Advertisement
১৯ মে ২০২৪

একমাত্র ডাক্তারকেও বদলির সিদ্ধান্ত, বিক্ষোভ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

ডাক্তারের আকাল। তাই গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসককে ডেকে পাঠানো হয়েছে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু তার জেরে থমকে যাবে এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা— এমন অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখালেন কাঁকসার বিদবিহার পঞ্চায়েতের শিবপুর এলাকার বাসিন্দারা।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৫
Share: Save:

ডাক্তারের আকাল। তাই গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসককে ডেকে পাঠানো হয়েছে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু তার জেরে থমকে যাবে এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা— এমন অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখালেন কাঁকসার বিদবিহার পঞ্চায়েতের শিবপুর এলাকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসা ব্লকের শিবপুর এবং পার্শ্ববর্তী মলানদিঘিতে দু’টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। দু’টি কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ এক জন চিকিৎসক। তিনি সপ্তাহে তিন দিন করে এক-একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসেন। তাতে পর্যাপ্ত না হলেও চিকিৎসা পরিষেবা পান এলাকার বাসিন্দারা। আদিবাসী অধ্যুষিত ব্লক কাঁকসায় বহু মানুষই এই সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসার উপরে নির্ভরশীল। তাঁদের পক্ষে দুর্গাপুরে গিয়ে বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না। পানাগড়ে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্বও অনেক। সেখানে যেতে হলে বেশি সময় ব্যয়ের পাশাপাশি যাতায়াতের খরচও মাথাব্যথার কারণ। তাই একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যে তিন দিন চিকিৎসক গ্রামে আসেন, শিবপুরের বাসিন্দারা সেই দিনগুলির জন্যই অপেক্ষা করেন।

ওই এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এক সময়ে গ্রামের এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও চার জন স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন। সারা সপ্তাহ স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকত। অথচ, এখন এক জন চিকিৎসক এবং এক জন স্বাস্থ্যকর্মী সপ্তাহে তিন দিন করে আসেন। প্রসূতিদের নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা এবং যক্ষ্মা রোগীদের কিছু ওষুধপত্রও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এখন একমাত্র ডাক্তারও বদলি হয়ে চলে গেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি কার্যত বন্ধ হয়ে পড়বে। বিপাকে পড়বেন গ্রামবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা গিরিধারি সিংহ, বাপি সূত্রধরেরা বলেন, ‘‘এক জন মাত্র ডাক্তারও এখন চলে যাবেন বলে শুনছি। কর্তৃপক্ষকে আমরা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছি।’’

সোমবার সকালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন চিকিৎসক নিলোফার আফতাবি। তাঁকে গ্রামবাসীরা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছেড়ে না যাওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ তাঁকে মানতেই হবে। এর পরেই গ্রামবাসীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। তা চলে ঘন্টা দু’য়েক ধরে। পুলিশ পৌঁছয়। বাসিন্দারা জানান, মাসে গড়ে ছ’শো রোগী এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পরিষেবা পান। তাই চিকিৎসককে বদলির সিদ্ধান্তে যথেষ্ট অসুবিধা হবে। চিকিৎসক নিলোফার আফতাবি বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা বঞ্চিত হবেন। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমাকে যেতেই হবে।’’

ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসকের অভাবে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়েই ওই চিকিৎসককে সেখানে ডাকা হয়েছে। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কের সংযোগকারী দার্জিলিং মোড়ের কাছে রয়েছে এই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। কাঁকসার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এর উপরে নির্ভরশীল। জাতীয় সড়ক বা রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলেও জখমদের নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় ঠিক মতো পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ।

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বাতী রায়চৌধুরী জানান, শিবপুর ও মলানদিঘির বাসিন্দাদের পরিষেবা দিতে সেখানকার দু’টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন ডাক্তারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে এখন তাঁকে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই দুই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তবে কী হবে? স্বাতীদেবীর বক্তব্য, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE