Advertisement
E-Paper

কাঁটাহীন ইলিশে রকমারি নিরীক্ষা

সেকেলে মা-ঠাকুরমার সেই পুরনো ছড়ার কথা মনে পড়ে যেতে পারে পাত পেড়ে বসে! ‘ছি ছি ছি রানি রাঁধতে শেখেনি, শুক্তনিতে ঝাল দিয়েছে অম্বলেতে ঘি!’ সর্ষে বা ভাপার বদলে, চিজে মোড়া ইলিশের কাঁটাহীন শাঁস। কিংবা ইলিশের তেলযোগে ইলিশ ভাজার বিকল্প, বড়িভাজার ব্যাটারে মোড়া অভিনব ইলিশ ফ্রাই।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০১:১০

সেকেলে মা-ঠাকুরমার সেই পুরনো ছড়ার কথা মনে পড়ে যেতে পারে পাত পেড়ে বসে! ‘ছি ছি ছি রানি রাঁধতে শেখেনি, শুক্তনিতে ঝাল দিয়েছে অম্বলেতে ঘি!’

সর্ষে বা ভাপার বদলে, চিজে মোড়া ইলিশের কাঁটাহীন শাঁস। কিংবা ইলিশের তেলযোগে ইলিশ ভাজার বিকল্প, বড়িভাজার ব্যাটারে মোড়া অভিনব ইলিশ ফ্রাই। বেগুন-কালোজিরের চেনা ঝোলের বদলেও, অলিভ অয়েল, মল্ট ভিনিগার স্নাত বিজাতীয় ইলিশ। বাঙালির চিরকেলে ইলিশ-প্রীতির ব্যাকরণটাই ভেঙেচুরে একাকার শহুরে রেস্তোরাঁয়। নানা আঙ্গিকে হাজির ইলিশের কাঁটাহীন অবতার। কয়েক বছরের খরার পরে বাজারে তার দেখা মিলতেই বাঙালির প্রিয়তম মাছ নিয়ে সৃষ্টিশীলতার ফুল ফুটছে।

দক্ষিণ কলকাতার নয়া রেস্তোরাঁ সপ্তপদী-তে চলছে নানা নিরীক্ষা। কর্তা-কাম-শেফ রঞ্জন বিশ্বাসের মতে, ইলিশ নিয়ে মনটা খোলা রাখতে হবে। রেস্তোরাঁর স্টার্টারে, টোস্টের বিছানায় শায়িত মুচমুচে ইলিশ ফিঙ্গার কিংবা ইলিশ পপকর্ন। মেনকোর্সে চিনে সিচুয়ান সসে নাওয়া ধূমায়িত ইলিশ সিজলার। ইলিশের চেনা ঝোলও বেমালুম পাল্টে গিয়েছে। ধনে-পুদিনার মিশেলে বাঙালি ‘পেস্তো সস’ মিশিয়ে তৈরি ইলিশের পেস্তো নারকেলের স্ট্যু। চিংড়ির পুর ঠাসা মেক্সিকান রুটির সঙ্গতে সেঁকা ইলিশের সালাদও অনেকেরই মনে ধরেছে।

পূর্ব কলকাতার কে কে’জ ফিউশন-এ প্রদীপ রোজারিও চমকে দিচ্ছেন, ইলিশগন্ধী সুপের মেছো থুকপা বা চিনে সসে জারিত ইলিশ তন্দুরিতে। ওহ্ ক্যালকাটা-র সুবীর দেবের টেক্কা ধনেপাতা-পুদিনা-মেথির বেক্‌ড ইলিশ। কিছু কন্টিনেন্টাল হার্বসও সে স্বাদে মাত্রা জুড়েছে। সুবীরের মতে, ‘‘চেনা মশলায় রান্নার পদ্ধতিতে কিছু ভাঙচুরেও নতুন স্বাদের জন্ম দেয়।’’ যেমন আচার-মশলা, কাসুন্দি, নারকেলের মাখামাখি সামলে কুমড়ো পাতায় মুড়ে, হাঁড়ি ভরা ভাতের ভিতরে বিরিয়ানির মতো দমে পাকানো ‘আমতেল ইলিশ’।

কলকাতায় কাঁটাবিহীন ইলিশচর্চার পরম্পরা অবশ্য আজকের নয়। বর্ষা নামলেই পার্ক স্ট্রিটের বহু সাবেক রেস্তোরাঁয় এই মাছের রাজা-র ছবি দেওয়া পোস্টার দরজায় সাজানো হয়। রেস্তোরাঁর ‘স্মোক্‌ড হিলসা’র বিজ্ঞাপনও চোখে পড়ে। মোক্যাম্বো বা ‘মুল্যা রুজ’ এখনও সেই স্মোক্‌ড কিংবা গ্রিল্‌ড ইলিশ-রীতি অটুট রেখেছে। ধোঁয়াগন্ধ হাল্কা মিষ্টি সসে ইলিশের ফিলের সঙ্গে খানিকটা ডিমও মেলে মোক্যাম্বো-য়।

তবে এক যুগ আগে বোনলেস ইলিশকে গোটা কলকাতায় জনপ্রিয় করে তোলার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মার্কোপোলো-র। এই বর্ষায় তাদেরও কয়েকটি নতুন উপস্থাপনা রয়েছে। ক্যাপসিকাম রোস্ট করে চাটনি বানিয়ে ইলিশ সাঁতলে তৈরি হয়েছে স্প্যানিশ পদ রোমেস্কো। ইলিশের গায়ে মাখোমাখো ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা, ক্রিম মিলে তৈরি হয়েছে সিলান্ত্রো ইলিশ। আবার ক্যারিবিয়ান রান্না এসকভিচ-এর আদলে ইলিশের সঙ্গে মিলেছে পেঁয়াজ, গাজর, অলিভ অয়েল ও মল্ট ভিনিগার।

ইলিশে অভ্যস্ত বাঙালির জিভে, কাঁটাবিহীন মাছের স্বাদ অবশ্য খানিক পানসে লাগে। মার্কোপোলো-র এগজিকিউটিভ শেফ অমিতাভ চক্রবর্তীর মতে, বোনলেস ইলিশে এই স্বাদের ঘাটতি মেটানোই হল শেফের চ্যালেঞ্জ। অনেক রেস্তোরাঁয় চেনা স্বাদ জিইয়ে রাখতে ইলিশের কাঁটামুড়োর স্টক ফুটিয়ে তা যত্ন করে মেশানো হয়। বোহেমিয়ান রেস্তোরাঁর জয়মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইলিশ ডিমের ললিপপ থেকে ইলিশের কনসোমে স্যুপে তাক লাগিয়েছেন। তবে তাঁর মন্ত্র, ‘‘এক্সপেরিমেন্ট করলেও ইলিশকে সম্মান করুন! কোন স্বাদগন্ধ ইলিশের সঙ্গে খাপ খাবে আর কোনটা খাপ খাবে না, সেইটে দয়া করে মাথায় রাখুন।’’

Hilsa Flavour
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy