সময় থাকতে সঞ্চয়ের গুরুত্ব অনেকেই বুঝতে পারেন না। ফলে বিপদের সময়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, দৈনন্দিন জীবনে এখন খরচের বিভিন্ন খাত তৈরি হয়েছে, যা তিন-চার দশক আগেও ছিল না। ফলে সময়ের সঙ্গে বেড়েই চলেছে খরচের বহর। অনেকেরই ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর’ উপক্রম। কিন্তু খরচের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় কয়েকটি পরিবর্তন করতে পারলে সারা মাস ধরে পকেটে টান পড়বে না।
আরও পড়ুন:
সারা বিশ্বের সেভিংস বিষয়ক পরামর্শদাতা জানিয়েছেন, অভ্যাস, সমাজমাধ্যম, জীবনযাত্রার উন্নতির পাশাপাশি একাধিক কারণে একজন ব্যক্তির মাসিক খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সঞ্চয়ের পরিমাণও কমেছে। চলতি বছরে জানুয়ারিতে একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড আছে, এ রকম গড় ভারতীয়ের কার্ড পিছু মাসিক খরচের পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার টাকা। অন্য একটি সমীক্ষা দাবি করেছে, গত কয়েক বছরে ডিজাটাল পেমেন্টের সুবিধার জন্য, খরচের জন্য ভারতে ইউপিআই লেনদেন প্রায় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সময় থাকতেই সাবধান না হলে সমস্যা দেখা দেবে।
১) পাত্রে কোথায় ফুটো আছে, তার সন্ধান না পেলে জল ভর্তি হবে না। একই ভাবে খরচের হিসাব রাখা জরুরি। আগে বাজেট অনুযায়ী মাসিক খরচের অনুমান করে নেওয়া যেতে পারে। তার ফলে বেশি খরচ হলে সতর্ক হওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে খারচের হিসাব রাখার জন্য একাধিক মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। যে কোনও একটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
২) ফুড ডেলিভারি অ্যাপে খাবার অর্ডার করলে বা অ্যাপ কাব ব্যবহারে খরচ বাড়ে। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহান্তে বাইরের খাবার খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনের বাইরে অ্যাপ ক্যাবের ব্যবহার কমাতে পারলেও অনেকগুলো টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
৩) ইন্টারনেট অপরিহার্য। কিন্তু সব ওটিটি কি তাই? অব্যবহৃত ওটিটির সাবক্রিপশনের জন্য অজান্তেই প্রচুর টাকা খরচ হয়। এই ধরনের সাবসক্রিপশন বন্ধ করা উচিত। খরচ কমাতে নিকটজনের সঙ্গে ‘শেয়ারড অ্যাকাউন্ট’ও ব্যবহার করা যায়। এখন টিভি ইন্টারনেটেই দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে কেব্ল সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া যায়। একই ভাবে জিমের সদস্যপদ তিন বা ছ’মাসের পরিবর্তে মাসিক করে নেওয়া উচিত। তার ফলেও সাশ্রয় বাড়বে।
৪) অনলাইন কেনাকাটার প্রলোভন টাকা খরচের অন্যতম কারণ। প্রয়োজন ছাড়া শখের কেনাকাটা অনলাইন অ্যাপ মারফত করার ব্যাপারে সংযত হওয়া উচিত। তার ফলে মাসে সাশ্রয়ের পরিমাণ বাড়বে।
৫) ফোন বা গাড়ি এখন ‘ফ্যাশন’। মধ্যবিত্ত শ্রেণি তা মূলত সহজ মাসিক কিস্তিতে কিনে থাকেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন ফোন চাই। মাসিক কিস্তি শেষ হওয়ার আগেই গাড়িও বদলে যায়। এর ফলে প্রত্যেক বছর খরচের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সঞ্চয় বিষয়ে পরামর্শদাতাদের মতে, ফোন এবং গাড়ি ভাল কোম্পানির ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু সেই ফোন যেন ৩ বছর এবং গাড়ি যেন ৭ বছর ব্যক্তি ব্যবহার করেন, তা খেয়াল রাখতে হবে।
বুদ্ধি করে খরচ করলে সারা মাসে টাকার অভাব অনুভূত হয় না। ছবি: সংগৃহীত।
৬) ক্রেডিট কার্ডকে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য বাঁচিয়ে রাখা উচিত। নিত্য দিনের খরচের ক্ষেত্রে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করলে নিয়ন্ত্রিত খরচ হবে।
৭) ফোন, ক্রেডিট কার্ড, বিদ্যুৎ— ইত্যাদি বিলগুলি প্রতি মাসে ‘অটো ডেবিট’ করে রাখা উচিত। তার ফলে মেয়াদের আগেই বিলগুলি প্রদান করা সম্ভব হবে। অনেক সময়ে লেট পেমেন্টের জন্য অহেতুক বাড়তি মাসুল গুনতে হয়।
৮) খরচের অভ্যাস অনেক সময়ে মানসিক সমস্যায় হতে পারে। তাই কাউকে দেখে বা সমাজমাধ্যমের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে খরচ করা উচিত নয়। সঞ্চয় করতে মাসে এক সপ্তাহ অন্তর ‘নো স্পেন্ড’ (বাড়তি খরচ না করা) নীতি নেওয়া যেতে পারে।
৯) পরিবারে বা নিকটজনের সঙ্গে টাকা নিয়ে খোলা মনে কথা বলা উচিত। একসঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেও সঞ্চয়ের নানা পথ উন্মোচিত হতে পারে। পরিবারের সদস্যদের খরচের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা গেলেও অনেক সময়ে তা অনুপ্রেরণার কাজ করতে পারে।
‘৫০-৩০-২০’ নীতি
মাসের খরচে লাগাম টেনে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে সঞ্চয় পরামর্শদাতাদের একাংশ ‘৫০-৩০-২০’ নীতি অনুসরণ করতে বলেন। অর্থাৎ, এই হিসেবে অনুসারে কোনও ব্যক্তি যদি মাসে ১০০ টাকা উপার্জন করেন, তা হলে তার মধ্যে ৫০ টাকা তিনি সংসার খরচ (যেমন বাজার, বাড়িভাড়া, যাতায়াতের খরচ ইত্যাদি) করবেন। ৩০ টাকা তিনি শখ-শৌখিনতার (রেস্তরাঁয় খাওয়া, কেনাকাটি ইত্যাদি) জন্য খরচ করবেন। ২০ টাকা তিনি কোনও ভাবে (এসআইপি, সেভিংস অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি) জমাবেন।