Advertisement
০৮ মে ২০২৪
coffee

কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে? জানেন এটি ক্ষতিকারক কি না?

খিদে মেটাতে হোক কিংবা খাবারের অনুষঙ্গ, এ ক্ষেত্রে কফি আমাদের সেরা বিকল্প। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

খিদে মেটাতে হোক কিংবা খাবারের অনুষঙ্গ, এ ক্ষেত্রে কফি আমাদের সেরা বিকল্প। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:৩৭
Share: Save:

এক কাপ কফিতে কত কিছুই না সমাধান হয়! বন্ধুত্বে বা আলস্যে, ব্যস্ততায় বা ব্রেক আপে কফির চেয়ে প্রিয় সঙ্গ আর কিসেই বা?

তাই যতই অম্বলে গলা–বুক জ্বলে যাক, রাতের ঘুম নষ্ট হোক, কি পেটের সমস্যা আসুক— কফি বিনা আমাদের প্রাণ আনচান। চাহিদার কথা মাথায় রেখেই রাজপথ থেকে অলিগলি, সব ছেয়ে গিয়েছে নামি–দামী কফি শপে। সন্ধের উঁকি মারা খিদে মেটাতে হোক কিংবা খাবারের অনুষঙ্গ, এ ক্ষেত্রে কফি আমাদের সেরা বিকল্প।

কফিকে এক সময় হার্টের রোগের কারণ বলে ব্রাত্য করে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এখন? ‘এখন আবার দিন–কাল পাল্টে গেছে’ ঠাট্টার ছলে জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়। তবে ঠাট্টার পরেও পড়ে থাকে কিছু জরুরি কথা।

আরও পড়ুন: লবঙ্গ রাখেন না রান্নাঘরে? কী ক্ষতি করছেন জানেন?

কফি বিনের ফাইটোকেমিক্যাল শরীরের অভ্যন্তরীন প্রদাহ কমাতে সিদ্ধহস্ত। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

সুকুমারবাবুর মতে, বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে কফি খাওয়া হার্টের জন্য খারাপ তো নয়ই বরং ভাল৷ উচ্চ রক্তচাপের জন্যও সে খারাপ নয়৷ আবার দিনে দু’–চার বার চিনি ছাড়া কালো কফি খেলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বেড়ে ওজন কমারও সুরাহা হয়৷ খিদে কমে যায় বলে স্বাস্থ্যকর ডায়েট বজায় রাখা যায়৷ ব্যায়ামের আগে খেলে দ্বিগুণ এনার্জি লাভ হয়। মোদ্দা কথা, সবের মিলিত প্রভাবে ওজন–প্রেশার–সুগার বশে থাকে৷ কমে হার্টের অসুখের আশঙ্কাও৷

কফি নিয়ে গবেষণা

২০১৫ সালে ‘সার্কুলেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রের দাবি, যাঁরা কফি খান না বা ন’মাস- ছ’মাসে খান তাঁদের তুলনায় যাঁরা দিনে ৩–৫ কাপ বা তার বেশি কফি খান, কম বয়সে হৃদরোগে মৃত্যুর হার তাঁদের মধ্যে বেশ কম৷ ২০১৩ সালে এখানেই প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরাও একই দাবি করেন।

‘মেয়ো ক্লিনিক’-এর গবেষকরা জানিয়েছেন অভ্যাস না থাকলে হঠাৎ করে কফি খেতে শুরু করলে ক্যাফিনের প্রভাবে হার্ট ও রক্তনালী উদ্দীপিত হয়ে রক্তচাপ সাময়িক একটু বাড়তে পারে৷ সময়ের সঙ্গে সে প্রভাব কেটে যায় ও আবার সব আগের মতো হয়৷ অর্থাৎ কফি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায় বলে যে ধারণা ছিল, তা ঠিক নয়৷

আরও পড়ুন: সুস্থ থাকতে চান তো? রোজ কী খাবেন আর কতটুকু খাবেন...

আগেকার দিনে ভাবা হত, রক্তচাপ বেশি থাকলে কফি না খাওয়াই ভাল। কারণ তাতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ব্যাপারটা মোটেই তা নয়৷ ক্যাফিনের প্রতি যাঁদের অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা আছে, তাঁদের কখনও কখনও এ রকম হলেও অন্যদের সে রকম কিছু হয় না৷

কফির দোষ-গুণের মূলে

কফি বিনে আছে এমন কিছু ফাইটোকেমিক্যাল, যা শরীরের অভ্যন্তরীন প্রদাহ কমাতে সিদ্ধহস্ত৷ আর হৃদরোগ থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন অসুখের মূলে থাকে এই প্রদাহ৷ কাজেই নিয়মিত কফি খেলে হার্ট ভাল থাকবে এ আর বড় কথা কী!

কিন্তু কফি যাঁদের সহ্য হয় না? অম্বল বাড়ে, গ্যাস্ট্রাইটিসের সমস্যা আছে, তাঁদের? বা কফির প্রভাবে যাঁদের অনিদ্রা, উদ্বেগ বাড়ে? বুক ধড়ফড় করে? এ সবের মূলে আছে কফির অন্যতম উপাদান ক্যাফিন৷ তার পরিমাণ কমাতে পারলেই কেল্লা ফতে৷ সে ক্ষেত্রে কম ক্যাফিনযুক্ত কফি খেলে সব দিক বজায় থাকে৷

কম ক্যাফিনযুক্ত কফি পাউডার রক্তচাপের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

এবার ধরুন, কফি খেলে রক্তচাপ বাড়ে বলে অনুমান আপনার৷ এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ, সন্দেহের অবকাশ না রেখে নিজে ব্যবহার করতে পারেন এমন ঘরোয়া রক্তচাপ মাপার যন্ত্র কিনে ফেলুন৷ দু’–চার সপ্তাহ ধরে কফি খাওয়ার আগে ও খাওয়ার দু’–এক ঘণ্টা বাদে রক্তচাপ মেপে দেখুন কত আসে৷ তার পর তা লিখে রাখুন৷ এর পর কয়েক সপ্তাহ কফি খাওয়া বন্ধ রেখে ওই একই সময় রক্তচাপ মেপে দেখুন তাতে কোনও ফারাক এল কি না৷ ফারাক এলে বুঝতে হবে ক্যাফিনের ধকল নিতে পারছে না হার্ট৷ সে ক্ষেত্রে হয় কফি খাওয়া বন্ধ করুন, নয়তো খান ডি–ক্যাফিনেটে কফি৷

আরও পড়ুন: এই স্বভাব থাকলে আজই বদলান, নইলে হতে পারে মৃত্যুও!

তবে সাবধান৷ আসক্তি হয়ে গেলে কফি ছাড়ার এই কাজটি করুন বেশ একটু ধীরে-সুস্থে৷ না হলে উইথড্রয়াল এফেক্টের ঠেলায় অস্থির হয়ে পড়তে পারেন৷ অর্থাৎ গ্রাস করতে পারে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বিরক্তি৷ সুতরাং, কফি নিয়ে তেমন কোনও নিষেধাজ্ঞা কিন্তু আধুনিক গবেষকরা জারি করছেন না। ক্যাফিন সইলে কফি খান নিশ্চিন্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Tips Fitness Tips কফি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE