Advertisement
E-Paper

সহজ ব্যায়ামে কমুক কব্জির ব্যথা

কব্জির ব্যথা কেন হয়? তা সারবেই বা কী ভাবে? রইল উপায়

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৩

মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পেশি থাকে মুখমণ্ডলে, তার পরেই থাকে হাতে। অনেক সময়ে হাতের কব্জিতে তীব্র ব্যথা হয়। কব্জি বা রিস্টজয়েন্ট একটি জটিল সন্ধি, যা রেডিয়াস ও আলনা হাড়ের নিম্নাংশ এবং আটটি ছোট ছোট কারপাল হাড়ের সমন্বয়ে তৈরি। এই কারপাল হাড়গুলি দুই সারিতে সাজানো থাকে। লিগামেন্টের শক্ত ব্যান্ড কব্জির হাড়গুলিকে একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে রাখে। টেনডনগুলো হাড়ের সঙ্গে মাংসপেশিকে সংযুক্ত করে। ফলে কব্জির কোনও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেই ব্যথা অনুভব হয় যা হাতের কর্মক্ষমতার উপরে প্রভাব ফেলে। কব্জিতে ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়। হঠাৎ হাত মচকে বা হাড় ভেঙে গেলে ব্যথা হয়। এ ছাড়াও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যার কারণেও কব্জিতে ব্যথা হয়। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর মণ্ডলের মতে, “সাধারণত কব্জিতে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস কম হয়। কোনও ব্যক্তির কব্জিতে আগে আঘাত লেগে থাকলে পরে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস হতে পারে।” বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনও কাজ বারবার করলে যেমন বোলিং, গলফ, জিমন্যাস্টিক, টেনিস খেললে বা দীর্ঘক্ষণ কিবোর্ডে কাজ করলে কব্জির ব্যথা বাড়তে পারে।

সুবীর মণ্ডলের কথায়, “কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধে ব্যথা কমানো হলেও, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দোকান থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে খেলে তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। আর বাজারচলতি ওষুধে সবসময়ে কাজ না-ও হতে পারে। পাশাপাশি কব্জির ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে আঘাতের ধরন, স্থান ও তীব্রতার উপরে। সব ক্ষেত্রেই ব্যথার কারণ ও ব্যক্তির হাড়ের ঘনত্ব আগে নির্ণয় করতে হবে।” ঠান্ডা বা গরম সেঁক, ব্যথা কমানোর মলমও দেওয়া হয় রোগীকে।

উপশমের উপায়

ব্যথা কমলে প্রশিক্ষকের পরামর্শ মতো হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। এক হাতের কব্জিতে ব্যথা হলেও দু’হাতে ব্যায়াম করা ভাল। প্রশিক্ষক সৌমেন দাসের মতে, রোজকার জীবনে ১৫-২০ মিনিটের ব্যায়ামে যেমন কমবে কব্জির ব্যথা, তেমনই বাড়বে নমনীয়তা ও শক্তি।

চেয়ারে বসে ডান হাতটিকে নাক বরাবর সোজা লম্বা করে রাখুন। হাতের তালুকে রাখুন কোনও গাড়ি বা মানুষকে দাঁড়াতে বলার ভঙ্গিমায়। এ বার কব্জি থেকে হাতের তালুকে টেনে আনুন পিছনে কাঁধের দিকে। এই অবস্থায় ১৫ গুনুন। একই ভাবে হাতের তালুকে নীচের দিকে টেনে ধরে ১৫ গুনুন। দুই হাতে চার সেট করে করুন এই ব্যায়াম।

একই ভাবে হাত রেখে হাতের তালু রাখুন পাশ বরাবর। বুড়ো আঙুলকে রাখুন তর্জমার সঙ্গে নব্বই ডিগ্রিতে। এই ভাবে অন্তত ১৬ বার করুন উপর-নীচ। প্রতিদিন ৩ সেট এই ব্যায়াম করুন।

সোজা হাত রেখে হাতের পাতা রাখুন খোলা অর্থাৎ কোনও বস্তু চাওয়ার ভঙ্গিমায়। এবার উপর-নীচ করে ঘোরান কব্জি থেকে হাতের তালুকে। দুই হাতে ১৫ বার, মোট ২ সেট করুন এই ব্যায়াম।

এ বার পালা স্ট্রেচিংয়ের। হাত সোজা রেখে হাতের তালু রাখুন অপেক্ষার ভঙ্গিতে। অন্য হাত দিয়ে আঙুলগুলিকে টেনে ধরুন পিছনের দিকে। এ ভাবে ২০ সেকেন্ড রেখে হাতের তালুকে নিচু করে ২০ সেকেন্ড আঙুলগুলো ঠেলুন ভিতরের দিকে। দিনে দু’হাতে ৩-৪ সেট করুন। তবে প্রথমেই বেশি স্ট্রেচ করবেন না, ব্যথা বাড়তে পারে।

একই ভাবে হাত রেখে হাতের তালু রাখুন পাশ বরাবর। বুড়ো আঙুলকে ভাঁজ করে মধ্যমা ও অনামিকার মাঝে রাখুন। বাকি চারটে আঙুল মুড়ে মুঠো করে নিন হাত। এই অবস্থায় উপর-নীচ, ডান দিক-বাঁ দিক করুন হাতের মুঠো। দিনে ৩ বার করে অন্তত ২০ বার করুন।

এর পর কব্জির জোর বাড়ানোর ব্যায়াম। একটি টেবিলের কোণ বরাবর এমন ভাবে হাত রাখুন যাতে কনুই টেবিলের উপরে এবং কব্জি টেবিলের বাইরে ঝুলে থাকে। এই ব্যায়াম করতে প্রয়োজন ডাম্বেলস। চাইলে ২৫০ মিলিলিটারের জলের বোতলও (জল ভরা) ব্যবহার করতে পারেন। বোতল বা ডাম্বেল মুঠোয় ধরে হাত রাখুন এমন ভাবে, যাতে আঙুলগুলি থাকে ছাদের দিকে। কব্জি থেকে হাত ১৫ বার উপর-নীচ করুন। উলটে নিন হাত। মুঠো করা হাতের আঙুল রাখুন মাটির দিকে। এ বারও ১৫ বার করুন উপর-নীচ। দিনে অন্তত ৩ সেট করতে হবে এই ব্যায়াম।

 একটি হাতুড়ি নিন। তার হাতলের শেষপ্রান্ত মুঠো করে ধরে একবার ডান দিক ও বাঁ দিক করুন হাত। এই ব্যায়ামও দিনে ১০ বার করুন দু’সেট।

তবে ব্যথা থাকলে ব্যায়াম করবেন না। ব্যথা কমাতে বেশি ব্যায়াম করলে ব্যথা বাড়বে। প্রথম কিছু দিন ভারী কাজ বন্ধ রেখে কমাতে হবে ব্যথা। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় বাড়লে কব্জির জোর বাড়বে, যন্ত্রণাও কমবে। তবে সবই করতে হবে চিকিৎসক ও প্রশিক্ষকের পরামর্শে।

Health Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy