রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু বদল আনলে আচমকা মারাত্মক স্ট্রোকের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এ বার জেনে নেওয়া যাক কী কী কারণ স্ট্রোক ডেকে আনতে পারে।
আরও পড়ুন: জেনে নেওয়া যাক ১০ কারণ যা স্ট্রোক ডেকে আনতে পারে
একটু সতর্ক হলে প্রতিটি রিস্ক ফ্যাক্টরকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশেষ করে ব্লাড প্রেশার ও সুগার থাকলে নিয়মিত চেকআপ ও এক্সারসাইজ করে এবং সঠিক ডায়েট নিলে সার্বিক ভাবে ভাল থাকা সম্ভব।
স্ট্রোক ব্যাপারটা ঠিক কী
বেঁচে থাকার জন্যে আমাদের প্রতিটি কোষের প্রয়োজন অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত। মস্তিষ্কের কোষও তার ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ সংকীর্ণ বা রুদ্ধ হয়ে গেলে এবং আচমকা চর্বির ডেলা আটকে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হতে হতে অকেজো হয়ে যায়। এই ব্যাপারটাই স্ট্রোক।
আরও পড়ুন: স্ট্রোকের পরে সুস্থ হতে সময়ে চাই রিহ্যাবও
স্ট্রোক আটকাতে মাস্টার স্ট্রোক মারুন
প্রথমেই ওজন কমাতে সুষম খাবার খেতে হবে। রোজকার ডায়েটে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি ও ফল। আর সপ্তাহে অন্ত পাঁচ দিন আধ ঘণ্টা করে দ্রুত পায়ে হাঁটুন। ব্লাড প্রেশার আর সুগার থাকলে তা তো নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। আর স্মোকিং এর সঙ্গে ডিভোর্স মাস্ট। মন ভাল রাখুন, নিয়ম করে নিশ্ছিদ্র নিদ্রা দিন। আর ভুঁড়ি বাড়তে দেবেন না। তাহলেই আর আচমকা স্ট্রোকের কবলে পড়ে গাছের মত নট নড়নচড়ন হয়ে পড়ে থাকতে হবে না। তাও যদি আচমকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, হাত পা বা শরীরের কোনও এক দিক হঠাত অবশ লাগে, কিংবা চোখে দেখতে বা কথা বলতে অসুবিধে হয় অথবা ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নিজেরা ডাক্তারি না করে অবশ্যই হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হন। সেলফ মেডিকেশন নৈব নৈব চ।
গুড বাই স্ট্রোক মশাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy