Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মুখের চামড়ায় বলিরেখা ডেকে আনছে মোবাইলও

নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষকের দাবি, ২০ মিনিট কম্পিউটারের সামনে কাজ করা আর রোদে থাকার মধ্যে তফাৎ খুব বেশি নেই।

চিরন্তন রায়চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

ভরদুপুরের রোদের মতোই চামড়ার ক্ষতি করতে পারে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইলের নীলচে আলো!

এমনই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন গবেষক, চিকিৎসকের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ওই নীল আলো মুখে বলিরেখা বাড়ায়, কালচে ছোপ ফেলে হাতে, শিথিল করে গলার চামড়াও।

নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষকের দাবি, ২০ মিনিট কম্পিউটারের সামনে কাজ করা আর রোদে থাকার মধ্যে তফাৎ খুব বেশি নেই। দু’ক্ষেত্রেই সমান ক্ষতি হয় মুখের ত্বকের। একই ক্ষতি করে স্মার্টফোনের নীল আলো।

কলকাতার ত্বক চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষও এ বিষয়ে অনেকটা একমত। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই বেশির ভাগ সময়ে ঘর বা অফিসে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপে ব্যস্ত থাকেন। ওই সব যন্ত্রের নীলচে আলো সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির মতোই ত্বকে কালচে ছোপ ফেলতে পারে। তাতে ত্বকের স্থিতিস্থাপক তন্তু বা কোষ (ইলাস্টিক টিস্যু) নষ্ট হয়। অকাল বার্ধক্যের ছাপ পড়ে মুখে।’’

ত্বক চিকিৎসক অশোককুমার ঘোষাল এই তত্ত্ব মেনে নিলেও জানিয়েছেন, এখনও বিষয়টি নিয়ে তেমন সচেতনতা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসার পরিভাষায় একে ফোটো-ডার্মাটাইটিস বলা যায়। সূর্যের আলোয় মিনিট পাঁচেক থাকলে ত্বকের যে ক্ষতি হয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার, মোবাইলের আলো মুখে পড়লেও তেমনই ক্ষতি হতে পারে।’’

আর এর ত্বক চিকিৎসক সুব্রত মালাকার বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষার প্রয়োজন। তবে দেখা গিয়েছে, যাঁরা দিনের অনেকটা সময় ল্যাপটপের সামনে থাকেন, তাঁদের মুখের চামড়ায় প্রভাব পড়ছে। ত্বকে মেলানিনের অদলবদলই এর কারণ হতে পারে।’’

নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে যে সূর্যের ‘আলট্রাভায়োলেট’ রশ্মির মতোই স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার বা ট্যাবলেট থেকে নির্গত আলো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য দায়ী। গবেষকদের বক্তব্য, ওই সব যন্ত্র থেকে বের হয় ‘হাই এনার্জি ভিজিবল লাইট’ (এইচইভি আলো)। ওই তরঙ্গমাত্রার আলো সূর্যালোকেও থাকে। তা থাকে ঘরের সিএফএল আলোতেও। রোদে অনেক ক্ষণ থাকলে যেমন মুখের চামড়া জ্বলে যাওয়ার অনুভূতি হয়, তেমনটা হয় না ওই নীল আলোয়। কিন্তু ক্ষতি হয় একইরকম। গবেষকদের দাবি, অতিবেগুনি রশ্মির থেকে ত্বকের ১০০ ন্যানোমিটার গভীরে পৌঁছতে পারে ‘এইচইভি’ বা নীলচে আলো। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় যুক্ত ছিলেন মেরি লগ। গবেষণাপত্রে তিনি লিখেছেন— ‘‘ওই সব যন্ত্র যোগাযোগ বা বিনোদনের মাধ্যম। তাই সেগুলির সঙ্গে জড়িত বিপদের কথা অনেকেরই নজরে পড়ে না।’’

তবে কলকাতার চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, ত্বকে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে, নীল আলোর প্রভাব নিয়ে ততটা হয়নি। ভবিষ্যতে নয়া গবেষণায় এ বিষয়ে আরও অনেক তথ্য সামনে আসবে বলে বক্তব্য তাঁদের।

আপাতত নীলচে আলোর প্রভাব রুখতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সঙ্গে মোবাইল বা কম্পিউটারের পর্দায় আলো কমিয়ে রাখার কথাও বলেছেন। সঞ্জয়বাবুর বক্তব্য, নীলচে আলোর প্রভাব রুখতে ‘ব্রড স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন’ ব্যবহার করাই ভাল। অশোকবাবুর মন্তব্য, ‘‘সিগারেট থেকে যে ক্যানসার হতে পারে তা আগে কেউ জানতেন না। ঠিক সে ভাবে এখনও নীলচে আলো থেকে ত্বকের বুড়োটে হওয়ার কথাও কেউ ভাবতে পারেন না। ভবিষ্যতে হয়তো ভাববেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mobile light wrinkles Face
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE