Advertisement
E-Paper

ই-সিগারেট কি সিগারেটের থেকেও ক্ষতিকর?

অনেকদিন ধরেই সিগারেট ছাড়তে চাইছিলেন বেহালার বাসিন্দা সুদীপ্ত দাশ। অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। শেষে বিজ্ঞাপন দেখে ই-সিগারেট ব্যবহার করা শুরু করলেন। কিন্তু দিনকয়েক পর থেকেই গলায় অস্বস্তি হতে শুরু করল, সঙ্গে দমের কষ্ট এবং অ্যালার্জি। চিকিৎসক জানালেন, ই-সিগারেট থেকেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:৫৭
Share
Save

অনেকদিন ধরেই সিগারেট ছাড়তে চাইছিলেন বেহালার বাসিন্দা সুদীপ্ত দাশ। অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। শেষে বিজ্ঞাপন দেখে ই-সিগারেট ব্যবহার করা শুরু করলেন। কিন্তু দিনকয়েক পর থেকেই গলায় অস্বস্তি হতে শুরু করল, সঙ্গে দমের কষ্ট এবং অ্যালার্জি। চিকিৎসক জানালেন, ই-সিগারেট থেকেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বন্ধুদের দেখিয়ে খুব কায়দা করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কলকাতার এক নামী কলেজের ছাত্রী রিমিতা বলেছিল, ‘‘এটা ই-সিগারেট। এতে তামাক থাকে না। একেবারেই ক্ষতিকারক নয়।’’ রিমিতার কথা শুনে তার কয়েকজন বন্ধুও ই-সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু কয়েকমাস পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ল রিমিতাই। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিলেন, অবিলম্বে ছাড়তে হবে এই নেশা।

তবে শুধু সুদীপ্তবাবু বা রিমিতাই নয়, সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেট ব্যবহার করে ইদানীং সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকেরাও মানুষকে এই বস্তুটি ব্যবহার করা থেকে সতর্ক করছেন বারবার।

কী এই ই-সিগারেট?

সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ‘ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম’ (এন্ডস) বা ‘ইলেকট্রনিক সিগারেট’ ব্যবহার করা হয়। সিগারেটের মতই দেখতে ফাইবার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এই ব্যাটারিচালিত যন্ত্রগুলির মধ্যে একটি প্রকোষ্ঠ থাকে। তার মধ্যে ভরা থাকে বিশেষ ধরনের তরল মিশ্রণ। যন্ত্রটি গরম হয়ে ওই তরলের বাষ্পীভবন ঘটায় এবং ব্যবহারকারী সেই বাষ্প টেনে নেয় ফুসফুসে, যা ধূমপানের অনুভূতি দেয়। এই পদ্ধতিকে বলে ‘ভেপিং’।

অনেকেই মনে করেন বা বিজ্ঞাপনেও দেখানো হয় ই-সিগারেট ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে সাহায্য করে। কিন্তু এখানেই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে এর কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর প্রভাব সাধারণ সিগারেটের চেয়েও ক্ষতিকারক বলে দাবি করছেন তাঁরা।

তাঁরা জানাচ্ছেন, ই-সিগারেটের তরল মিশ্রণ (ই-লিকুইড)-এর মধ্যে থাকে প্রপেলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন, পলিইথিলিন গ্লাইসল, নানাবিধ ফ্লেভার এবং নিকোটিন। গরম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রাসায়নিক গুলি থেকে সাধারণ সিগারেটের ধোঁয়ার সমপরিমাণ ফরমালডিহাইড উৎপন্ন হয়। এ ছাড়াও ই-সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে অতিসূক্ষ রাসায়নিক কণা যা ভীষণই ক্ষতিকারক। এর থেকে গলা-মুখ জ্বালা, বমিভাব এবং ক্রনিক কাশি দেখা দিতে পারে।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত এর মধ্যে থাকা নিকোটিনের পরিমাণ নিয়ে। ক্যানসার চিকিৎসক এবং ভয়েস অফ টোব্যাকো ভিকটিমের সক্রিয় সদস্য সোমনাথ সরকার জানাচ্ছেন, ই-সিগারেটের প্রধান উপকরণ নিকোটিন থেকে দ্রুত আসক্তি তৈরি হয়। সিগারেট ছাড়তে চেয়ে যাঁরা এটি ব্যবহার করেন তাঁদের এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা থেকে দেখা দিতে পারে ফুসফুসের বিভিন্ন অসুখ।

তবে ই-সিগারেটের মধ্যে থাকা নিকোটিন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে অনেকদিন থেকেই। প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে সরাসরি নিকোটিন ব্যবহার আদৌ করা যায় কি না? আইন মোতাবেক নিকোটিন ‘শিডিউল কে’ ড্রাগ এবং এর সরাসরি ব্যবহারের মাত্রা ২ থেকে ৪ মিলিগ্রাম। তাও নিকোটিন ছাড়ানোর চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে লজেন্স অথবা চিউয়িং গামের মধ্যে ওই নির্দিষ্ট মাত্রার নিকোটিন ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ই-সিগারেটে যেভাবে রাসায়নিক নিকোটিন ব্যবহার করা হয় তা ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) দ্বারা অনুমোদিত নয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে মৃত্যুও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

বছর দু’য়েক আগে ভারত সরকার চিকিৎসক, বিজ্ঞানী এবং পরিবেশকর্মীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি সব দিক খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রককে ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করেছিল। প়ঞ্জাব, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্র সরকার আগেই হুঁকা, ই-সিগারেট ইত্যাদি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যুবসমাজের মধ্যে এর চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত অনলাইনেই রমরমিয়ে বিকোচ্ছে ই-সিগারেট। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা।

ক্যানসার চিকিৎসক এবং ভয়েস অফ ক্যানসার ভিকটিমের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গৌতম মুখোপাধ্যায়ের মতে, ই-সিগারেটের মধ্যে একটা চমকপ্রদ ব্যাপার রয়েছে যা দেখে য়ুবসমাজ সবচেয়ে বেশি করে আকৃষ্ঠ হচ্ছে। কিন্তু এর থেকে ক্ষতি হয়না এই ধারণা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কখনই কাউকে ই-সিগারেট খেতে বলি না। এর ধোঁয়ায় এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলি থেকে ক্যনসার হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে।’’

একই মত সোমনাথবাবুরও। তিনি জানাচ্ছেন, বিজ্ঞাপন দেখে মানুষ ভুল বুঝছে। সবচেয়ে বেশি আসক্ত হচ্ছে যুবসমাজ। ধূমপান নিষিদ্ধ এমন ক্লাব অথবা পানশালাতেও ই-সিগারেট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় আর তাতেই এর চাহিদা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘ই-সিগারেট দিয়ে কোনওদিন সিগারেট ছাড়া যায়না। বরং বেশি খরচ করে মানুষ আরও বড় বিপদ ডেকে আনছে। জাপানে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ই-সিগারেট সাধারণ সিগারেটের চেয়ে দশ গুণ বেশি ক্ষতিকারক। আমরা সিগারেটের পাশাপাশি এর বিরুদ্ধেও সচেতনতা গড়ে তুলতে চাইছি।’’

e-cigarette cigarette harmful nicotin lifestyle

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।