Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
NOBEL COLONAVIRUS

প্রাণঘাতী ভাইরাসের খোঁজ মিলল! ভারতেও জারি সতর্কতা

হঠাৎ আমদানি হওয়া এই ভাইরাস নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় চিকিৎসক মহলও।

নোভেল কোরোনাভাইরাস নিয়ে তটস্থ গোটা বিশ্ব। প্রতীকী চিত্র।

নোভেল কোরোনাভাইরাস নিয়ে তটস্থ গোটা বিশ্ব। প্রতীকী চিত্র।

মনীষা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ১৩:৫৮
Share: Save:

প্রকৃতিতে নতুন নয়। তবে আক্রমণ শানানোর কৌশল ও ভয়াবহতার ধরনে আলাদা। নতুন এই ভাইরাসের হানায় ত্রস্ত চিকিৎসা মহল। নাম নোভেল কোরোনাভাইরাস (nCoV)। চিনের উহানে প্রথম এই ভাইরাসের দেখা মিলেছে। উহানে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। রোগের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে তাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরেও। সেখানেও মারা গিয়েছেন মোট ৫ জন।

সংক্রমক এই ভাইরাস ঠেকাতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে কড়া নজরদারি শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিন, তাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে ঘুরে আসা ভারতীয় কিংবা সে সব দেশ থেকে এ দেশে আসা মানুষজনদের জন্য আরও কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওই সব দেশ থাকা আসা কারও সর্দি-কাশির উপসর্গ থাকলে তাঁকে নিজের দেশে ফেরানোর চিন্তাভাবনাও করছে ভারত সরকার। আর ভারতীয়দের ক্ষেত্রে শুরু হচ্ছে রোগ প্রতিরোধের চিকিৎসা।

হঠাৎ আমদানি হওয়া এই ভাইরাস নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় চিকিৎসক মহলও। আসলে একটি ভাইরাস বিভিন্ন সময় তার জিনগত মিউটেশন ঘটিয়ে নানা ধরনের অসুখ তৈরি করতে পারে। তার হাতেগরম উদাহরণ ‘ফ্ল্যাবি ভাইরাস’। ডেঙ্গি ও ইয়েলো ফিভার দুই রোগেরই কারণ এটি। নোভেল কোরোনাভাইরাস নিয়েও একই ভাবে শঙ্কিত চিকিৎসকরা। মূলত তাঁদের উপরই এর হানা মারাত্মক, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই শিশু ও বয়স্করাই এর ‘সফট টার্গেট’।

আরও পড়ুন: টিউমারের ম্যালিগন্যান্সি ঠেকাতে সাহায্য করে এই সব্জি, প্রতি দিন পাতে রাখুন একে

ভাইরাসের উৎস

নোভেল কোরোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনও কারণ এখনও গবেষকরা বুঝে উঠতে না পারলেও অনুমান করা হচ্ছে পশু-পাখির সংস্পর্শে থাকা মানুষজনই মূলত এই ভাইরাসের শিকার। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে এখনও পৌঁছতে পারেনি গবেষক ও চিকিৎসা মহল। চিনে প্রথম দেখা গেলেও সিঙ্গাপুর এবং তাইল্যান্ডেও অসুখ ছড়িয়ে পড়েছে।

চিনের উহানে প্রথম এই ভাইরাসের দেখা মিলেছে।

রোগের উপসর্গ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, ‘‘এই ভাইরাসের কারণে সর্দি-কাশির উপসর্গ তাকে। সাধারণত অসুখ বেড়ে নিউমোনিয়ায় পরিণত হতে পারে। সঙ্গে প্রবল তাপমাত্রা থাকে শরীরে। কারও ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হয়। সাধারণত সর্দি-কাশির এই ভাইরাস ৬ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত সহজগম্য। তাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এর শিকার হতে পারেন যে কেউ।’’

এই ভাইরাসের প্রতিষেধক নেই কেন?

অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, সারা বিশ্ব জুড়েই প্রায়ই অকারণ ও অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে শরীরে সুপারবাগসের উপস্থিতি সমস্যায় ফেলছে রোগী ও চিকিৎসককে। যখন-তখন ইচ্ছে মতো অ্যান্টিবায়োটিক নিতে নিতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’। এর হাত ধরেই গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ে ভাইরাসের বিপদ।

আরও পড়ুন: কেবল ধূমপান নয়, দূষণ থেকেও হয় সিওপিডি, সুস্থ থাকতে কী কী করবেন?​

সুপারবাগস কী?

আর এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ গৌতম বরাটের কথায়, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে ও ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে শরীর নিজের মধ্যেই সেই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ তৈরি করে। ফলে ঘন ঘন সেই ওষুধ নেওয়ার ফলে একটা সময়ের পর তা আর শরীরে কাজ করে না। শরীরে উপস্থিত ব্যাকটিরিয়া ওষুধের সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। জিনগত মিউটেশনের ফলে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে সে। অতিরিক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন সেই জীবাণুদেরই চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘সুপারবাগস’। আর এই সুপারবাগই জন্ম দেয় নিত্যনতুন ভাইরাসের। যার প্রকৃতি বুঝতেই সময় লেগে যায় অনেক। তাই বাগে আনা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে ওঠে।

প্রতিরোধের উপায়

চিকিৎসকদের মতে, যে হেতু ভারতে এই ভাইরাসের উৎপত্তি নয়, তাই এর প্রতিরোধ করতে গেলে আপাতত ভাবে বিমানবন্দরে নজরদারি চালানোই একমাত্র উপায়। এ পদ্ধতিতেই কয়েক দশক আগে সার্স ভাইরাসের হানা ঠেকিয়ে দিয়েছিল ভারত। ভাইরাসের হানা রুখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে এমন ডায়েটেও রাখতে হবে আস্থা।

ভ্রম সংশোধন

(পূর্বে এই প্রতিবেদনে ভাইরাসটির নাম ‘নোবেল কোরোনাভাইরাস’ লেখা হয়েছিল। ভাইরাসটির প্রকৃত নাম ‘নোভেল কোরোনাভাইরাস’। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য় আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE