Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সন্তানের চোখ, সতর্ক থাকুন ছোট থেকেই

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বের প্রতি ৫০ জন শিশুর মধ্যে একজন চোখের অ্যাম্বলিওপিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই ছোট বয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের চোখ পরীক্ষা করানো জরুরি। বাড়তে থাকা এই সমস্যা নিয়ে জানাচ্ছেন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ সুপ্রিয় দাস। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বের প্রতি ৫০ জন শিশুর মধ্যে একজন চোখের অ্যাম্বলিওপিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই ছোট বয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের চোখ পরীক্ষা করানো জরুরি।

ছোট থেকেই চোখে চশমা থাকলে অভিভাবকদের বাড়তি সতর্কতা জরুরি। একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে বই পড়া বা টিভি দেখা উচিত। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

ছোট থেকেই চোখে চশমা থাকলে অভিভাবকদের বাড়তি সতর্কতা জরুরি। একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে বই পড়া বা টিভি দেখা উচিত। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১১
Share: Save:

শিশুদের চোখের সমস্য স্থায়ী হয়ে যাওয়ার কারণ সঠিক সময়ে তাদের চোখ বা দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা হয় না। এবং এই সমস্যা দিনের পর দিনের বেড়ে চলেছে। শিশুদের দৃষ্টিশক্তি কম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে যতক্ষণ তারা কথা না বলে বোঝাতে পারছে ততক্ষণ তাদের অভিভাবকরা বুঝতেই পারেন না তার শিশুর চোখের দৃষ্টিশক্তি কতটা। এ ব্যপারে ছোট থেকেই শিশুদের চোখের প্রতি নজর দিতে হবে অভিভাবকদের।

শিশুদের চোখের সমস্যা

সমীক্ষায় বা গবেষণায় দেখা গিয়েছে বিশ্বের প্রতি ৫০ জন শিশুর মধ্যে একজন চোখের অ্যাম্বলিওপিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগের ফলে শিশুর একটি চোখ অপর চোখের থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল থাকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্তদের দুটি চোখের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল থাকতে পারে। ফলে আক্রান্তদের চোখ মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে অক্ষম হয়। এবং দৃষ্টিশক্তির বিকাশ সঠিক হয় না। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে রোগ নির্ণয় করতে পারলে তা দৃষ্টিশক্তির বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়।

কোন বয়সে শিশুর চোখের চিকিৎসা করা দরকার সাধারণত শিশু যখন বোধ শক্তি জাগে তখন অর্থাৎ শিশু যখন কথা বলে বোঝাতে পারে তখন থেকেই শিশুর চোখের চিকিৎসা করা দরকার। এ ক্ষেত্রে শিশুর বয়স চার বছর হলেই যে কোনও শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে তার চোখের পরীক্ষা করে নেওয়া অনেক ভাল। কেননা চিকিৎসার অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে শিশুর বয়স ছ’বছর হয়ে গেলে চোখ পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে বেশ কিছুটা সমস্যা দেখা যায়।

শিশুদের দুর্বল চোখ সারিয়ে তুলে তাদের দৃষ্টিশক্তি স্বচ্ছ বা স্পষ্ট ফিরিয়ে আনার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার, সেই সঙ্গে আই প্যাচ ও চোখের ড্রপ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তাহলে শিশু তার দুর্বল চোখের দৃষ্টিশক্তি স্পষ্ট ভাবে সারিয়ে নিতে পারবে।

অভিভাবকদের কাছে পরামর্শ শিশুর চোখের জন্য সঠিক বয়সে সঠিক সময়ে সচেতন না হলে শিশুর চোখ নিয়ে ভবিষ্যতে অভিভাবকদেরই আফশোস করতে হব। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের উপলব্ধি খুবই জরুরি যে শিশুর দৃষ্টিশক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর চোখ সম্বন্ধে জেনে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশুদের চোখের সমস্যা কী ধরনের হয় বা সাধারণত শিশুদের চোখের যে কমন রোগ হয় সেগুলি নিরাময়ের জন্য শিশুকে অনেক ক্ষেত্রে শিশুর ছ মাস বয়স থেকে চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিছু চেনা রোগ

১) কনজাংটিভাইটিস: এক্ষেত্রে চোখের রং লাল হয় এবং চোখ চুলকায়। চোখে জল পড়ে। এটি মূলত ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগ। ছোঁয়াচেও বটে। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চোখের চিকিৎসা করা দরকার।

২) আঞ্জনি: এর ফলে চোখের পাতায় গুটির মতো দানা উঠে। চোখের মধ্যে ঘর্ম গ্রন্থি সংক্রামিত হলে এই রোগ হয়। এটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। চোখে ব্যথার পাশাপাশি অনেকেরই এই সময়ে চোখে পুঁজ হয়। এ ক্ষেত্রেও শিশুর চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

৩) অশ্রুগ্রন্থি বন্ধ হয়ে যাওয়া: চোখের অশ্রুগ্রন্থি বন্ধ হয়ে থাকা শিশুর একটি চোখের একটি মারাত্মক রোগ। কিছু শিশু এই ভাবেই ভূমিষ্ট হয়। এক্ষেত্রেও শিশুর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারলে চোখের ম্যাসাজ এর মাধ্যমে চোখের বন্ধ অশ্রুগ্রন্থি খুলে যায়।

৪) চোখের পাতা না খোলা: আবার অনেক সময় শিশুর চোখের পাতা খুলছে না। আবার শিশুর ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে চোখের মণি ঠিক জায়গায় থাকে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৫) দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: ৬- ৮ সপ্তাহের মধ্যে যে কোনও বয়সের শিশুরা ভাল ভাবে দেখতে পায়। সমস্যা থাকলে তিন মাসের মধ্যে ঠিক হয়। এর ব্যতিক্রম ঘটলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চোখের সমস্যা কি বংশগত

অ্যাম্বলিওপিয়া, গ্লুকোমার মতো কিছু কিছু রোগ আছে যে গুলি বংশগত। তবে সব রোগ গুলিই সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সেরে তোলা যায়।

কালার ব্লাইন্ডনেস

মানুষের চোখের ভিতরে রেটিনায় দুই ধরনের আলোকসংবেদী কোষ আছে। এর হল রডকোষ এবং কোনকোষ। কোনকোষ থাকার জন্য আমরা বিভিন্ন রং চিনতে পারি। এবং তাদের পার্থক্য করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের রঙ্গিন বস্তু দেখতে সাহায্য করে কোনকোষ। আর রডকোষ আমাদেরকে কেবলমাত্র দর্শনের অনুভূতি জাগায়। বর্ণান্ধতা বা কালার ব্লাইন্ডনেস হল মানুষের কতিপয় রং দেখার, শনাক্ত করার বা তাদের মধ্যে পার্থক্য করার অক্ষমতা জনিত একপ্রকার শারীরিক বৈকল্য। এক্ষেত্রে রং এর বৈষম্য তারা বুঝতে পারেন না। এই রোগ বংশগত বা জন্মগত হতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে চোখের রোগের জন্য হতে পারে। চোখে আঘাত লাগা, বার্ধক্য জনিত হতে পারে কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলেও হতে পারে। ভিটামিন এ র অভাবেও এই রোগ হতে পারে।

‘রাতকানা’ রোগ ঠিক কী

এই রোগের ফলে স্বল্প আলোয় দেখা প্রায় অসম্ভব হয়। এটা আসলে কতিপয় চোখের রোগের উপসর্গ। কারো ক্ষেত্রে জন্ম থেকে এই উপসর্গ থাকে। এছাড়া চোখে আঘাত জনিত কারণে বা অপুষ্টি জনিত কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। রাত কানা রোগে স্বল্প আলোকে চোখের অভিযোজন ক্ষমতা কমে যায়।

রেটিনায় রড কোষ এবং কোন কোষ নামে দুই ধরনের কোষ থাকে। এই কোষ গুলি যথাক্রমে স্বল্প এবং উজ্জ্বল আলোতে কাজ করে। রড কোষে রোডপসিন নামে একপ্রকার রিসেপ্টর থাকে। রোডপসিনের উপর আলো পড়লে কয়েক ধাপে এর কিছু গঠনের পরিবর্তনের মাধ্যমে অপটিক স্নায়ু দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। রোডপসিন এর জন্য ভিটামিন এ প্রয়োজন।ভিটামিন এ অভাবে রাতকানা রোগ হয়।

চোখের যত্ন কী ভাবে

চোখ পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতিদিন চোখ জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতিদিন মাছ, ডিম ,বেশি ফল সব্জি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। চোখের উপর অত্যাচার বা চোখ কে আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে। চোখে লেন্স পড়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চশমা ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। ছোট থেকে চোখের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যত্ন নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eye Child Care Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE