অনেক পরিবারেই সপ্তাহের কোনও একটা দিন উপোস করার রেওয়াজ থাকে। কেউ সোমবার, কেউ শনিবার, আবার কেউ বা শুক্রবার উপোস করে থাকেন। ধর্মীয় কারণে এই উপোস করা হলেও এর পিছনে কিন্তু বৈজ্ঞানিক কারণ। আধুনিক ডায়েটিশিয়ানরা জানাচ্ছেন, খাওয়ার সময় কমানোর জন্যই এই উপোস। আর যার প্রভাবে যেমন শরীরের মেদ ঝরে, তেমনই উন্নত হয় স্বাস্থ্য। অর্থাত্, সময় মেপে খাওয়া।
সময় মেনে খাওয়া কাকে বলে?
শৃঙ্খলা মেনে খাওয়াকে বলে টাইম রেস্ট্রিকটেড ফিডিং বা টিআরএফ। এই নিয়মে দিনের শুধু কিছুটা সময় খেতে হয়। বাকি সময়টা উপোস করে শরীরকে নিজস্ব কাজ করতে দিতে হয়।
কখন খেতে হবে?
টাইম রেস্ট্রিকটেড ইটিং অনেক রকম হয়। ১৮/৬ (এই নিয়মে দিনের মাত্র ৬ ঘণ্টা খেতে হয়), ১৬/৮ (এই নিয়মে দিনের ৮ ঘণ্টা খেতে হয়) ও ১২/১২ (এই নিয়মে দিনের ১২ ঘণ্টা খেতে হয়)। এর মধ্যে ১৮/৬ নিয়ম সবচেয়ে উপকারি জানাচ্ছেন ডায়েটিশিয়ানরা।
সত্যিই কি এ ভাবে খেলে কাজ দেয়?
ক্যালিফোর্নিয়ার দ্য সাল্ক ইন্সটিটিউটের গবেষকরা এই ডায়েট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। গবেষণায় ব্যবহৃত ইঁদুরদের হাই ক্যালরিযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে দেওয়া হয়। কিন্তু দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তা দেওয়া হয়। দেখা গিয়েছে যেই ইঁদুরদের দিনের মধ্যে ৯ ঘণ্টা খেতে দেওয়া হয়েছিল তাদের ২৬ শতাংশ ওজন বে়ড়েছে, যাদের ১৫ ঘণ্টা খেতে দেওয়া হয়েছিল তাদের ৪৩ শতাংশ ওজন বেড়েছে ও যাদের সারা দিন ধরে খেতে দেওয়া হয়েছিল তাদের ৬৫ শতাংশ ওজন বেড়েছে। অথচ প্রতিটা ইঁদুরকেই অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া হয়েছিল। শুধু সময়ের হেরফেরে এই পার্থক্য দেখা গিয়েছে। অন্য দিকে, মোটা ইঁদুরদের এই ডায়েট দিয়ে ১২ শতাংশ ওজন কমার ঘটনাও দেখা গিয়েছে। মানুষের উপর প্রথম এই গবেষণা হয় বার্মিংহ্যামের ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টায়। সেই গবেষণাতেও এই ফল পাওয়া গিয়েছে।
ইতিহাস ও সংস্কৃতি
ভারত ও বিভিন্ন দেশের কাছে কিন্তু এই নিয়ম নতুন নয়। অনেক ধর্মেই উপোস করার প্রথা রয়েছে। সোমবার, মঙ্গলবার বা বৃহস্পতিহবার উপোস করেন অনেকেই। দিনের অর্ধেক সময় উপোস করে ব্রত পালনেরও রীতি রয়েছে হিন্দুদের মধ্যে। মুসলিমরা বছরের নির্দিষ্ট সময় রমজান মাস পালন করেন। এখানেও সেই অর্ধেক দিন উপোস করে সূর্যাস্তের পর খাওয়ার নিয়ম। গুড ফ্রাইডে-র আগের এক মাস খ্রীষ্টানরাও উপোস করে থাকেন। জৈন ও বৌদ্ধদের মধ্যেও বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন কারণে উপোস করার রেওয়াজ রয়েছে।
টাইম রেস্ট্রিকটেড ইটিং-এর ধারণা ও উপকারিতা কয়েক বছর আগে জনপ্রিয় হলেও আমাদের পূর্বপুরুষরা কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই এই নিয়মই মেনে চলতেন। অভ্যাসবশতই তাদের শরীর ১৬-১৮ ঘণ্টা বিশ্রাম পেত।
এই নিয়মে কি সব কিছুই খাওয়া যায়?
যে কোনও ভাবেই অস্বাস্থ্যকর খাবার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তাতে অবশ্যই ওজন কমবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যা খাচ্ছেন তার থেকেই শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি পৌঁছতে হবে। সেটা মাথায় রাখলেই বুঝে যাবেন কী খাওয়া উচিত, আর কোনটা নয়।
অন্যান্য উপকারিতা
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে জার্নাল অব ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতালি, ব্রাজিল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলিটদের উপর এই টাইম রেস্ট্রিকটেড ইটিং নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। ফলাফলে দেখা গিয়েছে , দিনের ৮ ঘণ্টা ধরে খাওয়া ক্যালরি, ট্রনিং তাদের বায়ো-মার্কার উন্নত করার পাশাপাশি, ওজন কমিয়েছে ও পেশীর গঠনে সাহায্য করেছে।
২২০০ জন মোটা মহিলাকে নিয়ে আরেকটি গবেষণা চালান ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। ফলাফলে দেখা গিয়েছে যেই মহিলারা রাতে বেশি সময় না খেয়ে থেকেছেন ও বিশ্রাম নিয়েছেন তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা যেমন নিয়ন্ত্রণে থেকেছে, তেমনই শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ কমেছে। হার্টের স্বাস্থ্য ভাল হয়েছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে, কমেছে ক্যানসার ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy