E-Paper

কেন প্রয়োজন ভিটামিন

এই ভিটামিনের ঘাটতিতে দেখা দিতে পারে রোগবালাই। খাদ্যতালিকায় কী কী রাখবেন, জেনে নিন।

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ০৮:৪৩
An image of Dairy Products

ভিটামিন বি১২ জলে দ্রবণীয়, যা ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের অংশ। —ফাইল চিত্র।

যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্য দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে। দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিনকে দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা জলে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন বি, সি, এবং ভিটামিন পি এবং ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই, কে।

ভিটামিন বি১২ জলে দ্রবণীয়, যা ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের অংশ। এটি শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। শরীরে ডিএনএ থেকে শুরু করে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা নেয় এই ভিটামিন। তা সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে এই ভিটামিন নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেকের শরীরেই এই ভিটামিনের ঘাটতি লক্ষ করা যায়। ফলে দেখা দেয় নানা অসুখ। পরিসংখ্যান বলছে ভারতের প্রায় ৪৭ শতাংশ মানুষ এই ভিটামিনের অভাবে ভুগছেন। পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরীর মতে, বিশেষত, ভিগান ও নিরামিষাশীদের মধ্যে এই ঘাটতি বেশি দেখা যায়।

কতটা প্রয়োজন হয় শরীরের?

ব্যক্তিবিশেষে শরীরে এই ভিটামিনের প্রয়োজনমাত্রা আলাদা হলেও, সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ২.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১২ প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী নারীর দৈনন্দিন ২.৬ মাইক্রোগ্রাম আর সন্তানকে স্তন্যপান করানো মহিলাদের ২.৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি১২-এর প্রয়োজন। বয়সের উপর ভিত্তি করেও অবশ্য এই চাহিদার কম-বেশি হয়। জলে দ্রবণীয় হওয়ায় শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন বি১২ কখনও থাকে না। দেহের চাহিদা পূরণ হয়ে গেলে অতিরিক্ত ভিটামিন মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়।

ভিটামিন বি১২-এর প্রয়োজনীয়তা

শরীরে লোহিত রক্তকণিকা গঠনের পাশাপাশি স্বাভাবিক কোষ বিভাজন, হাড়, ত্বক, দাঁত ও নখের গঠন সুস্থ রাখতে প্রয়োজন হয় ভিটামিন বি১২। মেটাবলিজ়ম ও ক্যানসার প্রতিরোধেও ভিটামিন বি১২-এর ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া, এই ভিটামিন ত্বক এবং মাথার খুলিকে আর্দ্র রাখে। এগজ়িমা প্রতিরোধে ও ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। ভিটামিন বি১২ শরীরে অ্যামিনো অ্যাসিডের ক্ষতিকারক প্রভাব রোধ করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। অ্যালঝাইমারস এবং পারকিনসনসের মতো স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয়জনিত রোগের বিপদও কমায়। চোখের জন্যও ভিটামিন বি১২ উপকারী।

বি১২ ঘাটতির লক্ষণ

কোয়েলের মতে, দিনভর ক্লান্তি এবং দুর্বল ভাব এই ভিটামিন ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি১২-এর অভাবে শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয় না, ফলে অক্সিজেন চলাচল ব্যাহত হয়। দেখা দিতে পারে নিঃশ্বাসের সমস্যাও। ভিটামিন বি১২-এর অভাবে মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাঘোরা ইত্যাদি সমস্যাও হতে পারে। ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়ার সঙ্গে ক্ষুধামান্দ্য, ডায়রিয়া, পেশির দুর্বলতা দেখা দেয়। শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাবে জিভ সাদা দেখায়। চোখের দৃষ্টি কমে আসে। এর ঘাটতিতে শরীরে রক্তশূন্যতাও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির কারণে স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে। ফলে হাঁটতে-চলতে অসুবিধে হয়। শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় বিঘ্ন ঘটে।

ঘাটতি কেন হয়?

আমাদের শরীরে ভিটামিন বি১২ তৈরি হয় না। খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমেই শরীরে তার চাহিদা মেটে। পুষ্টিবিদ কোয়েল জানান, অনেক সময়েই ডায়েটের মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন বি১২ পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছয় না। তা ছাড়া, অ্যাট্রোপিক গ্যাসট্রিক, অতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি বেশকিছু কারণেও ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি হয়। কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াতেও শরীরে ভিটামিন শোষণ কমে যায়। মূলত প্রাণিজ খাবার থেকেই এই ভিটামিনপাওয়া যায়। তাই ভিগান বা নিরামিষাশীদের শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি হয়।

ঘাটতি মেটাতে কী খাবেন?

সাধারণভাবে ওষুধ নয়, খাদ্যাভ্যাস বদলের মাধ্যমেই শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি মেটানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। রোজকার খাদ্যতালিকায় ডিম, মাছ, মাংস, চিকেন ইত্যাদি রাখলেই বি১২-এর ঘাটতি মিটতে পারে। মাছের মধ্যে টুনা, স্যামন ইত্যাদি বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে তুলনামূলক ভাবে ভিটামিন বি১২ বেশি থাকে। তাছাড়া ঢেকি ছাঁটা চাল ও বিভিন্ন ধরনের গোটা শস্য, মাশরুম, দুধ, ও দুগ্ধজাত খাবারেও কিন্তু ভিটামিন বি১২ থাকে। এখন বাজারজাত বেশ কিছু খাবারে আলাদা করেও মেশানো হচ্ছে এই ভিটামিন। প্রয়োজনে সেই সকল খাবারও কিনে খেতে পারেন। তবে, মনে রাখবেন, সব খাবার কিন্তু সকলের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। তাই এই বিষয়ে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। অতিরিক্ত শারীরিক অসুস্থতায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ওষুধও লাগতে পারে

ভিটামিনের ঘাটতির কারণে হওয়া গুরুতর পরিস্থিতি তড়িঘড়ি সামাল দিতে চিকিৎসকেরা অনেক সময়েই ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন। তবে এই ওষুধ কিন্তু আজীবন খেতে হয় না। চাহিদা মিটে গেলেই, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vitamin B12 Health Tips

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy