Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতাল

প্রথম বর্ষাতেই জলে ডুবেছে চত্বর, চিকিৎসা নিয়েও ক্ষোভ রোগীর

বর্ষার শুরুতেই জল উঠে এসেছে হাসপাতাল চত্বরে। সংলগ্ন পুকুরে জমেছে পানা। শৌচালয়গুলি প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য। দেওয়ালে পানমশলা, গুটখার দাগ। দাঁতের চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্র দু’বছরের বেশি সময় ধরে অচল। দু’বছর ধরে মিলছে না ইসিজি পরিষেবা। বহির্বিভাগে অনেক সময়েই চিকিৎসকের দেখা মেলে না বলেও অভিযোগ। এই বেহাল দশা ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালের। সম্প্রতি রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে হাসপাতালের খোলনলচে বদলে দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হলেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর তাতে সম্মতি দেয়নি।

বৃষ্টি হলে এ ভাবেই ঢুকতে হয় হাসপাতালে। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

বৃষ্টি হলে এ ভাবেই ঢুকতে হয় হাসপাতালে। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০২:১৭
Share: Save:

বর্ষার শুরুতেই জল উঠে এসেছে হাসপাতাল চত্বরে।
সংলগ্ন পুকুরে জমেছে পানা।
শৌচালয়গুলি প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য। দেওয়ালে পানমশলা, গুটখার দাগ।
দাঁতের চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্র দু’বছরের বেশি সময় ধরে অচল। দু’বছর ধরে মিলছে না ইসিজি পরিষেবা। বহির্বিভাগে অনেক সময়েই চিকিৎসকের দেখা মেলে না বলেও অভিযোগ।
এই বেহাল দশা ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালের। সম্প্রতি রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে হাসপাতালের খোলনলচে বদলে দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হলেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর তাতে সম্মতি দেয়নি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, ডোমজুড় ও জগৎবল্লভপুর দু’টি হাসপাতালই একই বিধানসভা কেন্দ্রের (জগৎবল্লভপুর) অন্তর্গত। তাই এক সঙ্গে দু’টিকে সংস্কারের অনুমোদন দেওয়া যায়নি। চলতি বছরে জগৎবল্লভপুর হাসপাতাল সংস্কারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী বছর ডোমজুড় হাসপাতালের ভাগ্য খুলতে পারে।

ডোমজুড় ব্লকে ১৮টি পঞ্চায়েত। প্রায় সব ক’টিরই বাসিন্দারা এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। এলাকায় দুর্ঘটনা হলে প্রাথমিক ভাবে এখানেই আনা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৫০০ রোগী বহির্বিভাগে আসেন। অন্তর্বিভাগের আসন প্রায়ই ভর্তি থাকে। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের ভিতরে প্রতি বর্ষাতেই জল জমে যায়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সম্প্রতি বৃষ্টির পরে হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা গিয়েছে, চারপাশে জমে রয়েছে নোংরা জল। কফ পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে বেড়ে উঠেছে ঘাস।

রোগীদের ক্ষোভ, প্রতি বার বর্ষার সময়েই হাসপাতাল চত্বরের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। হাসপাতাল সংলগ্ন নিকাশি-নালা উপচে গিয়েই সমস্যা তৈরি হয়। প্রায় দু’বছর ধরে অকেজো হয়ে রয়েছে দাঁতের চিকিৎসার ‘ডেন্টাল চেয়ার’। ফলে, মিলছে না যথাযথ পরিষেবা। দু’বছর ধরে ইসিজি যন্ত্র না থাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হচ্ছে না। অব্যবস্থা রয়েছে আরও।

অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন হাসপাতালের এক কর্তা। তিনি জানান, আধুনিক ‘ডেন্টাল চেয়ার’টি অকেজো থাকায় পুরনো চেয়ারে দাঁতের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই। দু’বছর আগে পিপিপি (পাবলিক ও প্রাইভেট) মডেলে হাসপাতালে ইসিজি পরিষেবা দেওয়া হতো। তা এখন বন্ধ রয়েছে। যন্ত্রটি আনার চেষ্টা চলছে। নতুন এক্স-রে যন্ত্র আনার কথাবার্তা চলছে।

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতরে ডেন্টাল চেয়ার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নিকাশি নালা সংস্কারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে ইতিমধ্যেই মৌখিক অনুরোধ করা হয়েছে। ব্লকে স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈঠক হলে ফের বিষয়টি তোলা হবে।’’ ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ দীপক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সম্প্রতি পঞ্চায়েত সমিতির তহবিল থেকে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের ছাদ সংস্কার করা হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তহবিল থেকে হাসপাতালে প্রতীক্ষালয় তৈরির অনুমোদন মিলেছে। হাসপাতাল সংলগ্ন নিকাশি-নালাটি সংস্কারের জন্য ডোমজুড় পঞ্চায়েতকে অনুরোধ করা হবে। বিধায়কের কাছে হাসপাতালের উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি।’’

স্থানীয় বিধায়ক তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোল্লা জানান, ডোমজুড় ও জগৎবল্লভপুর এই দু’টি হাসপাতালের আমূল সংস্কারের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সম্মতি চাওয়া হয়েছিল। জগৎবল্লভপুর হাসপাতালের জন্য সেই সম্মতি মিললেও ডোমজুড়ের জন্য মেলেনি। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত হাসপাতাল সংস্কারের কাজ চালানোর জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছি। সেই টাকায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE