Advertisement
E-Paper

টিকাকরণই রুখতে পারে হাম-পক্স

হাম, চিকেন পক্স কোনও মারাত্মক রোগ নয়। তবে খুব কষ্টদায়ক। কারও জীবনে একবার হলে আর হয় না বলে মনে করা হয়। টিকা নেওয়া থাকলে এই রোগ প্রশমিত হয়। জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়।হাম, চিকেন পক্স কোনও মারাত্মক রোগ নয়। তবে খুব কষ্টদায়ক। কারও জীবনে একবার হলে আর হয় না বলে মনে করা হয়। টিকা নেওয়া থাকলে এই রোগ প্রশমিত হয়।

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০২:১০
 রোগী দেখছেন চিকিৎসক। নিজস্ব চিত্র

রোগী দেখছেন চিকিৎসক। নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: বসন্তকালেই সাধারণত হাম, পক্স এগুলি হয় কেন?

উত্তর: শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুর মধ্যের ঋতু কে আমার বসন্ত কাল বলে জানি। ঋতু পরিবর্তনের এইসময়ে আবহাওয়ার রূপান্তর ঘটে। সারাদিনে আবহাওয়ার তারতম্যের ফলে এবং নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় বাতাসে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু জন্মায়। শীত কালে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ভাইরাস জন্ম নেয় তার ফলে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। বসন্ত রোগ বলতে আমরা যেটা বুঝি পক্স। পক্স দুই রকমের হয় ১) স্মল পক্স ২) চিকেন পক্স। স্মল পক্স টিকাকরণের জন্য এখন আর হয় না বললেই হয়। আর চিকেন পক্স ভেরিসলা জস্টার নামক ভাইরাস থেকে হয়। এটি মারাত্মক রোগ নয়। তবে খুব কষ্টদায়ক। কারও জীবনে একবার হলে আর হয় না বলে মনে করা হয়। টিকা নেওয়া থাকলে এই রোগ প্রশমিত হয়।

প্রশ্ন: এই রোগের উপসর্গ কি?

উত্তর: পক্স হলে চারদিন আগে থেকে জ্বর আসে পরে সারা শরীরে ফোস্কার মত ছোট আকারে বের হয়। ধীরে ধীরে জলভরা ফোস্কার মতো আকার নেয়। পরে ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়। ৭-১০ দিন পর থেকে তা শুকোতে থাকে। শুকিয়ে যাওয়ার পরে র‌্যাশ থেকে খোসা উঠতে শুরু করে। হাম একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। আর এন এ ভাইরাস থেকে এই রোগ হয়। এই রোগের প্রথমদিককার উপসর্গগুলো অনেকটা ঠাণ্ডা লাগার মতো। প্রথমে জ্বর হয়। অল্প জ্বর ক্রমশ বাড়তে থাকে, তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে জ্বর আরও বাড়ে। এরপর সর্দি ও কাশি হয়। প্রথমদিকে কপালে কেশ-রেখার ঠিক নীচে আর কানের পেছনে দেখা যায় হালকা গোলাপি বা লালচে র‌্যাশ। এর দু’একদিনের মধ্যে তা ছড়িয়ে যায় সারা শরীরে, জ্বরও কমে যায়। হালকা গোলাপি র‌্যাশ ৫-৭ দিনের মধ্যে হালকা বাদামি হতে হতে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়। সব মিলিয়ে রোগটা মোটামুটি সাত থেকে দশ দিন ভোগায়।

প্রশ্ন: চিকেন পক্স বা হাম কেন হয়?

উত্তর: ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে এই রোগ সাধারণত হয় না। এর প্রকোপও কম হয়। শিশুদের দু’বছরের মধ্যে দু’বার এই টিকা দেওয়া হয়। এটি ভাইরাস ঘটিত ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগ শীত কালের শেষ ও বসন্ত কালে বেশি হয়। সারা শরীর জ্বালা করে। অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ আছে। র‌্যাশ বের হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োগ করলে অনেক কম র‌্যাশ বের হয়। জ্বালা, যন্ত্রণা থেকে উপশম পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: রোগীর পরিচর্যা কেমন ভাবে করা উচিত?

উত্তর: এই সময় রোগীদের আলাদা ঘরে মশারির মধ্যে রাখতে হয়। রোগীর ঘরটিকে দিনে দু’বেলা পরিষ্কার রাখতে হবে। বিছানার চাদর প্রত্যেক দিন বদলে দিতে হবে। রোগীকে প্রত্যেক দিন স্নান করালে ভালো হয়। পরিবারের নির্দিষ্ট একজন রোগীর দেখভাল করলে ভালো হয়। যিনি দেখভাল করবেন তিনি যেন ভালো করে হাত ধুয়ে খাবার খান। ভাইরাস জনিত রোগে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। জ্বর ও ফোস্কা হওয়ায় সারা শরীরে চুলকানির তীব্রতা কমাতে অনেক সময় অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। রোগীর হাতের নখ কেটে দিতে হয়। অনেক সময় রোগীর নখ বড়ো থাকলে চুলকানোর সময় দেহের মধ্যে ফোস্কা ফেটে যায়। এর ফলে ঘায়ের সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন: এই রোগটি কী ভাবে ছড়ায়?

উত্তর: রোগীর নাক এবং মুখের কাছাকাছি এলে এই রোগ ছড়ায়। কোনও বাচ্চা যদি এই রোগে আক্রান্ত হয় তাদের স্কুলে পাঠাবেন না। আক্রন্ত রোগীর গামছা বা অন্য কোনও সামগ্রী ব্যবহার করবেন না। আক্রন্ত রোগীর ঘরে না যাওয়া ভালো। এটি ছোঁয়াচে রোগ। এই ভাইরাস প্রথমে নিঃশ্বাসের সঙ্গে নাকে কিছুক্ষণ থাকে পরে রক্তের মধ্য দিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রশ্ন: আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে কত দিন অবধি রোগটি ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে?

উত্তর: চিকেন পক্স ৪৮ ঘন্টা আগে থেকে এই ভাইরাস অন্য ব্যাক্তির শরীরে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির গুটিগুলি যতক্ষণ পর্যন্ত শুকিয়ে না যায় তত দিন সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণত চিকেন পক্স বা হাম শুরুর ৪৮ ঘন্টা আগে থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত এই রোগের ভাইরাস অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

প্রশ্ন: কোন বয়সের মানুষের মধ্যে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে?

উত্তর: ৫ থেকে ১০ বছর বাচ্চাদের এই রোগ বেশি হয়। এবং কম বেশি বাচ্চাদের জন্মের পরেই অথবা ছয় মাসের কম বয়সের বাচ্চাদের হলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। এক্ষত্রে বাচ্চাদের দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। বড়দের এই রোগ খুব কষ্টদায়ক হয়। সারা শরীর জ্বালা করে, ব্যথা হয় ও চুলকায়। ৬০ বছরের উর্দ্ধে হলে জটিলতা বৃদ্বি পায়। তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

প্রশ্ন: কোন ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করে?

উত্তর: চিকেন পক্স আক্রান্ত ব্যক্তির মধুমেয়, কিডনির, হার্টের এবং অন্য জটিল অসুখ থাকলে বা আক্রান্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত স্টেরয়েড ওষুধ খেলে অনেক সময় এই রোগ মারাত্মক হতে পারে। হাম-পরবর্তী সময়ে নানা রোগ হতে পারে। ঠান্ডা লাগলে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় পেটের অসুখও হতে পারে।

প্রশ্ন: এই রোগটি প্রতিরোধের উপায়গুলি কী?

উত্তর: এই রোগ প্রতিরোধে টিকাকরণের ব্যবস্থা আছে। মেসলেস ভ্যাকসিন ৯ মাসের বাচ্চাদের দেওয়া হয়। এর পরে এম এম আর ও এম এম আর ভ্যাকসিন করলে এই রোগ হয় না বললেই চলে। এতে বাচ্চাদের ভাইরাসের সংক্রমণ কম হয়।

প্রশ্ন: এই রোগে আক্রান্ত হলে দেখা যায় খাবারের ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ মানার প্রথা রয়েছে। এটি কতটা বিজ্ঞানসম্মত?

উত্তর: এই রোগে আক্রান্ত হলে জল বেশি করে খেতে হবে। জল ফুটিয়ে খাওয়াই ভালো। মসলা যুক্ত খাবার না খাওয়া উচিত। এসময় হজমশক্তি কমে যায়। তাই সহজপাচ্য খাবার খেলে পেটের সমস্যা হয় না। তবে অনেকে বলেন, এসময় নিরামিষ খাবার খাওয়া উচিত। যা ভিত্তিহীন। বরং প্রাণীজ পুষ্টি গেলে শরীর চনমনে থাকবে। মসলা দিয়ে চিকেনের ঝোল, ডিমের সাদা অংশ, মাছ, অনাজ বেশি করে খেতে হবে। ফল খেলে দূর্বলতা অনেকটাই কমে যায়। খাবারে সাধারণত কোনও বিধি নিষেধ নেই। তবে ফার্স্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড বা বাইরের কোনও খাবার রোগীকে দেবেন না

প্রশ্ন: কারও এক বার চিকেন পক্স বা হাম হলে তাঁর কি ফের ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে?

উত্তর: সাধারণত আক্রন্ত রোগীর আর চিকেন পক্স ও হাম হয় না। জীবনে এক বার এই রোগ হয়ে থাকে। তবে নিশ্চিত করে বলা যায় না হাম একবারের বেশিও হয় মাঝে মাঝে। তবে সময়মতো চিকিৎসা করলে আর সাবধানে থাকলে এই রোগ সহজে সেরে যায়।

(সাক্ষাৎকারে তন্ময় দত্ত)

Vacciantion Measles Pox
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy