স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে আড়াল থাকবে কেন? একজন অন্যের সবটুকুই জানবেন, এমনটাই তো স্বাভাবিক। প্রয়োজনে একজন অন্যের ফোন দেখতেই পারেন, ব্যবহার করতেই পারেন। এ আর এমন কী বিষয়? মনে করেন অনেকেই।
তবে সেই ভাবনা মোটেই পোষণ করেন না বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কইফ। দাম্পত্য জীবনে তিন বছর পার করে ফেলেছেন তিনি। অভিনেতা ভিকি কৌশলের সঙ্গে ২০২১ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন নায়িকা। তাঁদের দু’জনের বোঝাপড়া দারুণ। কিন্তু কখনও কেউ কারও ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে পড়েন না। ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করা কতটা জরুরি, সে কথাই জানিয়েছেন অভিনেত্রী। সম্প্রতি অভিনেতা আরবাজ় খানের সঙ্গে একটি পডকাস্টের কথোপকথনে ক্যাটরিনা বলেছেন, ‘‘আমি কখনও বিনা অনুমতিতে কারও ফোনে হাত দিই না। যদি ছবি তোলার জন্য ফোন ব্যবহারও করতে হয়, তা হলেও তাঁর ছবির জায়গাটি আমি স্ক্রল করি না। আমি মনে করি, প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কিছু জায়গা থাকে, আর তাকে সম্মান করা উচিত।’’
সঙ্গীর ফোন না বলে দেখা কি ঠিক?
ক্যাটরিনা মনে করেন, ব্যক্তিগত পরিসর জরুরি। কিন্তু সকলেই তা মনে করেন না। কারও মনে হয়, সঙ্গীর ফোন বা জিনিসে তাঁর অধিকার থাকবে না কেন? কেউ কেউ সঙ্গীর ফোনই শুধু দেখেন না, ই-মেল বা সমাজমাধ্যমে ব্যবহৃত প্রোফাইলের পাসওয়ার্ডও নিয়ে রাখেন। এতে কি সম্পর্ক ভাল থাকে?
মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, ‘‘শুধু দাম্পত্যে নয়, সন্তান, বাবা-মায়ের মধ্যেও ব্যক্তিগত পরিসর থাকা খুব জরুরি। সম্পর্ক তৈরি হয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। তা ছাড়া, প্রতিটি মানুষের জীবনে গোপনীয়তা থাকতে পারে। তাঁর সেই পরিসরকে সম্মান দিলে সম্পর্ক আরও মজবুত হতে পারে।’’
না বলে অন্যের ফোন দেখা শুধু সৌজন্য বিরোধী নয়, তা অনেক সমস্যাও তৈরি করতে পারে। শর্মিলার কথায়, এতে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা বাড়ে। কারও মেসেজের কিছু কথোপকথন দেখে অন্য মানুষটি ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন। সম্পূর্ণ সত্য জানার চেয়ে নিজের মনে ভুল ধারণা লালন করলে, তাতে আখেরে কোনও লাভ হবে না। বরং সম্পর্কই নষ্ট হবে। সন্তানের ফোনও যেমন অভিভাবকদের না জানিয়ে দেখা ঠিক নয়, তেমনই উল্টোটাও জরুরি। সঙ্গীর ক্ষেত্রেও বিষয়টি পরস্পরের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে হস্তক্ষেপ হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:
গুরুগ্রামের মনোবিদ গুরলীন বড়ুয়ার কথায়, না বলে অন্যের ফোন, মেসেজ দেখা কখনওই কাঙ্ক্ষিত নয়। এমনকি, সঙ্গীর অনুমতি থাকলেও নয়। তবে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কারণে ব্যতিক্রম হতে পারে। সম্পর্কে বিশ্বাস থাকাটা জরুরি। বিশ্বাসের অভাববোধ থেকে যদি কেউ সেই কাজটি করেন, তা হলে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কখনই উজ্জ্বল হতে পারে না।
শর্মিলার পরামর্শ, কারও ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে না পড়ে বরং কোনও বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হলে, খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন। সন্দেহ কাটানোর জন্য ফোন দেখার চেয়ে ভাল উপায়, সরাসরি কথা বলা।
গোপনীয়তা বজায় রেখে সম্পর্কে স্বচ্ছতা থাকতে পারে?
· মনোরোগ চিকিৎসক এবং মনোবিদেরা বলছেন, কেউ কোনও বিষয় আড়াল করতে চাইছেন বা নিজের মধ্যে রাখতে চাইছেন মানে তিনি সম্পর্কের প্রতি অসৎ, তা কিন্তু নয়। বরং একে অন্যের ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। গোপনীয়তা রক্ষা করেও সম্পর্কে সততা বজায় রাখা সম্ভব।
· একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা করলে, বিশ্বাস দৃঢ় হলে কখনওই সঙ্গীর ফোন দেখার মানসিকতা তৈরি হবে না। সম্পর্ক স্থায়ী হওয়ার জন্য বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
· কোনও বিষয় নিয়ে মনে সন্দেহের উদ্রেক হলে ফোন না ঘেঁটে সরাসরি তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে। আলোচনায় অনেক সমস্যার সমাধান হয়।