Advertisement
E-Paper

চর্মে না লেগে মর্মে লাগুক রং, দূর থেকেই বসন্ত এসে লাগুক প্রাণে, নেটদুনিয়ায় জমজমাট ‘ভার্চুয়াল দোল’

বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন কর্মসূত্রে ছিটকে গিয়েছেন দুনিয়া জুড়ে। বিজয়ার প্রণাম, স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিনে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা পালনের পরে এখন দোলও পালিত হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে!

ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ১০:০৮
Share
Save

দোলের দিন পুরনো পাঞ্জাবি আর পাজামা পরে পকেটে আবিরের প্যাকেট নিয়ে রং খেলতে বেরোতেন বাবা-কাকারা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁদের গন্তব্য হত হয় নিকটতম ঠিকানার বন্ধুর বাড়ি অথবা ক্লাব বা আড্ডাস্থল। সেখানে যাঁদের পাওয়া গেল, তাঁদের রং দিয়ে, তাঁদেরকে সঙ্গে নিয়ে পরের গন্তব্য হত অন্য বন্ধু বা অন্য কোনও পরিচিতের ঠিকানা। এ ভাবে ক্রমে দল ভারী হত। দুপুর পর্যন্ত একটা ছোটখাটো মিছিলেই পরিণত হতেন রং মাখা মানুষগুলো। শেষে মিলিত হতেন কোনও ‘কমন স্পট’-এ। সেখানে মিষ্টি-চা ইত্যাদি সহযোগে মধুরেণ সমাপয়েৎ হত সকালের দোল খেলার। বিকেলে গন্তব্য হত আত্মীয়স্বজনের বাড়ি। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে যেতেন বাবা মায়েরা। গুরুজনের পায়ে ফাগ দিয়ে প্রণাম করার পরে মঠ-ফুটকড়াইয়ের সঙ্গে কোথাও ঘুগনি, কোথাও আলুর দম এসে পড়ত পাতে। রাতে হত ‘পিকনিক’। মেনু মূলত মাংস-ভাত (তখন বিরিয়ানি-চাইনিজ়ের চল ছিল না তেমন)। বড় পরিবার হলে পরিবারের সদস্যেরাই যথেষ্ট। না হলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পারিবার নিয়ে কারও ছাদে বা বাগানে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন।

এ তো গেল সাংসারিক মানুষের দোল। বেকার যুবক এবং তথাকথিত ‘বখে যাওয়া’ ছেলে-ছোকরাদের দোল হত অন্য রকম। সেখানে দুলুনিরও পূর্বাপর ব্যবস্থা থাকত। বাঁদুরে রং, কাদাজল, বাড়ির চৌবাচ্চায় রং গুলে বন্ধুদের চুবিয়ে দেওয়ার মতো দুষ্টুমিও কম হত না। মাত্রা ছাড়ালে সেই পর্বে রাগ-অভিমানও হত বিস্তর। তবু সবাই সবাইকে ছুঁয়ে থাকতে পারত। দুলুনির বিষম বেগে টলে গেলে মাথা এলিয়ে দিতে পারত খানিক আগে হুমকি দেওয়া ইয়ারদোস্তের কাঁধে। এ যুগে আর সেই স্পর্শসুখ নেই।

এ কালে স্পর্শ আছে স্মার্টফোনে। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন কর্মসূত্রে ছিটকে গিয়েছেন দুনিয়া জুড়ে। বিজয়ার প্রণাম, স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিনে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা পালনের পরে এখন দোলও পালন হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে!

এ যুগের বহু বীরু আর বাসন্তী দোলের দিন দুনিয়ার দু’প্রান্তে থাকেন। ‘হোলি কে দিন দিল খিল যাতি হ্যায়’ গেয়ে ফাগুনি রোম্যান্সে মাতার সময় বা সুযোগ কোনওটিই নেই (এ বছর তো বান্ধবীকে নিয়ে শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবে যাওয়ারও জো নেই)। যে বন্ধুরা প্রতি দোলের দিন দেখা করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন, তাঁরাও কেউ বস্টন, তো কেউ বেঙ্গালুরুতে। তার পরেও এঁরা প্রত্যেকেই দোলের দিন ভার্চুয়াল উদ্‌যাপনে মাতবেন। সৌজন্যে আঙুলের ডগায় চলা প্রযুক্তি।

হাতের পরশে প্রেমিকার গালে আবির মাখাতে না পারুন, ফোন বা ল্যাপটপের পর্দায় তাঁকে রাঙিয়ে দিতে পারবেন এআর ফিল্টার দিয়ে। পিচকিরি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে না পারুন, ভার্চুয়াল মাধ্যমে বন্ধুকে ছুড়তে পারবেন রঙিন বেলুন। সেই বেলুন সশব্দে ল্যাপটপের পর্দায় ফেটে গিয়ে রাঙিয়ে দেবে। গড়িয়ে পড়বে পর্দা বেয়ে। দূর থেকে রং খেলার এমন অনেক উপায়ই এখন ‘ট্রেন্ডিং।’

ছবি: সংগৃহীত।

কী ভাবে পালন করা হচ্ছে ভার্চুয়াল দোল?

স্মার্টফোনের নানা অ্যাপের কারিগরি ছিলই। এখন তার সঙ্গে জুড়েছে কৃত্রিম মেধা। আর কিছু ভাবনা। সব মিলিয়ে ভার্চুয়াল দোলের পার্টি জমজমাট বানানোর অনেক উপায় মজুত রয়েছে হাতে।

১। ভার্চুয়াল রং খেলা

গত বছর ফেসবুক, গুগ্‌ল, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াট্‌সঅ্যাপের মত সমাজমাধ্যমে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গ্রুপ ভিডিয়ো কলে এআর ফিল্টার দিয়ে রং খেলেছিলেন বেঙ্গালুরুর প্রযুক্তিকর্মী রাহুল দত্ত। এ বছর তিনি ঠিক করেছেন, একটি অ্যাপে দোল খেলবেন। কিছু দিন আগেই ইন্টারনেটে সেই অ্যাপের সন্ধান পেয়েছেন। জেনেছেন, রঙিন বেলুন ছোড়ার পাশাপাশি সেখানে একটি ওয়াটার বাটনও রয়েছে। তাতে আঙুলের ডগা হালকা ছোঁয়ালেই পিচকিরির রং পৌঁছে যাবে পর্দায়।

২। খেলার দোল

দোল ‘খেলা’ হয়, রংও ‘খেলা’ হয়। ‘খেলা’ ছাড়া দোল সম্পূর্ণ হয় কী করে! পুরুষদের ভার্চুয়াল দোলের পার্টিতে তাই খেলাধুলোও থাকে । হয়তো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুরা ঠিক করলেন, দোলের দিন ঘণ্টাখানেক অনলাইন গেম খেলবেন। রঙের দিনে ভার্চুয়াল রঙিন দুনিয়াতে কাটল সময়।

৩। খানাপিনার দোল

টলমল পায়ের অমিতাভ বচ্চনের গলায় হালকা ঢুলুঢুলু সুরে ‘রং বরসে...”। দোল মানে অনেকের কাছেই খানার সঙ্গে পিনা। বাঙালি দোলের ‘রং’ গত কয়েক বছর ধরে ঠিক করে দিচ্ছে অবাঙালি পানীয় ঠান্ডাই। নির্বান্ধব পরবাসে থাকলে কি তার স্বাদ মিলবে না? উঁহু। নতুন ট্রেন্ড বলছে, বন্ধুরা যে যার মতো পছন্দের পানীয় আর খাবার নিয়ে বসছেন অনলাইন আড্ডায়। নিজেই নিজের গালে রং মেখে বন্ধুদের সঙ্গে কয়েকশো মাইল দূর থেকেই বলছেন ‘চিয়ার্স’।

৪। গানের দোলায় দোল

রং তো মর্মে লাগবে। তাই দূরত্বের দোল খেলায় দূর থেকে গানের আড্ডাও জমান বন্ধুরা। ভিডিয়ো কলে সামনে রং আর পলাশ নিয়েই না হয় বসলেন। তার পরে খোলা গলায় ধরুন, “এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো...।”

ফুল ফুটুক না ফুটুক, বসন্ত আসবেই।

Dolyatra Gen Z Digital Holi

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}