Advertisement
১১ মে ২০২৪

গ্রিটিংস কার্ড বিরল, নতুন প্রজন্ম এখন স্বচ্ছন্দ হোয়াটস অ্যাপেই

চিঠিচাপাটির পাট তো কবেই উঠেছে। ‘প্রিয়তমাসু’ সম্বোধনে নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তা, সে তো প্রস্তর যুগের বলে মনে হবে তরুণ প্রজন্মের কাছে। গ্রিটিংস কার্ডের দৌলতে তবু বচ্ছরকার কয়েকটা দিনে হাতে লিখে উপহারের প্রথা চালু ছিল।

সীমান্ত মৈত্র
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৬ ১৩:৫২
Share: Save:

চিঠিচাপাটির পাট তো কবেই উঠেছে। ‘প্রিয়তমাসু’ সম্বোধনে নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তা, সে তো প্রস্তর যুগের বলে মনে হবে তরুণ প্রজন্মের কাছে। গ্রিটিংস কার্ডের দৌলতে তবু বচ্ছরকার কয়েকটা দিনে হাতে লিখে উপহারের প্রথা চালু ছিল। ইদানীং হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুকের ভরা বাজারে সে দিনও বিগতপ্রায়। মফস্‌সলেও হুড়হুড় করে নামছে গ্রিটিংস কার্ডের বিক্রি।

বনগাঁ কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘আমার বয়ফ্রেন্ড বাইরে থাকে। গ্রিটিংস কার্ড কিনে, হাতে লিখে, পোস্টঅফিসে গিয়ে ফেলার মতো এত ঝক্কি পোয়াতে পারব না। হোয়াটস অ্যাপে অনেক ছবি-টবি দেওয়া সুন্দর সুন্দর মেসেজ আসে, সে রকমই একটা একটু অদল-বদল করে মোবাইল থেকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ হাবরার এক কিশোরীর কথায়, ‘‘মোবাইল থেকেই তো সব হয়ে যাচ্ছে। কার্ড কেনার কথা তো ভাবিইনি!’’

অথচ, পিছন ফিরে তাকালে মনে পড়বে, দু’চার বছর আগেও কার্ডের বিক্রি নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন বাড়ত অনেকটাই। নতুন বছরের আগে-পরের কয়েকটা দিন তরুণ-তরুণীদের ভিড় চোখে পড়ত কার্ডের দোকানগুলিতে। অনেকে রাস্তার ধারে অস্থায়ী ছাউনি ফেলেও মরসুমি কার্ডের ব্যবসা করে কিছু টাকা ঘরে তুলতেন। তখনও সময়টা তত ‘স্মার্ট’ হয়নি। হাতে হাতে স্মার্ট ফোনের চলন তখন ভাবতেই পারছে না মফস্‌সল। কাজেই বন্ধ গোলাপি, নীল খামে হ্যাপি নিউ ইয়ারের কার্ড পৌঁছে যাচ্ছে হাতে হাতে। সঙ্গে চোখের কোণে গোপন কথাটি গোপন না থাকার ইশারা। পোস্ট অফিসেরও ক’দিন পোয়া বারো। এমনিতে সারা বছর কাউকে চিঠি লেখার ধার ধারে না তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু ইংরেজি বা বাংলা নববর্ষের আগে-পরের কয়েকটা দিনে পোস্ট অফিসেও অনেক তরুণ-তরুণীকে দেখা যেত। বনগাঁ শহরের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এ বার গ্রিটিংস কার্ডের বিক্রি কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। শহরের মতিগঞ্জ এলাকার এক দোকানি স্বপন বিশ্বাস জানালেন, কয়েক বছর আগেও এই সময়টায় হাজার ৪০ টাকার কার্ড তুলেছি। এখন সে দিন আর নেই। ছোট ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে সামান্য কিছু গ্রিটিংস কার্ড তুলেছি। বড়রা এখন এসব পছন্দ করছেন না।’’ কালীবাড়ি মোড় এলাকার দোকানদার প্রবোধ হোড় বললেন, ‘‘কারবারিরা দোকানে বার তিনেক ঘুরে গিয়েছেন গ্রিটিংস কার্ড রাখার অনুরোধ করে। কিন্তু ওদের ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ কার্ড-টার্ড এখন আর তেমন বিক্রি হয় না।’’ খয়রামারি এলাকার দোকানি দীপক সরকারও একই কথা জানালেন। তিনি ছোটদের জন্য মাত্র দেড় হাজার টাকার গ্রিটিংস কার্ড দোকানে তুলেছেন।

এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী ঋতুপর্ণা ঘোষ বা বিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী সুস্মিতা বসু বললেন, ‘‘ছোটবেলায় গ্রিটিংস কার্ড কিনেছি। কিন্তু ফেসবুক ও ওয়ার্ট অ্যাপ আসার পরে এখন বন্ধুদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা হোয়াটস অ্যাপ বা ফেসবুকের মাধ্যমে জানাই।’’

কিন্তু কেন? বনগাঁ, বারাসত, হাবরার অল্পবয়সী কয়েকজন ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দোকানে গিয়ে কার্ড কেনাটা নাকি ঝকমারির। প্রিয়তম মানুষটির কাছ থেকে পাওয়া সেই উপহার আবার বাড়িতে রাখতে হয় লুকিয়ে-চুরিয়ে। তুলনায় হোয়াটস অ্যাপ বা ফেসবুকে সেই ঝক্কি নেই। সময়ও বাঁচে। আর এত বন্ধুর ভিড়ে কাকে ছেড়ে কার জন্য কার্ড কিনব, হাসতে হাসতে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন বারাসতের কলেজ পড়ুয়া অনির্বাণ সোম।

তবে উল্টো ছবি কি নেই? বনগাঁর এক তরুণী জানালেন, তিন-চারটে দোকান ঘুরেও মনপসন্দ গ্রিটিংস কার্ড পাননি। বললেন, ‘‘সবই তো দেখছি ছোটদের জন্য ছোটা ভীম বা টম অ্যান্ড জেরি মার্কা কার্ড। পছন্দ হচ্ছে না। কলকাতায় যাওয়ার সময় নেই। ভাবছি, বয়ফ্রেন্ডকে হাতে এঁকে গ্রিটিংস কার্ড বানিয়ে পোস্ট অফিসে ফেলে আসব। সে জন্য দু’দিন বাড়তি সময় যাবে ঠিকই, কিন্তু আমার ধারণা, ওর এটাই পছন্দ হবে।’’

তবে এমন তথাকথিত ‘ওল্ড ফ্যাশনড’ পদ্ধতিতে শুভেচ্ছা জানানোর ইচ্ছে বা সময় ক’জনের আর আছে। বছরের প্রথম দিনটায় প্রেমিকার কাছ থেকে গোলাপি খামে ভরা গ্রিটিংস কার্ড বারান্দায় শীতের নরম দুপুরের রোদ পোহাবে, এমনই আশায় বসে থাকতেন বনগাঁর এক শিক্ষক। বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। চিঠিপত্র বা কার্ডের রোম্যান্টিসিজমের সাক্ষী তাঁর প্রজন্ম। কিন্তু জানালেন, এ বার শিক্ষিকা স্ত্রীকে হোয়াটস অ্যাপেই পাঠিয়েছেন নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা। সেই স্ত্রী, বছর দশেক আগে যিনি ছিলেন শিক্ষকমশাইয়ের প্রেমিকা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New Year greetings whatsapp message lifestyle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE